|
|
|
|
এ বার মাল পৌঁছে যাবে রেশন দোকানেই |
নিজস্ব সংবাদদাতা • পুরুলিয়া |
জঙ্গলমহলের তিন জেলার গণবণ্টন ব্যবস্থাকে আরও স্বচ্ছ ও মসৃণ করার লক্ষ্যে এ বার প্রত্যন্ত গ্রামে ছড়িয়ে থাকা রেশন ডিলারদের দরজায় দরজায় খাদ্যশস্য পৌঁছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার। বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজ্য খাদ্য দফতর থেকে এই মর্মে লিখিত নির্দেশ এসেছে পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরে।
এত দিন এফসিআইয়ের গুদাম থেকে রেশন ডিস্ট্রিবিউটরেরা ব্লক সদরে নিজেদের গুদামে রেশন ডিলারদের বরাদ্দ খাদ্যশস্য নিয়ে যেতেন। পরে ডিস্ট্রিবিউটরদের কাছ থেকে রেশন ডিলারেরা নিজেদের এলাকায় নিয়ে যেতেন। এ বার থেকে ডিস্ট্রিবিউটররাই ডিলারদের দোকানে মাল পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন। তার জন্য পরিবহণ বাবদ তাঁদের যে অতিরিক্ত খরচ হবে, তা বহন করবে রাজ্য সরকার।
খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেছেন, “মানুষের কাছে যাতে সহজে রেশনপণ্য পৌঁছয়, সেই লক্ষ্যেই আপাতত জঙ্গলমহলে এই নতুন ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে।” সকলের জন্য খাদ্যই নতুন সরকারের নীতি জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “আমাদের লক্ষ্য, মানুষ যাতে খাদ্যশস্য পান। তাই রেশন দোকানের পাশাপাশি থানা, পুলিশ ফাঁড়ি, গ্রাম পঞ্চায়েত কার্যালয় এবং ব্লক অফিস থেকেও এ বার থেকে রেশন মিলবে। গরিব মানুষজন তাঁর প্রাপ্য খাদ্যশস্য যে কোনও জায়গা থেকে সংগ্রহ করে নিতে পারবেন। আমরা যত দ্রুত সম্ভব এ সব জায়গা থেকে রেশন সামগ্রী বিতরণের ব্যবস্থা করছি।”
বস্তুত এই মর্মে মঙ্গলবারই নির্দেশিকা জারি করেছে খাদ্য দফতর। জঙ্গলমহলের প্রতিটি মানুষের কাছে গণবণ্টন ব্যবস্থার সুফল পৌঁছে দিতে অতিরিক্ত রেশন দোকান খোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে যে-সব রেশন দোকানের আওতায় অনেকগুলি গ্রাম রয়েছে এবং দোকান থেকে গ্রামের দূরত্ব বেশি, সেখানেই নতুন দোকান খোলা হবে। তিন জেলার জঙ্গলমহলের মোট ২৩টি ব্লক এবং ঝাড়গ্রাম ব্লকের আংশিক এলাকায় এই ব্যবস্থা কার্যকর হবে। এমনকী প্রয়োজনে আগামী দিনে নির্বাচনের সময় যেখানে বুথ হয়েছিল, সেখানেও নতুন দোকান খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। খাদ্য দফতর সূত্রের খবর, নতুন দোকানের জন্য নতুন করে কাউকে লাইসেন্স দেওয়া হবে না। ডিলারের কাছ থেকেই রেশন-সামগ্রী নিয়ে বিডিও অফিসের কর্মী, পঞ্চায়েত কর্মী বা স্বেচ্ছাসেবকরা নতুন দোকান থেকে তা বিলির বন্দোবস্ত করবেন। গরিব মানুষের হয়রানি এড়াতেই এই প্রক্রিয়া চালু করা হচ্ছে বলে প্রশাসন জানিয়েছে। জঙ্গলমহলে প্রতিটি মানুষকে রেশন কার্ড দেওয়ার জন্যও তৎপরতা শুরু করেছে প্রশাসন। সেই কাজও অনেকটাই এগিয়েছে বলে খাদ্য দফতরের দাবি।
কিন্তু রেশন দোকানে সরাসরি মাল পৌঁছনোর সিদ্ধান্ত কেন?
