|
|
|
|
|
তিন্নির মা না কলেজছাত্রী?? এ হল শরীরচর্চার ভেল্কিবাজি
মাতৃত্ব পূর্ণতা দেয়, কিন্তু চেহারাতে হঠাৎই অনেকটা মেদও জমিয়ে দেয়। ছিপছিপে
গড়নটি ফিরে পাওয়ার উপায় আছে শরীরচর্চার কেতাবে। ধীরে-সুস্থে, চিকিৎসক ও
ট্রেনারের ছক মেনে তন্বী জীবনে ফিরুন। বলছেন ফিটনেস এক্সপার্ট বিশ্বজিৎ তপাদার |
|
|
আয়তনে বড়, শিথিল, টোনড নয় এমন পেট অথবা ধীরে ধীরে ওজন বেড়ে সারা শরীরটার আকৃতি বদলে যাওয়া, মা হওয়ার পর অনেকের কাছে একটা বিড়ম্বনা। ‘আমি দেখতে খুব খারাপ হয়ে গেছি বা আমার চেহারাটা খুব খারাপ হয়ে গেছে’ এই ভেবে সব সময় মনে মনে কষ্ট পাওয়াটা, এমনকী নিজেকে অসহায় ভেবে ‘পোস্টনেটাল ডিপ্রেশন’-এ ভুগতে থাকাটাও অস্বাভাবিক নয়।
স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য সচেতন নতুন মায়েরা ‘বডি শেপ’ ফিরে পেতে চাইলে অযথা তাড়াহুড়ো না করে একটি বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে শরীরচর্চা শুরু করুন। মা হওয়ার ঠিক কত দিন পর থেকে ‘অ্যাক্টিভ ফিজিকাল ওয়ার্ক আউট’ শুরু করা উচিত, এ সম্বন্ধে একটি নির্দিষ্ট ধারণা থাকা প্রয়োজন। সাধারণত ‘নর্মাল ডেলিভারি’তে ন্যূনতম তিন মাস এবং ‘সিজারিয়ান’-এর ক্ষেত্রে চার মাস পর থেকে চিকিৎসকরা শরীরচর্চার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। যে সব মায়েদের চিকিৎসার প্রয়োজনে গর্ভাবস্থার সময় দীর্ঘ দিন ‘বেড রেস্ট’-এ কাটাতে হয় অথবা যাঁরা ‘হাই রিস্ক প্রেগন্যান্সি’ কাটিয়ে উঠেছেন, তাঁদের বেলায় সময়টা আরও বেশি লাগতে পারে। অনেকেই আছেন সময় নষ্ট করতে চান না, দেরি করলে যদি শরীরে মেদ আরও বাড়ে এই আশঙ্কায় দুই-তিন সপ্তাহের পর থেকে শরীরচর্চা শুরু করে দিতে চান, তাঁদের বলব, ব্যায়াম করার মতো অবস্থায় শরীরকে আগে আসতে দিন, তার পর শুরু করুন। মা হওয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত বেশ কিছু শারীরিক সমস্যা, যেমন পেরিনিয়াল পেইন, জরায়ু থেকে উৎপত্তি হওয়া পেটে ব্যথা, হেমোরহেডস, সিজারিয়ান মায়েদের সেলাইয়ের চার পাশে ব্যথা, কোমরের যন্ত্রণা, ক্লান্তি ভাব এবং অনিদ্রাকে ঠিকঠাক আয়ত্তে না এনে হুটহাট করে ব্যায়াম শুরু করলে হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই, প্রত্যেক মা যেন নিজ নিজ চিকিৎসকের অনুমতি নিয়ে তবেই শরীরচর্চা শুরু করেন।
পার্সোনাল ট্রেনার নিয়ে ওয়ার্ক আউট করুন
নতুন মায়েদের শরীরচর্চার মাধ্যমে ‘বডি শেপ’-এ ফিরিয়ে নিয়ে আসতে পারদর্শী লোক চাই। এর জন্য এক জন ট্রেনার’কে তাঁর প্রতি ‘পার্সোনাল অ্যাটেনশন’ দিতে হবে। যে সব মায়েদের ‘ডায়াস্টেসিস রেক্টি’ (পেটের লম্বালম্বি মাংসপেশিতে ভিতর থেকে চিড় ধরে যাওয়া) নামক ‘অ্যাবনর্মাল অ্যাবডোমিনাল মাস্লস’-এর অবস্থা রয়েছে, তাঁদের পেটের ব্যায়ামগুলি অবশ্যই ‘পার্সোনাল ট্রেনার’কে বিশেষ যত্ন নিয়ে করাতে হবে। প্রথম দিকের সমস্ত ‘স্ট্যাটিক’ এবং ‘জেন্টল ডায়ানামিক ইনার রেঞ্জ এক্সারসাইজ’গুলি পার্সোনাল ট্রেনারের সাহায্য নিয়ে করুন। সিজারিয়ান মা এবং ‘হাই রিস্ক প্রেগন্যান্সি’ কাটিয়ে ওঠা মায়েদেরও পার্সোনাল ট্রেনারের সাহায্য নেওয়া বাঞ্ছনীয়।
শরীরচর্চা মায়েদের কী ভাবে উপকারে আসে?
