|
|
|
|
গাড়িতে যুবকের গুলিবিদ্ধ দেহ, ধৃত দুই সঙ্গী |
নিজস্ব সংবাদদাতা • দুবরাজপুর |
জাতীয় সড়কের পাশে থাকা একটি গাড়ি থেকে এক যুবকের দেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে দুবরাজপুর থানা এলাকার গড়গড়াঘাটের কাছে রানিগঞ্জ-মোড়গ্রাম ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশ থেকে দেহটি উদ্ধার করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম রাজেশ অগ্রবাল (৩০)। বাড়ি ঝাড়খণ্ডের ঝরিয়ায়। মাস তিনেক আগে বর্ধমানের পাণ্ডবেশ্বরের এক টায়ার ব্যবসায়ীর ম্যানেজার পদে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতদের নাম ভূতনাথ রায় ও অজিত তিওয়ারি। ধৃতদের শুক্রবার দুবরাজপুর আদালতে তোলা হয়। ধৃতেরা রাজেশের পরিচিত। জেলা পুলিশ সুপার নিশাদ পারভেজ বলেন, “ধৃতদের সঙ্গে ওই খুনের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক রয়েছে। তবে ওই গাড়িতে আরও এক জন ছিল। পুলিশ তার সন্ধান করছে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাত আটটা নাগাদ ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে দাঁড়িয়ে থাকা একটি গাড়িকে দেখে সন্দেহ হয় পুলিশের টহলদারি ভ্যানের। নদীর কাছে গাড়িটিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে পুলিশকর্মীদের মনে হয়েছিল রাস্তার পাশের নরম মাটিতে চাকা বসে গিয়েছে। কাছে গিয়ে দেখা যায় দু’টি সিটের মধ্যে পড়ে রয়েছে একটি রক্তাক্ত দেহ। সঙ্গে সঙ্গে টহলদারি ভ্যান থেকে থানায় খবর দেওয়া হয়। ঘটনাস্থলে আসেন ডিএসপি (সদর) শান্তকুমার মিত্র, সার্কেল ইন্সপেক্টর স্বপন সাহা, খয়রাশোল ও দুবরাজপুর থানার ওসি-সহ বিশাল বাহিনী। আশেপাশের গ্রামগুলিতেও খোঁজ শুরু হয়। সে সময়ে পুলিশ জানতে পারে পাশেই গড়গড়া গ্রামের বাসিন্দারা দু’জন ‘চোর’কে ধরেছে। আর তাদের সঙ্গে থাকা এক জন পালিয়ে গিয়েছে। |
|
আটক করার পরে গাড়িটি। |
ঘটনার খবর পেয়ে গ্রামে গিয়ে পুলিশ দু’জনকে উদ্ধার করে জেরা করে। কেন তাঁরা এ ভাবে পালাচ্ছিলেন তা জানতে চাওয়া হয়। তাতে ওই দু’জন অসংলগ্ন জবাব দেওয়ায় সন্দেহ হয় পুলিশের। জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে দু’জনের কাছ থেকে পুলিশ জানতে পারে যে গাড়ি থেকে দেহ উদ্ধার হয়েছে দু’জন ওই গাড়ির যাত্রী। গ্রামবাসীরা পুলিশকে জানায়, ওই দু’জন ছাড়াও আরও এক জন স্থানীয় রেল স্টেশনে যাওয়ার জন্য রাস্তা জানতে চাইছিলেন। কিন্তু তাদের হাতেপায়ে কাদা ও রক্তের দাগ দেখে সন্দেহ হয় বাসিন্দাদের। এর পরেই দু’জনকে ধরে থানায় খবর দেয়। আর এক জন ভিড়ের মধ্যে সুযোগ বুঝে পালিয়ে যায়।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃত যুবকের কাছ থেকে ৫৮ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে অনুমান, খুব কাছ থেকে ওই যুবককে গুলি করা হয়েছে। যে ব্যবসায়ীর কাছে পাণ্ডবেশ্বরে কাজ করতেন রাজেশ, সেই বিজন খেমকার ভাই পবন খেমকা শুক্রবার বলেন, “আমাদের একাধিক ব্যবসা রয়েছে। তবে টায়ারের ব্যবসার তাগাদা করতে প্রতি বৃহস্পতিবার দুবরাজপুরে যেতে হয়। গত কালও গাড়িতে করে তাগাদা করতে এসেছিল নবনিযুক্ত ম্যানেজার রাজেশ ও চালক ভূতনাথ রায়। টাকা সংগ্রহ করে ফেরার পথে গাড়িতে উঠেছিলেন আমার এক ভাইপোর পেট্রল পাম্পের ম্যানেজার অজির তিওয়ারি। ফেরার পথে খুব সম্ভবত তাঁরা ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েছিলেন।” পবনবাবু ও তাঁর আত্মীয় দিলীপকুমার খেমকার দাবি, পুলিশ যাঁদের গ্রেফতার করেছে সেই দু’জন দীর্ঘদিন ধরে তাঁদের প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এবং বিশ্বস্ত। |
|
আদালতে ধৃতেরা |
পুলিশ অবশ্য মালিকদের ওই দাবির সঙ্গে একমত নয়। জেরার শুরুতে ধৃত ভূতনাথ রায় ও অজিত তিওয়ারি ছিনতাইয়ের ‘গল্প’ শুনিয়েছিল বলে পুলিশের দাবি। কিন্তু তা ঠিক নয়, কেননা মৃতদেহের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে ৫৮ হাজার টাকা। ফলে ছিনতাইয়ের সঙ্গে তা মিলছে না। এ ছাড়াও সহযাত্রীকে ছিনতাইকারীরা খুন করলে যে ধরনের আচরণ করা উচিত তা কিন্তু করেননি ভূতনাথ ও অজিত। উল্টে তাঁরা পালিয়ে যাচ্ছিলেন। পুলিশের অনুমান, গাড়িটি নরম মাটিতে আটকে যাওয়ায় তাঁরা গ্রামের পথ ধরে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু জামাতে রক্তের দাগ লেগে থাকায় গ্রামবাসীদের সন্দেহ হয়। তার ফলেই দু’জন ধরা পড়ে।
তবে পুলিশের কাছে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল, গাড়িতে চতুর্থ ব্যক্তি কে ছিলেন? মালিকপক্ষ বা পুলিশ কেউই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারেননি। পুলিশের দাবি, খুব ঠাণ্ডা মাথায় ওই যুবককে খুন করা হয়েছে। এ ছাড়া খুনের পিছনে ‘অন্য কারণ’ রয়েছে। তবে কী সেই কারণ তা নিয়ে মুখ খুলতে চাননি পুলিশ কর্তারা। তদন্ত চলেছে। মৃতদেহটি ময়না তদন্তের জন্য বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
|
ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত। |
|
|
|
|
|