ডিস্ট্রিবিউটরদের গুদামে মাল পৌঁছনো, রেশন ডিলারদের বরাদ্দ সংক্রান্ত নথিপত্র পরীক্ষা এবং সব শেষে সেখান থেকে ডিলারদের মাধ্যমে খাদ্যশস্য গ্রামে পৌঁছনোএ সব ঝামেলা মিটতে মিটতে এতটাই সময় লাগে যে, সপ্তাহে পাঁচ দিন রেশন দোকান খোলাও সম্ভব হয় না প্রত্যন্ত এলাকার বহু ডিলারের পক্ষে। খাদ্য দফতরের আধিকারিকেরা খোঁজ নিয়ে দেখেছেন, এই তিন জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় সপ্তাহে দেড়-দু’দিনের বেশি রেশন দোকান খোলা থাকে না। ওই সময়ের মধ্যে টাকা মেটাতে না পারলে গরিব মানুষ তাঁদের বরাদ্দের রেশন তুলতে পারেন না। একই সঙ্গে রয়েছে ব্লকের জন্য বরাদ্দ রেশনপণ্যের একাংশ খোলাবাজারে পাচারের অভিযোগ। খাদ্য দফতরের কাছে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ আছে যে, ডিস্ট্রিবিউটরের গুদাম থেকে প্রত্যন্ত এলাকায় রেশনের মাল পৌঁছনোর আগেই তার কিছু অংশ পাচার হয়ে যায়।
এই সব রুখতেই এই নয়া ব্যবস্থা বলে খাদ্য দফতরের কর্তাদের দাবি। পুরুলিয়া জেলা খাদ্য নিয়ামক সুনয়কুমার গোস্বামী বলেন, “নতুন ব্যবস্থার নাম ‘ডোর স্টেপ ডেলিভারি’। খাদ্য দফতরের নির্দেশিকায় দ্রুত এই ব্যবস্থা কার্যকর করে তুলতে বলা হয়েছে।” এর প্রেক্ষিতে এ দিনই জেলার রেশন ডিলার সংগঠনের প্রতিনিধি এবং ডিস্ট্রিবিউটরদের সঙ্গে বৈঠক করেন সুনয়বাবু। পরে তিনি জানান, আপাতত জেলার বান্দোয়ান, বরাবাজার, মানবাজার ১ ও ২, বাঘমুণ্ডি, আড়শা, হুড়া, পুঞ্চা, ঝালদা ১ ও ২, পুরুলিয়া ১ ও বলরামপুর ব্লক এবং ঝালদা পুরসভা এলাকায় আপাতত এই ব্যবস্থা চালু হবে।
এমআর ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন মাহাতো বলেন, “আমরা এই ব্যবস্থাকে স্বাগত জানাচ্ছি।” এমআর ডিস্ট্রিবিউটর অ্যাসোসিয়েশনের পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক দেবকুমার দাঁ বলেন, “সরকার গণবণ্টন ব্যবস্থায় আরও স্বচ্ছতা চাইছে। আমরা এর জন্য সব রকম সহযোগিতা করব।’’ জঙ্গলমহলের মানুষকে খাদ্য-নিরাপত্তা দিতেও নতুন নির্দেশিকা জারি করেছে রাজ্য সরকার। এই নির্দেশিকায় তফসিলভুক্তরা তো বটেই, সব সাধারণ গরিব মানুষই সুবিধা পাবেন। তাঁদের আয়ের ঊর্ধ্বসীমাও নির্দিষ্ট করেছে সরকার। তফসিলি সম্প্রদায়ভুক্ত পরিবারের বার্ষিক আয় যদি ৪২ হাজার টাকা পর্যন্ত হয় তা হলেই ২ টাকা কেজি দরে চাল দেবে সরকার। আর সাধারণ গরিব পরিবারের আয় যদি বছরে ৩৬ হাজার টাকা হয়, তারাও পাবে এই সুবিধা। ৩৫ কেজি পর্যন্ত খাদ্যশস্য ২ টাকা কেজি দরে দেওয়া হবে তাদের। |
|
|
 |
|
|