|
|
|
|
|
যা না, বেহায়া দাগ যা না, অন্য কোথা যা না
ক্ষত থাকলেই বা ক্ষতি কী? ব্রণ,আঘাত, সব দাগই মিলিয়ে
দেবে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান। জানালেন ডা. সুব্রত মালাকার |
|
|
আমাদের অনেকের মুখে বিভিন্ন দাগ বা ক্ষত দেখা যায়। এই ক্ষত এতটাই বিশ্রী লাগে যে মনেও বড় ধরনের ক্ষতের সৃষ্টি হয়। যাঁর এই ধরনের ক্ষত মুখে আছে, তিনি দাগ লুকোতে ঘরের কোণে কোনও ক্রমে একটু জায়গা করে নেন। এ ছাড়া অনেকেই মিথ্যে গল্পের আশ্রয় নেন লোক সমক্ষে। কিন্তু আজ চিকিৎসা বিজ্ঞানের এতটাই উন্নতি হয়েছে যে মানুষকে কোনও মিথ্যের আশ্রয় নিতে হবে না। যে কোনও দাগের সহজ সমাধান বাতলাচ্ছেন বিখ্যাত চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সুব্রত মালাকার।
ক্ষত হওয়ার কী কী কারণ
১) ব্রণ
২) ট্রমা (মুখে কোনও কিছুর আঘাত যেমন কোনও দুর্ঘটনা)
৩) বহু আগে মুখে কোনও অস্ত্রোপচার করা হয়েছে
৪) কোনও ভাইরাল ইনফেকশন, যেমন পক্স।
ক্ষতগুলি বিভিন্ন রকম দেখতে
১) আইস পিক স্কার (ওপর থেকে ক্ষতটি ছোট লাগলেও ত্বকের তলায় গভীর থাকে)
২) গোলাকৃতি বা ডিম্বাকৃতি আকার
৩) উপত্যকার মতো দেখতে যাকে বলা হয় ভ্যালি স্কার
৪) ছোট ছোট গতের্র মতো দেখতে।
আইস পিক স্কার
আইস পিক স্কার-এর চিকিৎসায়
১) পাঞ্চ এক্সসিশন
২) পাঞ্চ ক্রাফ্ট
৩) ট্রাইক্লোরো অ্যাসেটিক অ্যাসিড পিলিং এই পদ্ধতিগুলি প্রয়োগ করা হয়।
পাঞ্চ এক্সসিশন
যে যন্ত্রের সাহায্যে এই চিকিৎসাটি করা হয়, সেই যন্ত্রটিকে ডট পেনের মতো দেখতে। এই যন্ত্রটি বিভিন্ন মাপের হয়, ক্ষতটি যত বড় সেই হিসেবে পাঞ্চ যন্ত্রটি ব্যবহার করা হয়। যন্ত্রটির দ্বারা ক্ষতটিকে তুলে ফেলা হয়। ক্ষতটি যদি এক ইঞ্চির কম হয়, তবে স্টিচ করা হয় না। কিন্তু তার থেকে বড় হলে স্টিচ করা হয়। এটি এক সপ্তাহপর তুলে দেওয়া হয়।
পাঞ্চ ক্রাফ্ট
এখানেও ক্ষতের মাপ দেখে পাঞ্চ যন্ত্রটি ব্যবহার করা হয়। ক্ষতটিকে যন্ত্রের সাহায্যে তুলে ফেলা হয় এবং কানের পিছন থেকে চামড়া নিয়ে ক্ষতস্থানে বসানো হয়। বসানোর পর দেখা হয় পার্শ্ববর্তী ত্বকের সঙ্গে একই সমতায় আছে কিনা। কানের পিছনের চামড়ার সঙ্গে মুখের ত্বকের রঙের কোনও পরিবর্তন হয় না। এই ক্ষেত্রে স্টিচ লাগে না। ড্রেসিং করা হয় এবং ড্রেসিংটিকে চার থেকে সাত দিন পর সরানো হয়।
ট্রাইক্লোরো অ্যাসেটিক অ্যাসিড পিলিং
একটি ছোট সুচে এই কেমিক্যালটি নিয়ে ক্ষতের মধ্যে প্রবেশ করানো হয়। এর পর নতুন কোলাজেন তৈরি হয় ত্বকের মধ্যে। এই পদ্ধতিটি চার থেকে ছয় সপ্তাহ অন্তর বেশ কয়েক বার প্রয়োগ করতে হয়। এখানে ড্রেসিং লাগে না।
