|
|
|
|
বিনা নোটিসে বাস চালানো বন্ধ করলেন কর্মীরা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • সাঁইথিয়া |
রাস্তা না পুকুর, এক ঝলক দেখলে বোঝার উপায় নেই। দীর্ঘদিন সংস্কার নেই। ঝুঁকি নিয়েই ভাঙাচোরা রাস্তা দিয়ে চলছে যাত্রীবোঝাই বাস-সহ অন্য সব যানবাহন। বীরভূমের অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার এটাই হাল। বাস মালিক সংগঠনের অভিযোগ বারবার প্রশাসনকে বলেও লাভ হয়নি। তাই শুক্রবার থেকে বিনা নোটিসে সিউড়ি-সাঁইথিয়া (ভায়া ইটেগড়িয়া) সড়কে বাস চালানো বন্ধ করে দিলেন বাস চালক ও কর্মীরা। কিছু দিন আগে রামপুরহাট মহকুমা বাস মালিক সমিতিও বেহাল রাস্তা দ্রুত সংস্কার না হলে বাস পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিল।
সাঁইথিয়া ‘বাস মালিক কল্যাণ সমিতি’র সম্পাদক পরিতোষ মণ্ডলের ক্ষোভ, “শুধু সিউড়ি-সাঁইথিয়া রাস্তাই বেহাল নয়, একই অবস্থা সাঁইথিয়া থেকে বহরমপুর, রামনগর, রামপুরহাট, মল্লারপুর, বোলপুর, মুরালপুর প্রভৃতি জায়গায় যাওয়ার রাস্তাগুলিরও। খানখন্দে ভর্তি রাস্তায় বৃষ্টির জল জমে সাংঘাতিক অবস্থা।” তাঁর অভিযোগ, গত ২২ জুন এ সব রাস্তা সারানোর দাবিতে জেলাশাসককে সংগঠনের তরফে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছিল, অবিলম্বে মেরামতি শুরু না হলে জেলার অধিকাংশ রুটেই বাস পরিষেবা বন্ধ হয়ে যাবে। |
|
খন্দে ভরা সিউড়ি-সাঁইথিয়া সড়ক। ছবি: অনির্বাণ সেন। |
সাঁইথিয়া বাস মালিকদের অন্য একটি সংগঠন ‘বাস মালিক সমিতি’-র সম্পাদক গৌতম সিংহ বলেন, “দীর্ঘদিন থেকে রাস্তা সারানোর দাবি জানিয়ে আসছি প্রশাসনের কাছে। যদি প্রশাসন একটু নজর দিত, হঠাৎ করে সিউড়ি-সাঁইথিয়ার মতো ব্যস্ত রাস্তায় এ ভাবে বাস চলাচল বন্ধ করে দিতে হত না।” তবে তাঁর দাবি, বাস মালিকেরা নন, এ দিন ওই পথে বাস চালানো বন্ধ করেছেন চালক ও কর্মীরাই। জেলা বাস মালিক সমিতির সহ-সম্পাদক সব্যসাচী হাজরার কথায়, “এ ভাবে আচমকা বাস বন্ধ করে দেওয়ার পক্ষপাতী আমরা নই। বাস কর্মীদের বুঝিয়ে বলেছি যে, বিনা নোটিসে পরিষেবা বন্ধ করা উচিত নয়। তবে এটাও ঠিক অধিকাংশ রাস্তারই যা হাল, তাতে বাসের চালক বা কর্মীদের জোর দিয়ে বাস চালানোর কথা বলা যাচ্ছে না। যে কোনও সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।”
সিউড়ি-সাঁইথিয়া রাস্তায় বাস পরিষেবা চালু করতে আইএনটিটিইউসি-র জেলা নেতা মৃণাল বসুকে অনুরোধ করা হয়েছে বলেও গৌতমবাবু জানান। মৃণালবাবুর অবশ্য যুক্তি, “কর্মীরা ইচ্ছাকৃত ভাবে বাস বন্ধ করেননি। রাস্তার এমনই অবস্থা যে বাধ্য হয়ে তাঁরা ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সিউড়ি-সাঁইথিয়া সহ জেলার অধিকাংশ রাস্তা সারানোর ব্যাপারে প্রশাসন যদি এখনই তৎপর না হয়, তা হলে অনেক রুটেই বাস পরিষেবা বন্ধ করে দেবেন কর্মীরা। এমনকী মোরগ্রাম-রানিগঞ্জ ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের হালও তথৈবচ।”
কবে সিউড়ি-সাঁইথিয়া রুটে বাস চলবে, তা মৃণালবাবু জানাতে পারেননি। ওই রুটের বাস চালক আবুল কালাম, তোফাজ্জেল হোসেনরা বলেন, “রাস্তা না পুকুর, বোঝার উপায় নেই। ওই রাস্তা দিয়ে কী ভাবে দিনের পর দিন যাত্রীঠাসা বাস চালাচ্ছি, তা আমরাই জানি। দুর্ঘটনা ঘটলে তো সব দোষ আমাদের ঘাড়ে এসে পড়বে। কোনও যাত্রী মারা গেলে পুলিশ জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করবে। তাই ঠিক করেছি, রাস্তা না সারানো পর্যন্ত বাস চালাব না। তবে শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছেন।”
জেলা পূর্ত দফতর (সড়ক) সূত্রে জানা গিয়েছে, সিউড়ি-সাঁইথিয়া ১৮ কিলোমিটার রাস্তার সাঁইথিয়ার দিক থেকে ৯ কিলোমিটার অংশের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। ওই ৯ কিলোমিটার রাস্তা সারানোর জন্য শুক্রবারই ১ কোটি ২৫ লক্ষ টাকার ‘এস্টিমেট’ পাঠানো হয়েছে জেলাশাসক এবং পূর্ত দফতরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে। জেলা পূর্ত দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “সাঁইথিয়া-বহরমপুর রাস্তা সারানোর জন্যও কয়েক মাস আগে ২৯.৪ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছিল। এর পরে টেন্ডারের নোটিসও দেওয়া হয়। কিন্তু অর্থ দফতর টাকা মঞ্জুর না করায় কাজে হাত দেওয়া যায়নি। বাতিল করা হয়েছে টেন্ডারও।” পূর্ত দফতর (সড়ক)-এর চিফ ইঞ্জিনিয়ার সুব্রত দাসের অবশ্য দাবি, “অতিরিক্ত গাড়ি চলাচল করার জন্যই সিউড়ি-সাঁইথিয়া রাস্তার এই হাল। অতিরিক্ত পণ্যবাহী সব যান চলে।” বিশেষ করে বালি বোঝাই ট্রাক-লরিকেই তিনি এই অবস্থার জন্য দুষেছেন। দফতরের হাইওয়ে ডিভিশনের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার জাহ্নবী কোনার জানান, মুরালপুর, রামনগর-সহ তাঁদের আওতাধীন অধিকাংশ রাস্তা সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলেন, “রাস্তা সংস্কারের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট দফতরগুলির আধিকারিকদের সঙ্গেও কথা হয়েছে।” |
|
|
|
|
|