বিষয়: জনগণনা
ভারত ছাড়া খুব কম দেশই দশ বছর অন্তর জনগণনার গৌরবময় ইতিহাসের দাবি করতে পারে। বিশেষ করে, ভারতে জনগণনার ইতিহাস তো বহু পুরনো। প্রাচীনতম সাহিত্য, ‘ঋক বেদ’ জানাচ্ছে, ৮০০-৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে লোক গণনার একটা চল ছিল। খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকে কৌটিল্য যে ‘অর্থশাস্ত্র’ লিখেছিলেন, সেখানেও জনগণনার ওপর বেশ জোর দেওয়া হয়েছে। কর কাঠামো গড়ে তোলার জন্য রাষ্ট্র তখন লোকগণনা শুরু করে। নিশ্চয়ই জানো, ‘আইন ই-আকবরি’কে মুঘল সম্রাট আকবরের রাজত্বকালের প্রশাসনিক দলিল বলা হয়। এটি থেকেও জনসংখ্যা, শিল্প, সম্পদ এবং আরও নানান বিষয়ে প্রচুর তথ্য পাওয়া গেছে।
১৮৬৫, ১০ জানুয়ারি। বাড়ি বাড়ি গিয়ে গণনার কর্মসূচি নেওয়া হল উত্তর-পশ্চিম
ভারতের প্রদেশগুলিতে। ১৯৬৬ নভেম্বরে মধ্য ভারতের প্রদেশগুলিতে এবং ১৮৬৭ সালে
বেরারে জনগণনা শুরু হয়। অবধে জনগণনা চালু হয় ১৮৬৯ সালে। মাদ্রাজ, বোম্বাই এবং
কলকাতা এই তিনটি শহরে জনগণনা শুরু হয় যথাক্রমে ১৮৬৩, ১৮৬৪ এবং ১৮৬৬ সালে।
জানো কি
আধুনিক জনগণনার যে পদ্ধতি, সেটা শুরু হয়েছিল অনেক পরে, ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে, ইংল্যান্ডে। কিন্তু উপনিবেশগুলোর জনসংখ্যা তখনও জানা যায়নি। পরবর্তী কালে, ইংল্যান্ডের গণনা পদ্ধতির সাহায্য নিয়েই জেমস প্রিন্সেপের নেতৃত্বে ১৮২৪ সালে ইলাহাবাদ এবং ১৮২৭-২৮ সালে বেনারসে জনগণনা করা হয়। ১৯৩০ সালে হেনরি ওয়াল্টারের নেতৃত্বে ঢাকায় জনগণনা হয়। এটাই ছিল কোনও ভারতীয় শহরে প্রথম সম্পূর্ণ জনগণনা। এই গণনায় নারী-পুরুষের সংখ্যা, তাদের বয়সের একটা মোটামুটি আন্দাজ এবং বিভিন্ন বাড়ির অবস্থা কী রকম, অর্থাৎ, ক’টা ঘর, শৌচাগারের সংখ্যা ইত্যাদি সম্পর্কে প্রচুর তথ্যসংগ্রহ করা হয়েছিল।

১৮৬৬-৬৭ সাল। ভারতের বেশির ভাগ অঞ্চলেই শুরু হল মাথা গণনার কাজ। এটি ‘১৮৭২ সালের জনগণনা’ নামে পরিচিত। অবশ্য ব্রিটিশদের নিয়ন্ত্রণে থাকা সমস্ত অঞ্চলকে এর আওতায় আনা যায়নি। এই গণনায় প্রত্যেক বাড়িতে ১৭টি প্রশ্ন নিয়ে যাওয়া হত। নাম, বয়স, ধর্ম, জাতি বা শ্রেণি, দেশ, স্কুল-কলেজে পড়ছে কি না, লিখতে-পড়তে পারে কি না এই সব প্রশ্ন আলাদা আলাদা ভাবে জানতে চাওয়া হত । জীবিকার প্রশ্নটি অবশ্য শুধুমাত্র পুরুষদের জন্যই ছিল।

