|
|
|
|
সিঙ্গত গ্রামীণ হাসপাতাল |
ওয়ার্ডে ভোজসভা ডাক্তার ও কর্মীদের, আপত্তি তৃণমূলের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মঙ্গলকোট |
বেসরকারি কায়দায় রাস্তার মোড়ে বিজ্ঞাপন দিয়ে এক সময় নজর কেড়েছিলেন যাঁরা, ওর্য়াডের ভিতরে বক্স বাজিয়ে অনুষ্ঠান ও খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করে বিতর্কের মুখে পড়লেন সেই সিঙ্গত গ্রামীণ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার এ নিয়ে মঙ্গলকোটের সিঙ্গত গ্রামীণ হাসপাতালের সুপার শিশিরকুমার নস্করের কাছে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। হাসপাতাল সুপার ভুল স্বীকার করে নিয়েছেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ’৯০ দশকের গোড়া থেকেই হাসপাতালের জনপ্রিয়তা কমতে থাকে। হাসপাতালকে জনপ্রিয় করে তুলতে উদ্যোগী হন বর্তমান সুপার শিশিরকুমার নস্কর। মঙ্গলকোটের বিভিন্ন জায়গায় বিজ্ঞাপনও দেওয়া হয়। তার ফলে বহির্বিভাগ, জরুরি বিভাগ, অন্তর্বিভাগে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। সেই কারণে বুধবার হাসপাতালের সুপার কাজের ভিত্তিতে কর্মীদের উৎসাহ দিতে হাসপাতালের দোতলার একটি ওয়ার্ডে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। ছিল খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থাও। পাশের ওয়ার্ডেই মহিলারা ভর্তি রয়েছেন।
বুধবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ অনুষ্ঠান শুরু হয়। ৮টি বিভাগের ৭ জন কর্মীকে ‘উৎসাহ প্রদান’ স্মারক দেওয়া হয়। ওই অনুষ্ঠানেও বক্স বাজানো হয় বলে অভিযোগ। অনুষ্ঠান শেষে রাত ১১টা পর্যন্ত খাওয়া-দাওয়া পর্ব চলে। অভিযোগ, ওই ওয়ার্ডের ভিতরেই রান্না করা হয়। উপস্থিত ছিলেন বহিরাগতরাও। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা, হাসাপাতালে চিকিৎসক ও কর্মী কম। এই অবস্থায়ও হাসপাতালের পরিষেবা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হয়। তাই কর্মীদের উৎসাহ দিতেই এই আয়োজন। সুপারের কথায়, “পুরো ব্যবস্থাটাই দলগত। কর্মীদের উৎসাহ দিলে তাঁরা আরও ভাল কাজ করবেন বলে মনে করি।”
তৃণমূলের অভিযোগ, শুধু এই অনুষ্ঠানই নয়, হাসপাতালের ওই ওয়ার্ডে মাঝেমধ্যেই চিকিৎসক ও অন্যান্য কর্মীরা ‘পিকনিক’ করে থাকেন। তৃণমূলের স্থানীয় নেতা তপনজ্যোতি রায় বলেন, “হাসপাতালটি ২৪ বিঘা জমির উপরে তৈরি। যার মধ্যে ১৩ বিঘা জমি আমাদের পরিবারের দান করা। সেখানে দিনের পর দিন নানা রকম অনিয়য়ম হচ্ছে। আমরা প্রতিবাদ করেও ফল পাচ্ছি না।” তৃণমূল সমর্থক শ্যামসুন্দর দাস, বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায়দের অভিযোগ, “রোগী কল্যাণ সমিতির টাকা থেকেই খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।” যদিও চাঁদা তুলে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে বলে সুপার তাঁদের জানিয়েছেন।
এ দিন দুপুরে সিঙ্গত গ্রামীণ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, অনুষ্ঠানের ঘরটিতে হাসপাতালের শয্যা রাখা হচ্ছে। ঘর পরিষ্কারের কাজও চলছে। পাশাপাশি চেয়ার-টেবিল উনুন, গ্যাস বাইরে নিয়ে যাচ্ছেন কয়েকজন কর্মী। পাশের ওয়ার্ডে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহিলা রোগীরা বলেন, “ওই ওয়ার্ডে সাধারণ রোগীদের পাশাপাশি প্রসূতিরাও রয়েছেন। মাংসের গন্ধে প্রসূতিদের অসুবিধা হয়।” হাসপাতালের এক নার্সের কথায়, “হাসপাতাটি ৫০ শয্যার হলেও রোগী রয়েছেন মাত্র ১৫ জন। তাঁদের জন্য একটু খাবার দিতে বলেছিলাম। কেউ শুনলেন না।” সিঙ্গত গ্রামীণ হাসপাতাল সুপার শিশিরকুমার নস্কর বলেন, “পুরো ঘটনাটাই অনিচ্ছাকৃত ভুল। পরবর্তিকালে যাতে এই ধরনের ঘটনা না ঘটে তার জন্য আমরা সতর্ক থাকব।” ওই অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন মঙ্গলকোটের বিএমওএইচ বিশ্বজিৎ বিশ্বাস। তিনি বলেন, “আমি অতিথি ছিলাম। যা বলার হাসপাতালের সুপার বলবেন।” বর্ধমান জোলার সহকারী স্বাস্থ্য আধিকারিক (কাটোয়া) শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, এই ধরনের ঘটনা কেন ঘটল তা খোঁজ নিয়ে দেখা হবে। |
|
|
|
|
|