বাইরে থেকে বেশ কিছু শারীরিক সমস্যা, যেমন অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি, সারা দেহের মাংসপেশির একটি ঢিলেঢালা ভাব, পেটের মাংসপেশির অতিরিক্ত শিথিলতা, কোমর ও শিরদাঁড়ার শক্তি কমে যাওয়া, পিঠের কুঁজো ভাব অথবা পা ও গোড়ালির ফোলা ভাবকে শরীরচর্চার মাধ্যমে সহজেই ঠিক করে নেওয়া যায়। তবে অল্পতে ধৈর্য হারালে চলবে না, ভাল ফল পেতে হলে শরীরচর্চা নিয়মিত চালিয়ে যেতে হবে।
কখন মা আবার নিজেকে ফিট ভাববেন?
শিশু জন্ম নেওয়ার পর থেকেই ধীরে ধীরে মায়ের শরীর আবার স্বাভাবিক হতে শুরু করে। তবে প্রথম কয়েক সপ্তাহের মধ্যে মায়েরা যে ধরনের স্বাভাবিকতা অর্জন করেন, তা এক কথায় একটা ‘নিউ নর্মালিটি’। এর সঙ্গে সাধারণ শারীরিক স্বাভাবিকতার কোনও তুলনা চলে না। তাই এক জন মা তখনই আবার নিজেকে ফিট ভাবতে পারেন, যখন তিনি আবার শরীরকে ঠিকঠাক বিশ্রাম দিতে পারবেন, ঠিক পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাসে ফিরবেন, সহবাসে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন এবং সর্বোপরি ‘ওয়ার্ক আউট’ করতে কোনও অসুবিধা বোধ
করবেন না।
মায়েদের চটজলদি ওজন কমানো!!!
শরীরচর্চাকে সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে আরাম করে তাড়াতাড়ি ওজন কমিয়ে ‘শেপ’-এ আসতে অনেকেই ‘হিট র্যাপ’ এবং ‘সেলো থামর্’-এর মতো পদ্ধতির সাহায্য নিতে চাইছেন, তাঁদের শুধু বলব, এগুলোর কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা আপনার শরীর বাস্তবিকই এ সবের জন্য তৈরি কি না, তা জানতে আপনার নিজস্ব চিকিৎসকের সাহায্য নিন। তাড়াতাড়ি ‘স্লিম’ হওয়ার জন্য সব খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিয়ে ‘ডায়েটিং’ শুরু করা নতুন মায়েদের ক্ষেত্রে এক ভয়ঙ্কর প্রবণতা। এই রকম বেশি দিন চললে অপুষ্টির সঙ্গে সঙ্গে ডিহাইড্রেশন, হরমোনাল ইমব্যালান্স, গলব্লাডার স্টোন, রেনাল প্রবলেম, অস্টিয়োপোরেসিস ও প্রেশারের সমস্যা শরীরে হুড়হুড় করে বাড়বে, তখন গ্ল্যামারও ফিরবে না, শরীরটাও শেষ হবে।
‘ইলাস্টিক করসেট’ কী কাজে আসে?
