|
|
|
|
সহজাত প্রতিভার অভাবে ভুগছে ব্রাজিল |
সুব্রত ভট্টাচার্য |
ব্রাজিল ২ (জাডসন, ফ্রেড)
প্যারাগুয়ে ২ (সান্তা ক্রুজ, ভালদেজ) |
সহজাত প্রতিভা কখনও চিরস্থায়ী হয় না। রবিবার রাতে ব্রাজিলের খেলা দেখে বারবার এটা মনে হচ্ছিল। বিভিন্ন সময়ে ভাভা, গ্যারিঞ্চা, পেলে, টোস্টাও, রোমারিও, রোনাল্ডো, রোনাল্ডিনহো, কাকাদের মতো অসাধারণ প্রতিভাবান ফুটবলার ব্রাজিলে খেলেছে। কিন্তু তাদের পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে সেই প্রতিভা খুঁজে পেলাম না। নেইমার, পাতো, গান্সোরা সেই জায়গায় পৌঁছতে পারছে না।
যেমন হাঙ্গেরিতে পুসকাস, হিদেকুটি, ককসিসদের মতো ফুটবলার আর আসেনি। যেমন আর্জেন্তিনায় কেম্পেস, পাসারেলা, মারাদোনার বিকল্প পাওয়া যায়নি। ইংল্যান্ডেও আর দেখা যায়নি স্ট্যানলি ম্যাথুজ, ববি চার্লটনদের মতো ফুটবলার। নেইমারের তুলনা হচ্ছিল মেসির সঙ্গে। এখনও নেইমার মোটেই সেই তুলনা করার জায়গায় আসেনি। নেইমার বেশ কিছু মিস পাস করল। পায়ে বলও রাখতে পারছিল না। গান্সোকেও এখনই কাকা-র সঠিক বিকল্প বলতে পারছি না। তাই এ বারের কোপায় গত দু’বারের চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল এখনও জয়ের মুখ দেখল না। |
|
হতাশার দুই মুখ। কোপা আমেরিকায় প্যারাগুয়ের কাছে দ্বিতীয় গোল
খাওয়ার
পর। মাথা নিচু ব্রাজিলের পাতো আর নেইমারের। -এপি |
পুরো ম্যাচে প্রচুর মিস পাস। আমার তো কখনওই মনে হয়নি ব্রাজিল জিততে পারে। দু’-একটা ছুটকো-ছাটকা সুযোগ পেয়েছিল ঠিকই। তবে খুব ভাল খেলে সুযোগ তৈরি করার দক্ষতা দেখাতে পারেনি। মাঝমাঠে পজেশন হারিয়েছে বারবার। পেনাল্টি বক্সের সামনে পৌঁছেও ঠিকঠাক বল পাস করতে পারেনি। এই ব্রাজিল আগের ব্রাজিলের থেকে একেবারে আলাদা। ওদের ক্লাব ফুটবলের খেলাতেও দেখছি গ্যালারি ফাঁকা থাকছে। আগের মতো দৃষ্টি-নন্দন খেলা হয়তো আর হচ্ছে না। সে রকম দক্ষ ফুটবলার হয়তো উঠে আসছে না। |
|
ব্রাজিলের বিরুদ্ধে যখন প্যারাগুয়ে দুর্দান্ত খেলছে, তখন গ্যালারিতে দু’দলের সমর্থকরা।
রয়েছেন
বিশ্বকাপের সময় সোরগোল ফেলে দেওয়া প্যারাগুয়ের সেই বিখ্যাত মডেল লারিসা রিকেলমেও । -রয়টার্স, এএফপি |
যে সব দেশে প্রতিভার অভাব আছে, তারা সাধারণত গতি, শক্তি, শারীরিক সক্ষমতার উপর তাদের স্ট্র্যাটেজি ঠিক করে। কোনও নামী তারকা নেই প্যারাগুয়ে দলটাতে। কিন্তু বল কন্ট্রোলে ওরা টেক্কা দিল ব্রাজিলকে। মাঝমাঠে বারবার রামিরেস, গান্সোদের থেকে বল কেড়ে নিচ্ছিল ওরা। আর গতিতে ওরা অনেক এগিয়ে। মাঝেমাঝেই বাঁ দিক দিয়ে উঠে আসা এস্তিগারিবিয়াকে আটকাতে হিমশিম খাচ্ছিল থিয়াগো সিলভা, আন্দ্রে সান্তোসরা। ব্রাজিলে প্রতিভার যে অভাব আছে তা বোঝা যাচ্ছে লুসিওকেও এখনও খেলিয়ে যাওয়া দেখেই। প্যারাগুয়ের দুটো গোলই লুসিওদের ধীর গতির কারণে হল। প্রথমে সান্তাক্রুজ এবং দ্বিতীয় বার ভালদেজ দৌড়ে পিছনে ফেলে দিয়েছিল ওদের মার্কারদের। প্যারাগুয়ের মাঝমাঠে সুন্দর বল কন্ট্রোল দেখাল ভেরা, এস্তিগারিবিয়া, রিভেরোস। |
|
নানা রঙের কোপা |
আর রক্ষণে পাওলো দা সিলভা, আলকারাজ, ভেরনদের সামনে এসেই নেইমার, পাতোরা বলের দখল হারিয়ে ফেলছিল। জাডসন যে গোলটা করল সেটা দেখলে বোঝা যায় ওর টেকনিক খুব ভাল। এ রকম বেশ কিছু ফুটবলার ব্রাজিলের এই দলে আছে কিন্তু সহজাত প্রতিভা নেই। আর ফ্রেডের গোলের সময় প্যারাগুয়ের গোলকিপার ভিয়ার-এর পজিশনিং একটু ভুল ছিল।
যে খেলাটা আমি আশা করেছিলাম ব্রাজিলের ফুটবলাররা খেলবে--প্যারাগুয়েই বরং সেই দক্ষতা, বল কন্ট্রোল দেখাল। মানো মেনেজেসকেও স্ট্র্যাটেজি গত কোনও পরিবর্তন দ্বিতীয়ার্ধে করতে দেখলাম না। মাঝে মাঝে আলভেস দ্রুত গতিতে উপরে উঠলেও কাজের কাজ করতে পারেনি। এই রকম ফুটবল খেলে ব্রাজিল-আর্জেন্তিনা ফাইনালে উঠলে অবাকই হব। আর ওঠলে বুঝতে হবে লাতিন আমেরিকায় এখন প্রতিভার অভাব। |
|
|
|
|
|