গোলাকৃতি বা ডিম্বাকৃতি আকারের ক্ষত চিকেন পক্সের মতো দেখতে এই ক্ষতের চিকিৎসা করতে
১) পাঞ্চ এলিভেশন,
২) লেসার
৩) সাবসিশন,
৪) ডার্মাব্রেশন
পাঞ্চ এলিভেশন
ক্ষতের মাপ অনুযায়ী যন্ত্রটি নেওয়া হয়। এ বার টিস্যুর মধ্যে প্রবেশ করানো হয়। এতে ভেতরের ত্বকটি ওপরে চলে আসে এবং ওপরের ত্বকের সঙ্গে সমতা রেখে স্টিচ ও ড্রেসিং করা হয়। এক সপ্তাহ পর এটি সরানো হয়।
লেসার
লেসার চিকিৎসায় এপিডারমিস নতুন ভাবে তৈরি হয় এবং ভেতরের ত্বকের যে কোলাজেন থাকে, সেটি নতুন ভাবে সেজে ওঠে। লেসারের এক থেকে দু’সপ্তাহ পরক্ষতটি শুকিয়ে যায়।
সাবসিশন
ইঞ্জেকশনের আঠারো বা কুড়ি নম্বর সুচের দ্বারা চিকিৎসাটি করা হয়। ত্বকের নীচে চর্বির যে স্তর থাকে, সেখানে সুচটি প্রবেশ করানো হয়, ফলে ক্ষতটি অনেকটা ওপর দিকে উঠে আসে এবং নতুন কোলাজেন তৈরি হয়। এর পর স্টিচ বা ড্রেসিং কোনওটাই লাগে না।
ডার্মাব্রেশন
এই পদ্ধতির ব্যবহার আজকাল কমে গেছে। কারণ এটি ব্যয়সাধ্য ও সময়সাপেক্ষ।
ভ্যালি স্কার
এটিতে আমাদের টিস্যুর পরিমাণ কমে যায় এবং চর্বির স্তরটিও কমে যায়। সুতরাং ক্ষতস্থানে সমপরিমাণ টিস্যু বসাতে হবে। ওই স্থানটিতে ফিলার হিসেবে রোগীর নিজস্ব ফ্যাট বসাতে হবে। এটি সবচেয়ে বেশি দিন স্থায়ী হয়, অন্য কোনও প্রতিক্রিয়া হয় না এবং পুনরায় নতুন কোলাজেন তৈরি হয়।
কোলাজেন নামে এক ধরনের ফিলার পাওয়া যায়। কিন্তু এর প্রতিক্রিয়া খুব বেশি এবং ব্যয়সাপেক্ষ।
ছোট ছোট গর্তের মতো দেখতে যে স্কার
ছোট ছোট গর্ত ওপর থেকে দেখা যায়। দু’দিক থেকে টানলে মিলিয়ে যায়, যার জন্য একে বলা হয় স্ট্রেচেবল। এটির চিকিৎসা পদ্ধতি দু’ধরনের
১) কেমিক্যাল পিলিং,
২) লেসার।
কেমিক্যাল পিলিং
ট্রাইক্লোরো অ্যাসেটিক অ্যাসিড এমন একটি সলিউশনের সঙ্গে মেলানো হয়, যার কোনও পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হয় না। ক্ষতের গভীরতা অনুযায়ী এই কেমিক্যালটি ব্যবহার করা হয়। ভারতীয়দের ত্বকে পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হওয়া খুব স্বাভাবিক, সুতরাং এই কেমিক্যালটি সাবধানে ব্যবহার করতে হবে। দশ দিন পর পর চার বার করতে হবে। এর পর সানস্ক্রিন লাগানো বাধ্যতামূলক।
কী ভাবে করবেন এবং কী কী পদ্ধতি এক সঙ্গে প্রয়োগ করবেন, সেটি নির্ভর করবে এক জন ডাক্তারের দক্ষতার ওপর।
|
সাক্ষাৎকার: কস্তুরী মুখোপাধ্যায় ভারভাদা |
|
|
|
|
|