|
|
|
|
ভাজ্জিকে বরাবর ভুলই বুঝল ক্রিকেট-দুনিয়া |
দীপ দাশগুপ্ত |
সকালেই কাগজ দেখে প্রথম জেনেছিলাম, চারশো উইকেটের কথা। সঙ্গে সঙ্গে ওর মোবাইলে এসএমএস করলাম। তখন ওয়েস্ট ইন্ডিজে রাতই হবে। আমাদের সময় বিকেল পাঁচটা, মানে ওদের ওখানে সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ ওর কাছ থেকে উত্তর চলে এল। ধরেই নিচ্ছি, দেশ থেকে অসংখ্য বার্তা গিয়েছে ওর কাছে। তার মধ্যে পুরনো টিমমেটকে মনে রেখে ঠিক উত্তর দিয়েছে। এই হচ্ছে আমাদের ভাজ্জি। কাউকে একবার ‘ইয়ার’ বা ‘দোস্ত’ মনে করলে তার জন্য সব করতে পারে।
এখনও যখন নিজের ক্রিকেট কেরিয়ারের দিকে পিছন ফিরে তাকাই, টিম ইন্ডিয়ার ড্রেসিংরুমের কথা মনে পড়লেই ভাজ্জিকে ভীষণ ভাবে মিস করি। লোকে বলে না, পুরো টিমের মধ্যে আগ্রাসনটা, পাল্টা দেওয়ার ব্যাপারটা আমাদের দাদি মানে সৌরভ এনেছে। ঠিকই, কিন্তু একই সঙ্গে এটাও মনে রাখতে হবে কাজটা করতে গিয়ে দাদি সঙ্গে পেয়েছিল ভাজ্জির মতো ক্রিকেটারদের। যারা স্রেফ মুখে বড় বড় কথা বলে না, মাঠে গিয়ে সেই কাজটা করে দেখায়। যখন খেলতাম, তখন জানতাম, কোনও সমস্যায় পড়লে ভোর চারটেতেও ও ফোন ধরবে, কথা বলবে।
চারশো উইকেটের কথা সবাই জানে, এ-ও জানে ও কত বড় ম্যাচ উইনার। ২০০১ এর সেই অস্ট্রেলিয়া সিরিজে ও একাই তো তিন টেস্টে ৩২টা উইকেট তুলেছিল। পরেও বহু ম্যাচ জিতিয়েছে, আরও জেতাবে। আমি এই লেখায় সেসবে যাচ্ছি না। আমি বরং বলতে চাই মানুষ ভাজ্জির কথা। বলতে চাই, এই মুহূর্তে ও বিশ্বের সবচেয়ে ‘মিসআন্ডারস্টুড’ ক্রিকেটার। মানে যাকে দুনিয়া বরাবর ভুল বুঝে এল। প্রথম আমি ওকে দেখেছিলাম, টিভিতে, বছর চোদ্দো। আগে। টিঙটিঙে রোগা একটা ছেলে বল করছে, মাথায় কালো ফাটকা। তার পরে ওকে দেখলাম বেঙ্গালুরুর এনসিএ-তে। সেটাই ছিল অ্যাকাডেমির প্রথম ব্যাচ। শৃঙ্খলা ভাঙার কারণে যে তিন জন ক্রিকেটারকে সেবার বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তার মধ্যে একজন ছিল আমাদের ভাজ্জি। কারণ? ও কাঁটা চামচ দিয়ে খাওয়া বা পোশাক নিয়ে আচরণবিধিগুলো মানতে চায়নি। বাকি দু’জন হারিয়ে গিয়েছে আর ভাজ্জি কোথায়, সেটা আমরা দেখছি। ওই সময়টায় আবার ওর বাবা মারা গিয়েছিলেন, গোটা পরিবার ছিল বিপর্যস্ত। |
|
দাদি ক্যাপ্টেন, ওই সময়ের অস্ট্রেলিয়া সফরে একটা গল্প না লিখে পারছি না। আমাদের একটা ছোট দল ছিল। খেলার পরে এক সঙ্গে আড্ডা মারতাম, খেতে যেতাম আর কী। ভাজ্জির তখন স্পিনিং ফিঙ্গারে চোট, অপারেশন করাতে হবে। ডিনারে একদিন ভেঙে পড়েছিল। আমরা জেনেছিলাম, ডাক্তার বলেছেন, স্পিনিং ফিঙ্গারে চোট বলেই অস্ত্রোপচারে এক চুল এদিক-ওদিক হলে ওর ক্রিকেট কেরিয়ারই শেষ হয়ে যাবে। একটা ২২-২৩ বছরের ছেলেকে যদি এইরকম একটা কিছু শুনে অপারেশন টেবলে যেতে হয়, মনের মধ্যে কী হতে পারে, আন্দাজ করতে পারছি। তখন দেখেছি, কী মারাত্মক মনের জোর ছেলেটার। রিহ্যাবে দিনের পর দিন লড়ে গিয়েছে।
ভাজ্জির সমস্যাটা হল, ও কোনওদিন ‘পলিটিক্যালি কারেক্ট’ হতে পারল না। সে জন্যই এত বিতর্ক। ১৪ বছর আগে যেমন মুখে যা আসে, তাই বলে দিত, এতদিন পরেও তাই। সেই সারল্যটা রয়ে গিয়েছে। সে জন্যই ওকে নিয়ে এত বিতর্ক। কিন্তু যে একবার ওর সঙ্গে এক টিমে খেলেছে, সে ওকে ভাল না বেসে থাকতে পারেনি। প্রবল চাপেও ড্রেসিংরুম মাতাবে, হোটেলে যতরকম ছেলেমানুষি করবে, কিন্তু মাঠে নামলে সর্দার সত্যিই সর্দার। তখন ওকে ভয় পেতেই হবে। কত উইকেটে শেষ করবে ভাজ্জি? ৫৫০? ৬০০? ৭০০? কোনও কিছুই অসম্ভব নয়। বয়স মাত্র ৩১, এই বয়সেই তো স্পিনাররা পরিণত হয়। আরও ভাল দিক হল, রবিচন্দ্রন অশ্বিন এসে গিয়েছে বলেই ভাজ্জি নিজকে আরও ধারালো করবে। নিজেকে ফিটনেসের তুঙ্গে রাখবে। আর কে ভুলবে, গত বছরই পরপর দুটো টেস্ট সেঞ্চুরির কথা? অসংখ্য উইকেট তো বটেই, কেরিয়ারের শেষে ওকে নামী অলরাউন্ডার হিসেবে দেখলেও আমি অন্তত অবাক হব না। |
|
|
|
|
|