|
|
|
|
সে দিনের নেতা আজ মন্ত্রী, নতুন আশায় কানোরিয়া |
নুরুল আবসার • কলকাতা |
নতুন শিল্পস্থাপনের পাশাপাশি রাজ্যের ৫৬ হাজার বন্ধ কলকারখানার অন্তত একাংশের পুনরুজ্জীবনকেও যে সরকার সমান গুরুত্ব দিচ্ছে, তা ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন। আর সেই ঘোষণার সূত্র ধরেই আশার আলো দেখছেন হাওড়ার ফুলেশ্বরের কানোরিয়া জুটমিলের হাজার দেড়েক শ্রমিক এবং তাঁদের পরিজনেরা। তাঁদের আশাবাদী হওয়ার আরও এক কারণ অবশ্যই রাজ্য মন্ত্রিসভার এক সদস্য। এক সময়ে কানোরিয়া জুটমিল খোলার আন্দোলনের অন্যতম নেতা পূর্ণেন্দু বসু এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের শ্রমমন্ত্রী। শ্রমিকেরা তাই আশায়, এ বার হয়তো একটা সুরাহা হবে। |
|
চলছে সই সংগ্রহ অভিযান। হিলটন ঘোষ |
শ্রমিকেরা লিখিত ভাবে আবেদন জানালে কানোরিয়া খুলতে রাজ্য সরকার উদ্যোগী হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন পূর্ণেন্দুবাবু। তাঁর কথায়, “আমি কানোরিয়া জুটমিলের শ্রমিকদের বলেছি, কোনও শ্রমিক সংগঠনের ব্যানারে নয়, দলমত নির্বিশেষে শ্রমিকদের সই-সম্বলিত লিখিত আবেদন নিয়ে যেন আমার কাছে আসেন। আবেদনপত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রমিকের স্বাক্ষর থাকলে অবিলম্বে বৈঠক ডেকে কারখানা খোলার ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বলব শ্রম কমিশনারকে।” বন্ধ কারখানার গেটের সামনে চেয়ার-টেবিল পেতে সই সংগ্রহ অভিযান শুরুও হয়েছে ইতিমধ্যে। সংগ্রামী শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা লিয়াকত আলি বলেন, “দলমত নির্বিশেষে শ্রমিকদের সই করানো হচ্ছে। একটা আবেদন পাঠানো হবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও।”
নব্বইয়ের দশকে বন্ধ দরজা খুলে শ্রমিকেরাই এক দফা উৎপাদন শুরু করে নজির গড়েছিলেন এই কানোরিয়া জুটমিলে। সংগ্রামী শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃত্বে কারখানা খোলার সেই আন্দোলন জনমানসে আলোড়ন তুললেও শ্রমিকের হাসি দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ফের বন্ধ হয়েছে কারখানা। ২০০৭ সাল থেকে চলছে ‘সাসপেনশন-অব-ওয়ার্ক’। বিআইএফআর-এ ঝুলছে কারখানার ভবিষ্যৎ। শ্রমিকদের প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি বাবদও প্রচুর টাকা বাকি।
নব্বইয়ের দশকের সেই আন্দোলনপর্বে শ্রমিক-সমবায়ের মাধ্যমে মিল চালানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন সংগ্রামী শ্রমিক ইউনিয়নের তদানীন্তন প্রধান উপদেষ্টা প্রফুল্ল চক্রবর্তী। সেই প্রস্তাব অবশ্য দানা বাঁধেনি। পরে সংগঠনে মতবিরোধের জেরে আরও এক ‘সংগ্রামী শ্রমিক ইউনিয়ন’ গড়ে ওঠে। প্রফুল্লবাবুর সঙ্গ ত্যাগ করে সেই নতুন ইউনিয়ন গড়ায় মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন পূর্ণেন্দুবাবুই। নতুন সংগঠনটিকে স্বীকৃতি দেয় রাজ্য শ্রম দফতরও। সমবায়ের দাবি ছেড়ে নতুন সংগঠনের নেতৃত্ব জানিয়ে দেন, সম্মানজনক শর্তে, আইন মেনে যে কেউ কারখানা চালাতে চাইলে তাঁরা মেনে নেবেন। কিন্তু কারখানা চলেনি। শ্রমিক-মহল্লায় হাহাকারই বেড়েছে দিনে দিনে। গড়ে উঠেছে আরও এক নতুন সংগঠন--‘কানোরিয়া বাঁচাও কমিটি’। |
|
বন্ধ কানোরিয়া জুটমিল।হিলটন ঘোষ |
পূর্ণেন্দুবাবু শ্রমমন্ত্রী হওয়ার পরে সংগ্রামী শ্রমিক ইউনিয়নের একাংশ এবং তৃণমূল শ্রমিক ইউনিয়ন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে। তার পরেই শুরু হয়েছে সই-সংগ্রহ অভিযান। শ্রমমন্ত্রী সই-সংগ্রহের কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন, “কানোরিয়ার পরিস্থিতি আমার অজানা নয়। এখানে একাধিক মতের সংগঠন রয়েছে। কেউ আবার চান সমবায়ের মাধ্যমে কারখানা চালাতে। অতীতে শ্রম-কমিশনারের বৈঠকে নিজেদের মধ্যে শ্রমিক নেতারা ঝগড়া করেছেন। কোনও ফল হয়নি। তাই আমি সই সংগ্রহ করতে বলেছি।”
প্রফুল্লবাবুর অবশ্য এ ধরনের সই সংগ্রহে আপত্তি রয়েছে। তাঁর বক্তব্য, “শ্রমিকেরা তো চাইবেনই কারখানা খুলুক। সে কথা সই করে জানানোর কী আছে?” তবে প্রফুল্লবাবুও সমবায়ের দাবি থেকে সরে আসতে এখন রাজি। তিনি বলেন, “কোনও বিকল্প না-থাকলে তবেই সমবায়ের মাধ্যমে মিল চালানো যেতে পারে বলেছিলাম। কিন্তু কেউ যদি আইন মেনে কারখানা চালাতে চান তা হলে আমরা প্রস্তুত। তবে বর্তমান প্রোমোটারকে কারখানা চালাতে দেওয়া যাবে না।” মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তিনিও আলাদা ভাবে স্মারকলিপি দেবেন বলে জানিয়েছেন প্রফুল্লবাবু। কানোরিয়া বাঁচাও কমিটি-র উপদেষ্টা কুশল দেবনাথ সই সংগ্রহকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “আমাদের সংগঠনের সদস্যদের সই করতে বলা হয়েছে। দেখাই যাক না কী হয়। আমরা চাই কারখানাটা খুলুক। শ্রমিকদের বকেয়া পাওনাও মেটাতে হবে।”
লিয়াকতরাও কারখানা খোলার স্বপ্নেই জোরকদমে সই সংগ্রহ করছেন। |
|
|
|
|
|