|
|
|
|
হাওড়ার দু’টি ব্লকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প বিশ বাঁও জলে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • উদয়নারায়ণপুর |
টাকা কে দেবে, তা নিয়ে হাওড়া জেলা পরিষদ এবং সেচ দফতরের মধ্যে শুরু হয়েছে চাপান-উতোর। আর তার জেরে উদয়নারায়ণপুর এবং আমতা-২ ব্লকে প্রস্তাবিত বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পটি তলিয়ে গিয়েছে বিশ বাঁও জলে।
প্রকল্পটি সাড়ে ৮ কোটি টাকার। বছর দুয়েক আগে তৈরি করে সেচ দফতর। ওই দফতরের কর্তাদের দাবি, টাকা জেলা পরিষদের দেওয়ার কথা। জেলা পরিষদের কর্তারা জানিয়েছেন, অত টাকা তাঁদের কাছে নেই। প্রকল্পের টাকা সেচ দফতরকেই জোগাড় করতে হবে।
দু’টি ব্লকই বন্যাপ্রবণ। দু’টি ব্লকেরই বেশির ভাগ এলাকা দামোদরের পশ্চিম পাড়ে। ডিভিসি দামোদরের পশ্চিম পাড়কে ‘স্পিল’ এলাকা হিসাবে ঘোষণা করেছে। অর্থাৎ, ওই পাড়ে কোনও নদীবাঁধ থাকবে না। দামোদরের পূর্ব দিকের নদীবাঁধ অবশ্য বেশ শক্তপোক্ত। তা সেচ দফতর নিয়মিত সংস্কার করে। ‘স্পিল’ এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় ডিভিসি জল ছাড়লেই দু’টি ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। বহু ঘরবাড়ি ডুবে যায়। ফসল নষ্ট হয়। ২০০৭ সালের বন্যায় দু’টি ব্লকের মানুষ কার্যত সর্বস্বান্ত হন। দামোদরের পশ্চিম পাড়ে অন্তত ৪৫টি জায়গায় বড়সড় ভাঙন হয়। সেচ দফতরের কাছ থেকে প্রযুক্তিগত সহায়তা নিয়ে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকায় ১৬টি জায়গায় জেলা পরিষদ দামোদরের পাড়ের ভাঙন মেরামত করে। বাকি জায়গার ভাঙন মেরামতির জন্য ২০০৯ সালের গোড়ায় সাড়ে ৮ কোটি টাকার প্রকল্প তৈরি করে সেচ দফতর। গোলমাল বেঁধেছে ওই প্রকল্পটিকে কেন্দ্র করেই।
বর্ষার মরসুম শুরু হয়ে গিয়েছে। ডিভিসির-র ছাড়া জলে সম্প্রতি উদয়নারায়ণপুরের কয়েকটি এলাকা প্লাবিতও হয়। গত বৃহস্পতিবার সেখানকার টোকাপুর এবং বড়দায় দামোদরের পাড় মেরামতির জন্য জেলা পরিষদ ১৩ লক্ষ টাকা সেচ দফতরকে দেয়। এই টাকা অবশ্য ওই প্রকল্পের নয়। কিন্তু এই টাকায় কী ভাবে বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, তা নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছে। সেচ দফতরের দাবি, জেলা পরিষদের অনুরোধ এবং টাকা বরাদ্দের আশ্বাসেই ৮ কোটি টাকার প্রকল্পটি তৈরি করা হয়। কিন্তু এখন জেলা পরিষদ হাত গুটিয়ে নিতে চাইছে।
সেচ দফতরের হাওড়া ডিভিশনের নির্বাহী বাস্তুকার রবীন মুখোপাধ্যায় বলেন, “জেলা পরিষদকে জানিয়ে দিয়েছি, স্পিল এলাকায় ভাঙন রোধে সেচ দফতর কোনও খরচ করবে না। জেলা পরিষদ টাকা দিলে প্রকল্পটি হবে। প্রকল্পটি এমন ভাবে করা হয়েছে, যাতে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পেও জেলা পরিষদ এই টাকা খরচ করতে পারে।”
টাকা দেওয়ার আশ্বাসের কথা অস্বীকার করেছেন জেলা সভাধিপতি মীনা ঘোষ মুখোপাধ্যায় এবং জেলা পরিষদের পূর্ত কমার্ধ্যক্ষ আনন্দ চট্টোপাধ্যায়। আনন্দবাবু বলেন, “আমরা এত টাকা কোথায় পাব? ওই টাকা সেচ দফতরেরই দেওয়ার কথা।” মীনাদেবী বলেন, “ইদানীং একটা প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে, নদীবাঁধ মেরামত সংক্রান্ত যে কোনও প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি করেই সেচ দফতর জেলা পরিষদের কাছে টাকা চাইছে। এত টাকা খরচ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।” সম্প্রতি জেলাশাসকের দফতরে জেলার বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে বিধায়কদের উপস্থিতিতে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়। আমতার কংগ্রেস বিধায়ক অসিত মিত্র বলেন, “ বৈঠকে ওই প্রকল্পটির কথা তুলেছিলাম। কিন্তু জেলা পরিষদ আর সেচ দফতর তরজা শুরু করে দিল।” উদয়নারায়ণপুরের তৃণমূল বিধায়ক সমীর পাঁজার আক্ষেপ, “সাড়ে ৮ কোটি টাকার প্রকল্প যে কবে বাস্তবায়িত হবে কে জানে! দেড় বছর ধরে কোনও কাজই হল না।” |
|
|
|
|
|