|
|
|
|
|
৪২ ঘেরের প্যান্ট |
‘হিপি,‘ডিস্কো’ যুগ পেরিয়ে গিয়েছে, তাই তো সে এখন ‘রেট্রো’র দলে। কিন্তু এক কালে
প্যান্ট মানেই লোকে বুঝত বেল-বটম্স। ফ্যাশন ফ্ল্যাশব্যাক। অনুরাগ রশিদ |
সেই পুরনো ছবির অ্যালবামগুলো আলমারি থেকে নামালে এক সঙ্গে কত যে ইমোশন বয়ে যায় মুখে। না? আমরা নিজেরা কত অন্য দেখতে ছিলাম, ব্যাকগ্রাউন্ডটাও কেমন একেবারে ভিন্ন ছিল আর বাঙালি বাড়ির প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেরাও কেমন ‘ফরেন’ দেখতে ছিল। একটা আলাদা সংসার যেন।
এখন ভাবতে অবাক লাগে, এই আমাদেরই বাবা-কাকা’রা তাঁদের কলেজকালে কেমন ফ্যাশনের হাওয়া বুঝে নিজেরা দুলতেন। আগের শতাব্দীর ষাট সত্তরের দশক মানেই লম্বা ঝুলো চুল, গোঁফ, সাইডবার্ন, টাইট ফুল-ছাপ জামা আর হাঁটু ছাড়িয়ে পা সাজিয়ে বেল-বটম প্যান্ট। সেকালের হিট ফ্যাশন, এখন প্রায় আর্কাইভ। দেখতে কী আজব বেল-বটম প্যান্ট, আমরা বলব, কিন্তু একটা গোটা প্রজন্ম যে ভাবে ওটির সঙ্গে বেড়ে উঠেছিল, সেটিকেই বা কী করে অবহেলা করা যায়? |
|
সেই আর্কাইভে উঁকি দিলে দেখা যাবে মার্কিন নেভি প্রথম ব্যবহার করেছিল এই ধরনের প্যান্ট। সাধারণত ব্রিটিশ রয়্যাল নেভি ফ্যাশনের জগতে দাঁও মারতে অভ্যস্ত ছিল, কিন্তু এ বেলায় তারা পেল দ্বিতীয় স্থান। মার্কিন নেভি’র দেখাদেখি তারাও পরতে লাগল বেল-বটম প্যান্ট। আসলে একটু ভেবে দেখুন, নাবিকদের বেল-বটম প্যান্ট পরার অনেক সুবিধেও ছিল। যখন তখন হাঁটুজলে নামতে হতে পারে তো। ফর্মাল প্যান্ট পরে থাকলে তাকে গোটাও রে, চটপট গোটানোও যাবে কি না কে জানে, মানে বেশ কিছু ঝক্কি। বেল-বটম প্যান্ট এখানেই টেক্কা দিয়ে বেরিয়ে চলে গেল অন্যদের। |
|
বেল-বটম এই সুবিধে করতে পারল কারণ কোমর থেকে অন্যান্য ট্রাউজার্স-এর মতো নামলেও, সে হাঁটুর নীচে থেকে হাত-পা ছড়িয়ে বিস্তার করত নিজেকে। অনেকটা বেলুনের মতো ফুলে থাকত। নীচের ঘেরটা একটা ঘন্টা বা বেল-এর মতো দেখতে, তাই নাম বেল-বটম।
যতই ওই সময় থেকে বেল-বটম চলতে শুরু করুক, তার আসল রমরমার বাজার কিন্তু ‘হিপি’দের যুগে। কড়া ডিসিপ্লিন হাওয়ায় ঘুরছে তখনও। কর্তৃত্ব চোখ রাঙিয়ে চলেছে হরদম, আর সেই ফাঁকেই কখন যেন বেপরোয়া হওয়ার লাইসেন্স উড়ে এল হাতে। যারা এই নিমন্ত্রণে সানন্দে হাত মেলাল, তাদের গায়ে ছাপ পড়ে গেল ‘কাউন্টারকালচার’-এর। তার পর একে একে কী হল, সেটা এখানে আলোচনার বিষয় নয়, কিন্তু এই ‘হিপি’রা খুব মন দিয়ে এই ‘কাউন্টারকালচার’-এর তকমাকে দেখতে লাগল।
|
চলতি কালচার বা সংস্কৃতি আমায় যা দিচ্ছে, আমি হাঁটব ঠিক তার উল্টো ফুট-এ, এমন স্লোগান তখন সর্বত্র। ‘হিপি’রা গাঁজা খেল এন্তার, রক মিউজিক-এর ডিসটর্টেড আওয়াজে উন্মত্ত হল বার বার, আর জামাকাপড়ও পরল সম্পূর্ণ আলাদা রকম। সেই সব রংচঙে পোশাকের মধ্যে বুক চিতিয়ে দেখা গেল এই বেল-বটম প্যান্ট। মনে রাখবেন প্লিজ, সেই সময়ের মূলস্রোত কিন্তু ফর্মাল স্যুটের সঙ্গে ট্রাউজার্স বা কিছু ক্ষেত্রে হয়তো ব্যাগি প্যান্ট। কিন্তু ‘হিপি’রা যে ভাবে বেল-বটম পরে যত্রতত্র ঘুরে বেড়াল, হইহই পড়ে গেল। সবাই বলল, এ কী, অমন বেঢপ প্যান্ট পরে কেউ ভদ্র জায়গায় যায়? কিন্তু কে কার কথা শোনে? বেল-বট্স তদ্দিনে ট্রেডমার্ক ফ্যাশন।
সেই ফ্যাশন আরও ঝলমলাল ‘ডিস্কো’ যুগের স্ট্রোব লাইটে। ‘স্যাটারডে নাইট ফিভার’-এর জন ট্র্যাভোল্টাকে ভোলা যায়? বা ‘হিপি’, ‘ডিস্কো’-র ছোঁয়া লাগা জিনাত, পারভিন, নীতু সিংহদের। ‘ডন’-এর অমিতাভকে দেখেও তো সেই সময়কার কত ছেলে ওই চুলের কাট, ওই ডিজাইনের জামা আর ওই বেল-বটম প্যান্ট পরেই কাটিয়েছে। আমার মামার বাড়ির পাড়ায় শুনেছি এক জন হবু অমিতাভকে সায়া নামে ডাকা হত। ৪২ ঘেরের প্যান্ট পরত বলে। সে কিন্তু তা-ও বেল-বট্স ছাড়েনি। |
|
|
|
|
|