|
|
|
|
|
|
|
তিন স্যাঙাতের গপ্পো |
চিরশ্রী মজুমদার |
ক্যাপ্টেন আর্চিবল্ড হ্যাডক |
এক কালে ডাকসাইটে নাবিক ছিলেন। নামটিও বিলাতি মাছের নামে। কাঁকড়া রহস্য গল্পে তাঁর সঙ্গে টিনটিনের প্রথম দেখা। তার পর থেকেই টিনটিনের দুঃসাহসী জীবনে ঘটনা-দুর্ঘটনার ঘনঘটা মারাত্মক রকমের বেড়ে যায়। রাজ্যের বিপত্তি যে তাঁরই ঘাড়ে এসে চাপে। শয়তান রাস্তাপপোলাস অনবরত তাঁকে ধরে নিয়ে যায়, বিদেশি জীবজন্তুরা দাড়ি চিবিয়ে খেতে আসে। গাছের গুঁড়িতে একটু জিরিয়ে নিতে বসলে সেইটা কুমির হয়ে তাড়া করে। প্রতি অভিযানেই অন্তত বার পাঁচেক ধড়াম-ধপাস আছাড় খান। চাঁদে যাওয়ার পথে আর একটু হলেই একটি উপগ্রহে পরিণত হচ্ছিলেন। কয়েক পাত্তর খেয়ে রকেট থেকে বেরিয়ে মহাকাশে চক্কর মেরে আসতে গিয়েছিলেন কিনা। ক্যাপ্টেন অবশ্য বেয়াদপি দেখলেই দাঁত কিড়মিড়িয়ে শত্রুদের তাড়া করেন। কেটেকুটে কাটলেট বানিয়ে খাওয়ার হুমকি দেন। আবার প্রায়ই গুনগুন গান করেন, তেমন আহ্লাদ হলে স্থান-কাল-পাত্র ভুলে নৃত্যও করেন(সঙ্গীতপ্রীতির জন্যই কি কোকিলকণ্ঠী বিয়াঙ্কা কাস্তাফিয়োরে-র বাঁজখাই গানের গুঁতোও তাঁকে হজম করতে হয়?)। তবে তিনি মহাপ্রাণ। তিব্বতে টিনটিন গল্পে বন্ধুকে বাঁচাতে নিজের প্রাণটি দিয়েই দিয়েছিলেন
আর কী!
ক্যাপ্টেন বিপদে পড়লেই চিৎকার করেন, দশ হাজার গর্জনকারী টাইফুন। তার পর আছে তাঁর কিংবদন্তির পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়া বকুনির তুবড়ি। পাজি, গুণ্ডা, শুঁয়োপোকা, উল্লুক, বেবুন, হনুমান, টিকটিকি এবং, এবং, ও হ্যাঁ...হিপোপটেমাস!
|
ওবেলিক্স |
অ্যাসটেরিক্সের এই হরিহর আত্মা বন্ধুটির মনে বড় ব্যথা। পুরোহিত গেটাফিক্স তাকে জাদু ওষুধ এক ফোঁটাও খেতে দেন না। আসলে ছোট থাকতে ওবেলিক্স জাদু ওষুধের কড়াইতে পড়ে গিয়েছিল। তার পর থেকেই সে ভীম পালোয়ান বনে গেছে। প্রায়ই শিকার করে বুনো শূকরের রোস্ট বানিয়ে খায়। ওষুধ ও খাদ্যগুণে তার দেহটি বিশাল, তাতে একশো হাতির শক্তি। কিন্তু এই দুই ব্যাপারেই সে একদমই ওয়াকিবহাল নয়। ‘মোটা’ কথাটা কানে এলে প্রথমে এ দিক ও দিক খোঁজে, ‘এখানে আবার কে মোটা রে বাবা?’ আর যদি বোঝে যে বিশেষণটা তার উদ্দেশ্যেই বলা, খেপে লাল। ‘ওজন তো আমার একটু খানিই বেশি, মোটা বললেই হল?’ কিন্তু তার এই আপনভোলা স্বভাব গল গ্রামবাসীদের কাছে অত্যন্ত মাথাব্যথার কারণ। সে আলতো টোকা মারলেই পাথরের সিংহদরজা ঝুরঝুর করে ঝরে যায়। এক বার তো তার চাঁটি খেয়ে অ্যাসটেরিক্স বেচারার স্মৃতিই লোপাট হয়ে গিয়েছিল। সাধে কি আর তার জাদু ওষুধ চাখতেও মানা!