১৮৮১ সালে সেনসাস কমিশনার ডব্লিউ সি প্লওডেন জনগণনার এক কর্মসূচি নিয়েছিলেন। এটি ছিল আধুনিক জনগণনার পথে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তার পর থেকেই প্রতি দশ বছর অন্তর এক বার করে জনগণনা করা হয়।

১৮৮১ সালের জনগণনায় ১২টি প্রশ্নের একটি তালিকা তৈরি করা হয়। পুরনো প্রশ্ন-তালিকার সঙ্গে নতুনটির খানিকটা পার্থক্য ছিল। নতুনটিতে নারী-পুরুষ পরিচয়ের প্রশ্নটি যোগ করা হয়। কিছু প্রশ্ন নারী-পুরুষকে আলাদা ভাবে জিজ্ঞাসা করার প্রথাটিও তুলে দেওয়া হয়। যাঁরা শিক্ষিত নন, তাঁদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, তাঁরা লিখতে-পড়তে পারেন কি না। হিন্দুদের কাছে তাঁদের জাতি এবং অন্য ক্ষেত্রে সম্প্রদায় নিয়ে প্রশ্ন করা হতে থাকে।

১৯৪১ সালের জনগণনার পরই ১৯৪৭ সালে স্বাধীন হয় ভারত। যুদ্ধের পর দেশের স্বাস্থ্য-ব্যবস্থার উন্নতির জন্য একটা পরিকল্পনা তৈরি করতে ‘ভোরে কমিটি’ গঠন করা হয়। তাঁরা জনসংখ্যার দিকটি খতিয়ে দেখেন। পপুলেশন স্ট্যাটিসটিক্স-এর মান বাড়াতে তাঁরা প্রস্তাব দেন কেন্দ্রে এক জন ‘রেজিস্ট্রার জেনারেল অব ভাইটাল অ্যান্ড পপুলেশন স্ট্যাটিসটিক্স’ এবং প্রদেশগুলোতে এক জন তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ করার। কমিটি আরও জানায় যে, ‘সমস্যাটি কেন্দ্রের বিবেচনা করা উচিত’। ১৯৪৮ সালে জনগণনা আইনটি কার্যকর করা হয় (১৯৪৮ সালের ৩৭ নং ধারা)। স্বাধীনতার পরের জনগণনাগুলি এই আইন মোতাবেক পরিচালিত হয়।

২০১১ সালের জনগণনা প্রদেশগুলি সম্পর্কে যে তথ্য দিয়েছে, তা থেকে জানা যায় ২০টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ছয় বছরের নীচের শিশুর সংখ্যা দশ লক্ষেরও বেশি। আবার অন্য দিকে এই দেশেরই ৫টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে সংখ্যাটা এক লাখও ছোঁয়নি।

২০১১ সালের গণনা অনুযায়ী, ভারতের জনসংখ্যা গত এক দশকে বেড়েছে আঠারো কোটি দশ লক্ষের বেশি। এই দশকই প্রথম, যেখানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার আগের দশকগুলির তুলনায় বেশ কম (১৯১১-২১’এর পরিসংখ্যান বাদ দিলে)।
বলো তো
২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী ভারতের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য কোনটি?
১৯৬১ সালে উত্তর-পূর্বের কোন রাজ্যে প্রথম জনগণনা করা হয়?
ভারতের কোন নাগরিককে প্রথম গণনার আওতায় আনা হয়?
২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী ভারতের সবচেয়ে জনবিরল রাজ্য কোনটি?
২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে জনবহুল জেলা কোনটি?
উত্তর
১) উত্তরপ্রদেশ ২) অরুণাচল প্রদেশ ৩) ভারতের রাষ্ট্রপতি
৪) লক্ষদ্বীপ ৫) উত্তর চব্বিশ পরগনা
Previous Item Prostuti Next Item


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.