মা হওয়ার পরে পরেই পেটে একটা ৬ ইঞ্চি থেকে ৮ ইঞ্চি ইলাস্টিক বেল্ট পরে নিলেই সব সমস্যার সমাধান এ রকম ধারণা অনেকেরই আছে। আসলে, এই ধরনের ‘ইলাস্টিক করসেট’ চিকিৎসকরা মূলত বিশেষ কিছু অসুবিধা প্রতিরোধ করার জন্য দিয়ে থাকেন। যেমন, ‘ফুল টার্ম ডেলিভারি’ মায়েদের অথবা বেশি ওজন নিয়ে জন্মানো শিশুর মায়েদের পেটের মাংসপেশির দেওয়াল এবং অন্ত্র-এর মধ্যে অনেক সময় যে অতিরিক্ত শূন্যতা (গ্যাপ) তৈরি হয়, যার ফলস্বরূপ পেটে ভার-ভার ভাব বা ব্যথা অনুভব হতে পারে এবং তার থেকে যাতে পরবর্তী কালে অন্যান্য সমস্যা তৈরি না হয়, সে জন্যই মূলত ‘বেল্ট’ ব্যবহার করা হয়। পেটের মেদ কম করার সঙ্গে এই ধরনের ‘ইলাস্টিক বেল্ট’-এর কোনও সম্পর্ক নেই; তবে বসা, দাঁড়ানো বা হাঁটাচলার সময় মাধ্যাকর্ষণের টানে শিথিল পেটকে সামনে ও নীচের দিকে ঝুলে যাওয়া প্রতিরোধ করতে ‘বেল্ট’ কাজে আসে। তবে ব্যবহারের পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে ভুলবেন না।
শরীরচর্চা কী ভাবে শুরু করবেন?
সমতল জায়গায় নিয়মিত হাঁটা, হালকা ফ্রি-হ্যান্ড, প্রথম ধাপের পিলাটিস ওয়ার্ক আউট, পেটে অতিরিক্ত টান না পড়ে সে রকম কিছু যোগাসন দিয়ে শুরু করুন। পরে ফিটনেস লেভেল বাড়লে আস্তে আস্তে সম্পূর্ণ পিলাটিস, যোগ এবং কার্ডিয়োভাসকুলার সহ সব কিছুই করা যাবে। নতুন মায়েদের একগাদা ব্যায়ামের কোনও প্রয়োজন নেই, শুধু যেগুলি একান্তই জরুরি, তা দিয়ে শুরু করতে হবে। প্রথম প্রথম একটুতেই ক্লান্ত হয়ে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা থাকে, যা কিনা এড়িয়ে চলাই ভাল। প্রত্যেক মায়ের ‘ওয়ার্ক আউট ফর্ম্যাট’ তার নিজস্ব ‘বডি ফ্রেম’ এবং জীবনশৈলী অনুযায়ী তৈরি করতে হয় যা কিনা এক জন অভিজ্ঞ ট্রেনারের পক্ষেই করা সম্ভব। পুরোদমে ‘ফিটনেস প্রোগ্রাম’ শুরু করতে হলে প্রায় প্রত্যেক মায়ের প্রথমে কিছুদিন কতগুলি ‘কমন পোস্ট নেটাল এক্সারসাইজ’ অনুশীলন করে নেওয়া জরুরি, যেমন হেড লিফট, পেলভিক লিফট, লেগ স্লাইডিং, আইসোমেট্রিক পেলভিক ফ্লোর, রিদ্মিকাল গ্লুটিয়াল কনট্রাকশন, গ্রেডেড আইসোমেট্রিক অ্যাবডোমিনালিস, ব্রিজিং, পিলার ব্রিজ, লেগ লিফট, কার্ল আপ, কার্লডাউন, স্ক্যাপুলা রিট্রাকশন, ব্রিদিং এবং রিল্যাক্সারসাইজ।
প্রথম দিকে কোন ব্যায়ামগুলি এড়িয়ে চলবেন
ভারী ওজন তুলে ব্যায়াম, এরোবিক্স, দীর্ঘ ক্ষণের জগিং, স্কিপিং, বক্স জাম্পিং, অ্যাথলিটদের জন্য নির্ধারিত স্ট্রেচিং, দীর্ঘ ক্ষণ ধরে সাইক্লিং, অল্প সময়ের মধ্যে ক্রমাগত সিঁড়ি ওঠা-নামা (স্টেপস), দীর্ঘ সময় ধরে উপুর হয়ে শুরু ব্যায়াম এবং কষ্টকর যোগাসন ইত্যাদি।
যোগাযোগ: ৯৮৩৬০১৬২১৫ |
|
|
|
|
|