উৎকণ্ঠা নিয়ে পাড়ি দুর্ঘটনাস্থলে
শুকনো মুখে স্টেশনে দাঁড়িয়েছিলেন অভয় রায়। সাত দিনের ছুটিতে বোন কমলা কর্মকার বাপেরবাড়ি এসেছিলেন স্বামীকে নিয়ে। বর্ধমানের খোসবাগান পাড়ায়। কমলাদেবীর স্বামী মধুসূদনবাবু গ্যাস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া লিমিটেডের কর্মী। শনিবার রাতে কানপুর সংলগ্ন পাটায় বাড়ি ফেরার জন্য হাওড়া-কালকা মেলের এস-২ কামরায় ওঠেন তাঁরা দু’জন। রবিবার দুপুরে দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পর থেকেই উদ্বেগে অভয়বাবুরা। সন্ধ্যায় বর্ধমান স্টেশনে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, “ভগ্নীপতির সহকর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। তাঁদের থেকে যা খবর পেলাম, তা খুব একটা ভাল নয়। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওখানে পৌঁছতে চাই।”
উদ্বেগ নিয়ে বর্ধমান স্টেশনে অপেক্ষা করছিলেন অশোক পাল, ওমর আলি শেখ, সুবোধ সাহারাও। কেউ খোঁজ পেয়েছেন, পরিজন জখম হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। কারও কাছে আবার প্রিয়জনের কোনও খবর নেই। উৎকণ্ঠা নিয়ে প্রত্যেকেই অপেক্ষা করছিলেন বিশেষ ট্রেনটির জন্য, যেটি নিয়ে যাবে দুর্ঘটনাস্থলে। রেল সূত্রে জানা যায়, বর্ধমান স্টেশন থেকে শনিবার রাতে কালকা মেলে উঠেছিলেন মোট ৭১ জন। রবিবার দুপুরে কানপুরের কাছে ট্রেনটির দুর্ঘটনায় পড়ার খবর আসতেই তাঁদের প্রচুর আত্মীয়স্বজন স্টেশনে ভিড় করেন। স্টেশন ম্যানেজার অসীম অধিকারী জানান, অনেক আত্মীয়ই ঘটনাস্থলে যেতে ইচ্ছুক।
পূর্বস্থলীর বড় কাইবাটি থেকে সোনারুপোর কাজ করতে দিল্লি যাচ্ছিলেন প্রসেনজিৎ পাল। তাঁর কাকা অশোক পাল জানান, দুর্ঘটনার পরে ফোনে কথা হয়েছে ভাইপোর সঙ্গে। প্রসেনজিৎ জানিয়েছেন, জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন তিনি। ভাইপোকে দেখতে যাবেন বলে স্টেশনে অপেক্ষা করছিলেন অশোকবাবু। মুর্শিদাবাদের বড়ঞার আঁখিগ্রাম থেকে স্টেশনে এসেছিলেন সুবোধ সাহা। জানালেন, ছেলে অভিজিৎ সেনাবাহিনীর জওয়ান। গাজিয়াবাদে নেমে সেখান থেকে মিরাট গিয়ে কাজে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। দুর্ঘটনায় অভিজিতের জখমের খবর এসেছে বলে জানালেন সুবোধবাবু। তবে ছেলেকে নিজের চোখে না দেখা পর্যন্ত স্বস্তি নেই, জানালেন তিনি। অশোকবাবু বা সুবোধবাবুরা স্বজনের খবর পেলেও ভাইয়ের কোনও খোঁজ না পেয়ে স্টেশনে উদভ্রান্তের মতো ঘোরাঘুরি করছিলেন বর্ধমানের নতুনগ্রামের বাসিন্দা ওমর আলি শেখ। জানালেন, ভাই আবু তালেব শেখ ও গ্রামের অন্য দু’জন দিল্লি যাচ্ছিলেন রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করতে। এ দিন রাত পর্যন্ত তাঁদের কোনও খোঁজ মেলেনি। খবর মেলেনি মিলিটারি ট্রাক চালক, প্যামরা গ্রামের বাসিন্দা বিশ্বজিৎ মণ্ডলেরও।
আসানসোল স্টেশন থেকে ১৩৫ জন এবং দুর্গাপুর থেকে ৩৩ জন ওই ট্রেনে ওঠেন। রবিবার সন্ধ্যায় আসানসোল স্টেশনে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন পাণ্ডবেশ্বরের বাসিন্দা সরজু সাপেরা। তাঁর মেয়ে সহেনাজ সাপেরা ও ছেলে বড়ে মিঞা সাপেরা গত কাল ট্রেনে ওঠেন গাজিয়াবাদে দিদিমার বাড়ি যাওয়ার জন্য। দুর্ঘটনার খবর আসার পর থেকেই বাড়িতে কান্নাকাটি শুরু হয়ে যায়। ছেলে-মেয়ের খোঁজ পেতে ঘটনাস্থলে যাচ্ছেন সরজুবাবু। স্টেশনে দাঁড়িয়ে চোখের জল ফেলছিলেন আসানসোলে ওল্ড স্টেশন এলাকার বাসিন্দা লজ্জাবতীদেবীও। তাঁর বাড়িতে একটি অনুষ্ঠানে কানপুর থেকে এসেছিলেন জনা কুড়ি আত্মীয়। গত কালই তাঁরা কালকা মেলে চাপেন ফেরার জন্য। স্বামী ফাগুনি ধানোকে নিয়ে তাঁদের খোঁজে যাচ্ছেন লজ্জাবতীদেবী। ওয়েটিং লিস্টে নাম থাকায় বাবাকে ট্রেনে উঠতে বারণ করেছিলেন বলে জানালেন ভূপেশকুমার সিংহ। হিরাপুরের নরসিংহবাঁধ এলাকার বাসিন্দা দয়ানন্দ সিংহ অবশ্য ছেলের কথা শোনেননি। ভূপেশবাবু জানান, দুর্ঘটনার পরে এ দিন বিকেলে বাবার ফোন বাজলেও তা তিনি ধরেননি। তার পরে আর ফোনে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। উদ্বেগে ছিলেন আসানসোলের কুমারপুরের বাসিন্দা মহম্মদ রিজওয়ান। পরে জানতে পারেন সুস্থ আছেন ওই ট্রেনে থাকা তাঁর আত্মীয় মহম্মদ ইরফান। দুর্গাপুরের বাসিন্দা সঙ্গীতা পাল ও মালবিকা পাল কানপুর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন বলে খবর মিলছে।
আত্মীয়দের বিশেষ ট্রেনে ওঠার জন্য আবেদনপত্র জমা নিয়ে বিনা মূল্যে পাস দেওয়া হয়েছে আসানসোল, বর্ধমান ও দুর্গাপুর স্টেশনে। ওই তিন স্টেশনে খোলা হয়েছে হেল্পলাইন। একরাশ চিন্তা মাথায় নিয়েই বিশেষ ওই ট্রেনে চড়লেন পরিজনেরা।
বর্ধমানের হেল্পলাইন নম্বর ০৩৪২-২৫৬১৬০১
আসানসোলের ০৩৪১-২৩০৪৬১৪
দুর্গাপুরের ০৩৪৩-২৫৫৭২৫৩।
First Page Bardhaman Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.