|
|
|
|
টানাপোড়েনে দুই বিভাগের কাজেই বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কা |
পরিবেশ-জঞ্জাল বিতর্ক পুরসভায় |
কিশোর সাহা • শিলিগুড়ি |
শহরকে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ মুক্ত করে রাজ্যে যে নজির গড়েছে শিলিগুড়ি তার ধারাবাহিকতা কতটা বজায় থাকবে তা নিয়ে পুরসভাতেই শুরু হয়েছে জল্পনা। এত দিন পুরসভার পরিবেশ এবং জঞ্জাল বিভাগ একই মেয়র পারিষদের হাতে থাকলেও তা আগামী দিনে পৃথক দু’জনের হাতে চলে যেতে বসেছে। অথচ পরিবেশ বিভাগের নিজস্ব কোনও পরিকাঠামো নেই। জঞ্জাল সাফাই বিভাগের পরিকাঠামো কাজে লাগিয়েই পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণের কাজ হয় পুরসভায়। আগামীতে পরিবেশ দূষণ রোধের কাজ পুরসভা কোন পরিকাঠামো কাজে লাগিয়ে করবে তা নিয়ে বিতর্ক দানা বাঁধছে। শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত বিতর্ক ও জল্পনার অবকাশ নেই বলে জানিয়েছেন। মেয়র বলেন, “জোট হিসেবে বোর্ড চলবে। সব মেয়র পারিষদের সমন্বয়ে উন্নয়ন হবে। প্লাস্টিক শহরে ফিরতে দেওয়া হবে না।”
বস্তুত, বিতর্কের সূত্রপাত শনিবার। পুরভবনে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব ঘোষণা করেন, পরিবেশ বিভাগের দায়িত্ব যাচ্ছে ডেপুটি মেয়র রঞ্জন শীলশর্মার হাতে। আর জঞ্জাল বিভাগের দায়িত্ব পাওয়ার কথা মেয়র পারিষদ দুলাল দত্তের। তা জানাজানির পরে পুরসভার অফিসার-কর্মীদের একাংশ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। পুরকর্মীদের কয়েকজন জানান, পরিবেশ বিভাগের জন্য আলাদা কোনও অফিসার কিংবা কর্মী সে ভাবে নেই। জঞ্জাল সাফাই বিভাগের অধীনে রয়েছেন অফিসার-কর্মী স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে ১২০০ জন। তাঁদের এই কাজে লাগিয়ে কংগ্রেস পরিচালিত পুর-বোর্ড শিলিগুড়ি শহরকে ‘প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ মুক্ত ’ শহর করেছে। |
|
তাৎপর্যপূর্ণ হল, প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বর্জনে সাফল্য মেলায় শিলিগুড়ি পুরসভা রাজ্য পর্যায়ে পুরস্কৃতও হয়েছে। স্যানিটারি ইন্সপেক্টর, কনজারভেন্সি ইন্সপেক্টরদের নিয়ে টিম গড়ে সেই কাজ হয়েছে। যে হেতু একজন মেয়র পারিষদের অধীনে দুটি দফতর ছিল, স্বভাবতই সাফাই বিভাগের অফিসার-কর্মীরা পরিবেশ বিভাগের কাজ করা নিয়ে আপত্তি করেননি। এ বার দুজন মেয়র পারিষদ আলাদা হওয়ায় একই সময়ে ভিন্ন ধরনের কাজের দায়িত্ব অফিসার-কর্মীদের উপরে থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে টানাপোড়েনের জেরে দুই বিভাগের কাজেই বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। পুরসভার জঞ্জাল ও পরিবেশ বিভাগের প্রাক্তন মেয়র পারিষদ সুজয় ঘটক বলেছেন, “কী ভাবে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ মুক্ত হয়েছে শিলিগুড়ি তা সকলেই জানেন। ওই কাজ করতে গিয়ে আমার অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে। ওই দুটি বিভাগ আলাদা হয়েছে বলে শুনেছি। এটুকু বলতে পারি, আমার কাছে পরামর্শ চাইলে সাহায্য করব। কারণ, শিলিগুড়ি আমারও প্রিয় শহর।”
২০০৮ সালে বামেদের সমর্থনে কংগ্রেসের মেয়র ও চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হওয়ার পরে তৃণমূল পুরবোর্ড পরিচালনায় অংশ নেয়নি। বোর্ড গঠনের পাঁচ মাসের মাথায় পুরসভা প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ মুক্ত শিলিগুড়ি গড়তে অভিযানে নামে। সেই অভিযানে সামিল হন শহরবাসী। বিদ্বজ্জনেরা প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বর্জনের আহ্বান জানান। পুর মেয়র, ডেপুটি মেয়র সহ সব মেয়র পারিষদেরা সেই অভিযানে সামিল হন। ২০১০ সালের জুন মাসে বিশ্ব পরিবেশ দিবসে শিলিগুড়ি প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ মুক্ত শহর ঘোষিত হয়। কিন্তু, পুরবোর্ডে কংগ্রেস-তৃণমূলের ডামাডোলের সুযোগে শহর লাগোয়া কয়েকটি এলাকায় লুকিয়ে-চুরিয়ে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ চালু করতে একটি চক্র সক্রিয় হয়ে ওঠে। খবর পেয়ে অভিযান চালিয়ে প্লাস্টিক ব্যাগ বাজেয়াপ্ত করেন সাফাই বিভাগের অফিসার-কর্মীরা। এখন তেমন খবর পেলে কী হবে? সাফাই বিভাগের অফিসার-কর্মীদের একাংশ জানান, মেয়র পারিষদের অনুমতি ছাড়া তখন পরিবেশ বিভাগের কাজে যাওয়া সম্ভব হবে না। অন্য দিকে, পরিবেশ বিভাগের মেয়র পারিষদ প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বাজেয়াপ্ত করার অভিযানে কর্মীদের ছেড়ে দেবেন কি না সংশয় রয়েছে।
আজ, সোমবার কে কোন বিভাগের মেয়র পারিষদ হবেন তা আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করবেন মেয়র। তার পরেই সকলকে নিয়ে বসে উন্নয়নে গতি আনার জন্য যৌথ রূপরেখা তৈরি হওয়ার কথা। সম্ভাব্য ডেপুটি মেয়র রঞ্জনবাবু, মেয়র পারিষদ দুলালবাবু অবশ্য জানিয়ে দিয়েছেন, সকলের মতামত সাপেক্ষেই তাঁরা পুরসবার উন্নয়নের কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। ইতিমধ্যেই উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতমবাবু ও মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির বিধায়ক শঙ্কর মালাকার শিলিগুড়ি পুরসভার কাজকর্ম নিয়ে নিয়মিত খোঁজখবর রাখবেন বলে জানিয়েছেন। গৌতমবাবু তো জানিয়ে দিয়েছেন, শিলিগুড়ি লাগোয়া এলাকায় প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ তৈরি হয় যে সব কারখানায় তা বন্ধ করার ব্যবস্থা করবেন। প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ মুক্ত শহরের সুনাম বজায় রাখতে পুরসভা কী পদক্ষেপ করে, সেটাই দেখার। |
|
|
|
|
|