|
|
|
|
ধন্দে অসম পুলিশ |
লখিমপুরে নিহত রাঁচির বাঙালি যুবক অরিজিৎ |
নিজস্ব প্রতিবেদন • রাঁচি ও গুয়াহাটি |
অসমের লখিমপুরে কর্মরত বাঙালি যুবক অরিজিৎ ঘোষের মৃত্যু নিয়ে রহস্য দানা বেঁধেছে। কারা কী কারণে ২৭ বছরের ওই তরুণকে শক্ত ও ভোঁতা অস্ত্র দিয়ে মাথায় আঘাত করে খুন করল, তা নিয়ে এখনও ধন্দে পুলিশ। গত ৫ জুলাই, মঙ্গলবার রাতে এই খুনের ঘটনা ঘটে। লখিমপুর থেকে গুয়াহাটিতে নিয়ে এসে মৃত ওই যুবকের দেহ বিমানে কলকাতায় নিয়ে এসে তারপর সড়কপথে সেই দেহ রাঁচিতে অরিজিতের বাড়িতে নিয়ে যেতে চান তাঁর পরিজনরা। কিন্তু গুয়াহাটি থেকে কলকাতাগামী বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটির দরুন ওই দেহ আনতে দেরি হয়েছে। আজ দিনভর দমদম বিমানবন্দরে ছেলের দেহের অপেক্ষায় নাকাল হয়েছেন অরিজিতের প্রৌঢ় পিতা অজয় ঘোষ।
পুলিশ জানায়, উত্তর অসমের লখিমপুরের জেলা সদরে বিজয়নগর এলাকায় থাকতেন ২৭ বছরের ওই তরুণ। ই-গভর্ন্যান্সের মাধ্যমে গ্রামীণ স্বশক্তিকরণের প্রকল্প রূপায়ণের কাজে জড়িত একটি সংস্থার চাকরিতে মাসখানেক আগে যোগ দিয়েছিলেন রাঁচির ছেলে অরিজিৎ ওরফে চিকু। দেরাদুন থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে ভুবনেশ্বর থেকে গ্রামীণ ম্যানেজমেন্টের ডিগ্রি পেয়েছিলেন অরিজিৎ। লখিমপুরে জীবনের প্রথম চাকরিতে গ্রামে গ্রামে কম্পিউটারের প্রসার ও গ্রামবাসীদের স্বনির্ভর করে তোলার কাজে একটি সর্বভারতীয় সংস্থার স্থানীয় ‘টিমলিডার’ হয়ে যোগ দিয়েছিলেন ওই যুবক।
অসমে সংস্থার মুখ্য আধিকারিক সাহিদুল ইসলামের কথায়, “নতুন চাকরিতে খুবই আগ্রহের সঙ্গে কাজ করছিলেন অরিজিৎ। গত শনিবার গুয়াহাটিতে আমার সঙ্গে মিটিংয়েও বসেছিলেন। নতুন কাজের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে রীতিমতো উৎসাহে ফুটছিলেন ওই তরুণ। কারা হঠাৎ তাঁকে এমন নৃশংস ভাবে মারল, তা মাথায় ঢুকছে না।” লখিমপুর জেলা সদরের বিজয়নগরে বাড়ি ভাড়া করে অরুণোদয় কেন্দ্র খুলেছিল ওই সংস্থা। তারই একটি অংশে থাকতেন অরিজিৎ। সাহিদুল সাহেবের কথায়, “৬ জুলাই সকাল থেকে ছেলেটিকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছিল না। আমরা ভেবেছিলাম কোনও প্রত্যন্ত গ্রামে কাজে গিয়েছিল বলে মোবাইলের সংযোগ মিলছে না। সন্ধ্যায় ওর ঘরে এক কর্মীকে খোঁজ নিতে পাঠাই। তখনই দেখা যায় এই অবস্থা।” স্থানীয় থানার ওসি ডিম্বেশ্বর রায় অবশ্য অরিজিতের কোনও সহকর্মী এই খুনে জড়িত নয় বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘আততায়ীরা পালিয়েছে। ঘর ভিতর থেকে বন্ধ রেখে তারা একটি জানালা দিয়ে পালায়। ছেলেটির মাথায় টিউবওয়েলের একটি হাতল দিয়ে মারা হয়েছিল। সেটি উদ্ধার হয়েছে। ঘরে মদ্যপানের চিহ্ন মিলেছে। কেন এই খুন তা স্পষ্ট নয়। তদন্ত চলছে।” অফিসের দু’-তিনজন সহকর্মী ছাড়া খুব বেশি লোকের সঙ্গে ওই যুবকের পরিচয় হয়নি বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। সে-ক্ষেত্রে কোনও দুষ্কৃতী ঘরে ঢুকে তাকে খুন করেছে, এমন সম্ভাবনাও তারা উড়িয়ে দিচ্ছে না।
অরিজিতের বাবা অজয়বাবু রাঁচির দীর্ঘদিনের বাসিন্দা। তাঁর ডেকরেটরের ব্যবসা। অরিজিতের অফিসের তরফেই কলকাতায় অজয়বাবুর থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অজয়বাবু বলেন, “চিকুর (অরিজিৎ) অফিস থেকে ফোন করে বলা হল, ও আত্মহত্যা করেছে। আমি তখনই বলে উঠি, সেটা হতে পারে না। বাড়ি থেকে অনেক দূরের এই চাকরি ও হাসিমুখেই মেনে নিয়েছিল। কখনও কারও সঙ্গে শত্রুতা করেনি। কী যে হল, কিছুই বুঝতে পারছি না।” |
|
|
|
|
|