|
|
|
|
পালাবদলের সাঁকরাইলে পঞ্চায়েতের কাজে জট |
সিপিএম সদস্যদের পদত্যাগের হিড়িক |
কিংশুক গুপ্ত • ঝাড়গ্রাম |
রাজ্যে পালাবদলের পরে পশ্চিম মেদিনীপুরের এক সময়ের ‘লালদুর্গ’ সাঁকরাইল ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েতগুলির ক্ষমতাসীন সিপিএম সদস্যদের ইস্তফার যেন হিড়িক পড়ে গিয়েছে। অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে উন্নয়নের কাজে। দৈনন্দিন আরও নানা কাজ উঠেছে শিকেয়।
গত ১৫ জুন পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী অপর্ণা মিশ্র, সমিতির দুই সদস্য শ্যামলী বেরা ও প্রদীপ পাল ঝাড়গ্রামের মহকুমাশাসকের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছিলেন। ‘ব্যক্তিগত কারণে’ই ইস্তফা বলে তাঁরা জানিয়েছিলেন। যদিও তৃণমূলের চাপ ও হুমকির জেরেই পদত্যাগ বলে বাম-শিবিরের অভিযোগ। এর পরেও গত ২৩ ও ২৬ জুন পঞ্চায়েত সমিতির আরও তিন সিপিএম সদস্য সুরেন হেমব্রম, ওসোয়ালি সিংহ ও জিতেন চন্দও একই কারণ দেখিয়ে মহকুমাশাসকের কাছে ইস্তফাপত্র পাঠিয়েছেন। সভানেত্রী অপর্ণাদেবী-সহ সিপিএমের ৬ সদস্যের ইস্তফাপত্রই প্রশাসনিক ভাবে গৃহীত হয়েছে বলেও জানিয়েছেন মহকুমাশাসক সি মুরুগান। তবে কয়েক দিন আগে পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা-কর্মাধ্যক্ষ বিমান মাইতি ফের ইস্তফাপত্র পাঠালেও এখনও তা গৃহীত হয়নি। পদত্যাগ গৃহীত হয়েছে যে আসনগুলিতে, সেখানে উপনির্বাচনের ব্যাপারে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের মাধ্যমে রাজ্য নির্বাচন দফতর সিদ্ধান্ত নেবে। প্রসঙ্গত, সাঁকরাইল পঞ্চায়েত সমিতির মোট ২১ সদস্যের মধ্যে ২০ জনই সিপিএমের। বিরোধী তৃণমূলের সদস্য মাত্র এক জন। আপাত ভাবে ৬ সদস্যের ইস্তফা গৃহীত হলেও পঞ্চায়েত সমিতিতে সিপিএমের সংখ্যালঘু হয়ে পড়ার সম্ভাবনা কম। কিন্তু যে ভাবে গণ-ইস্তফা চলছে, তাতে আরও অনেক সদস্য সরে দাঁড়ালে এবং উপনির্বাচন হলে ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে’ পঞ্চায়েত সমিতির হাতবদলও অসম্ভব নয়।
এরই মধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুরের গোপীবল্লভপুর-২ পঞ্চায়েত সমিতির সিপিএম সভাপতি সুনীলবরণ দাস ও পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য শরৎকুমার সিংহও কয়েক দিন আগে মহকুমাশাসকের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। আবার সাঁকরাইল ব্লকেরই ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে গত তিন সপ্তাহে ৭টি পঞ্চায়েতের ১৭ জন সিপিএম সদস্যও (ধানঘোরির প্রধান-সহ ২ জন, রগড়ার ২ জন, রোহিনীর ৪ জন, আঁধারির ২ জন, কুলটিকরির ৪ জন, লাউদহের ২ জন, সাঁকরাইলের ১ জন) বিডিওর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। তাঁদের ইস্তফাও প্রশাসনিক ভাবে কার্যকর করার প্রক্রিয়া চলছে। বিডিও মণীষ দাশ বলেন, “পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েতের একাধিক সদস্য ইস্তফা দেওয়ায় এবং বাকিরা নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়ায় উন্নয়ন-কাজ শিকেয় উঠেছে। কোনও পরিকল্পনা-বৈঠক করা যাচ্ছে না। টাকা পড়ে আছে, অথচ কাজ হচ্ছে না।” বস্তুত বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই সাঁকরাইল ব্লকে রাজনৈতিক সমীকরণ বদলাতে শুরু করে। গত ২২ মে সাঁকরাইলের কুলটিকরিতে প্রহৃত হন সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য, এলাকার দাপুটে নেতা বাদল রানা। বর্তমানে বাদলবাবু এলাকা ছাড়া হয়ে জেলা সদর মেদিনীপুর শহরে বাস করছেন। এমনই অবস্থা যে সিপিএমের সাঁকরাইল জোনাল কমিটির সম্পাদক সত্যেন বেরা বলছেন, “পঞ্চায়েত সমিতি বা গ্রাম পঞ্চায়েতের দলীয় সদস্যদের পদত্যাগের বিষয়ে আমাকে কেউ কিছু জানাননি!” তৃণমূলের সাঁকরাইল ব্লক সভাপতি সোমনাথ মহাপাত্রের দাবি, “বাদলবাবুদের একচ্ছত্র দাপটে পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েতগুলির কাজকর্মে কেবলমাত্র সিপিএমের দলতন্ত্র কায়েম ছিল। উন্নয়নের নামে সীমাহীন দুর্নীতি করেছে ওরা। এখন সব প্রকাশ্যে এসে পড়ায় দায় এড়াতে সিপিএম সদস্যরা ইস্তফা দিচ্ছেন।”
|
|
|
|
|
|