তাই বলে তার আক্কেল নেই, এমনটি ভাবিও না। অ্যাসটেরিক্স ও নর্মান সৈন্য গল্পে শক্ত শক্ত ধাঁধার উত্তর টপাটপ বাতলে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল। তবে হ্যাঁ, ওই পাহাড়প্রমাণ চেহারার আড়ালে মনটা বড়ই তুলতুলে। পোষা কুকুর ডগম্যাটিক্সকে কেমন কোলে-পিঠে আগলে রাখে। অ্যাসটেরিক্স আর গোটা গলবাসীর প্রতিও তার ভারী মমতা। এমনকী শত্রু রোমানগুলোকে অবধি সে একটু ক্ষমা ঘেন্নাই করে। দুবলা-পাতলা পুঁচকে জীবগুলো কেন যে তাদের সঙ্গে লড়তে আসে? আহা, বেচারারা এক্কেবারে পাগল!
|
সাবু |
দৈর্ঘ্য ১৫ ফুট, তেমনই তাগড়াই চেহারা, কানে বড় বড় মাকড়ি, পায়ে গামবুট। চাচা চৌধুরীর শাগরেদটির বাড়ি জুপিটার গ্রহে। এক দিন সৌর জগতে ঘুরতে ঘুরতে পৃথিবীটাকে একটু কাছ থেকে দেখবে ভেবে উঁকি দিতেই, আহা, বাহা করেই অস্থির। তার পরে দেখা চাচাজির সঙ্গে। এক মানুষ বটে, কী আদরই না দিলেন সাবু ভায়াকে। তার পর বিন্নি চাচি? এমন খাবার তিনি বানিয়ে খাওয়ালেন যে সে আর দেশে ফিরতেই পারল না।
তার পর থেকে সাবু চাচাজির বাড়িতে বহাল তবিয়তে আছে। তবে হ্যাঁ, থেকে থেকেই তার বড্ড খিদে লাগে। তখন সে খায় ইয়াব্বড় থালার সাইজের শ’খানেক চাপাটি (অন্তত), বারো কিলো ঘিয়ে ভরপুর হালুয়া, কুড়ি লিটার খাঁটি দুধের লস্যি।
মাফিয়া আর দাঙ্গাবাজরা দেশটাকে জ্বালিয়ে মারে। চাচাজি তাদের কম্পিউটার বুদ্ধি দিয়ে জব্দ করেন। আর সাবু দেয় আড়ং ধোলাই। ডাকুই হোক কী শত্তুর দেশের জঙ্গি, তার কাছে সবাই পুঁচকে ইঁদুর। শুধু রাকা এলে লড়াই খানিক জমে। সে বদমাশ আবার সাবুর মতোই বিশাল কিনা।
হু হু বা করে যতই গর্জন করুক, সাবু কিন্তু মেয়েদের দেখলেই ঠান্ডা। তখন সে লাজুক, ক্যাবলাচন্দর, চাচির আঁচলের খোকাবাবু। আর ইয়ে! শুনেছি তার বুদ্ধি-শুদ্ধি নাকি কিছুই...আবার আমি বলেছি বোলো না যেন। রাগলে তো নাকি জুপিটার না কোথায় অগ্ন্যুৎপাত না কী একটা হয়। না না। আমি আর কিছু জানি না! |
|
|
|
|
|