|
|
|
|
মমতার দফতর বণ্টন নিয়ে কটাক্ষ সূর্যর |
‘দশ’ কাজে স্বাস্থ্য দেখবেন কী করে, প্রশ্ন সিপিএমের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
বিধানচন্দ্র রায় শিশু হাসপাতালে শিশুমৃত্যুর ঘটনার জন্য সরকারকে সরাসরি দোষারোপের রাস্তায় না-হেঁটেও রাজনৈতিক প্রশ্ন তুলল সিপিএম। রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের দাবি, শিশুমৃত্যুর ঘটনা নিয়ে তারা ‘রাজনীতি’ করতে চায় না। কিন্তু বিরোধী দলনেতার প্রশ্ন, রাজ্য মন্ত্রিসভার ১০টি দফতর একা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষে কী ভাবে সামলানো সম্ভব? বিশেষত, স্বাস্থ্যের মতো সর্বাধিক কর্মী-সংবলিত দফতর যেখানে মুখ্যমন্ত্রীরই হাতে রয়েছে এবং তাঁকে সরকারের পাশাপাশি দলের সব দায়িত্বও সামলাতে হয়!
মুখ্যমন্ত্রী মমতার হাতেই এখন ১০টি দফতরের দায়িত্ব। তার মধ্যে যেমন স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, পুলিশ, কৃষি, ভূমি ও ভূমি সংস্কারের মতো গুরুত্বপূর্ণ দফতর রয়েছে, তেমনই সংখ্যালঘু উন্নয়ন, মাদ্রাসা শিক্ষা, পার্বত্য বিষয়ক দফতর, তথ্য ও সংস্কৃতি, কর্মিবর্গ ও প্রশাসনিক সংস্কার দফতরও নিজের হাতেই রেখেছেন মমতা। এত দিন পর্যন্ত তা নিয়ে কোনও কথা বলেনি সিপিএম। এ বার বি সি রায় হাসপাতালে কয়েক দিনে ১৮টি সদ্যোজাতের মৃত্যুতে কৌশলে মুখ্যমন্ত্রীর দফতর বণ্টন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধী দলনেতা তথা সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্র। প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কথায়, “আমার সময়ে স্বাস্থ্যের সঙ্গে পঞ্চায়েত দফতরের দায়িত্ব ছিল। দু’টো গুরুত্বপূর্ণ দফতর এক জনের হাতে থাকলে কী ভাবে কাজ হবে, তা নিয়ে বিরোধীরা অনেক সমালোচনা করতেন। এখন এক জনের হাতে ১০টা দফতর! যিনি মুখ্যমন্ত্রী, তিনিই স্বাস্থ্যমন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রী, ভূমিমন্ত্রী, বিদ্যুৎমন্ত্রী সব! তার উপরে তিনিই দলের প্রধান। এখন তো কেউ প্রশ্ন তুলছেন না?” সংসদ থেকে শুরু করে বিধানসভা এবং রাজ্য প্রশাসন, সর্ব স্তরেই তৃণমূলের নীতি নির্ধারণের দায়িত্ব যে মুখ্যমন্ত্রী মমতারই কাঁধে, সেই কথা উল্লেখ করে সূর্যবাবু বলেন, “স্বাস্থ্য দফতরে সব চেয়ে বেশি কর্মী। এর মধ্যে তিনি (মমতা) কী করে সময় দিয়ে দফতর সামলাবেন, উনিই জানেন!”
তারা ‘রাজনীতি’ করতে চায় না বলেও হাসপাতালের ঘটনা নিয়ে তৃণমূলের অতীতের রাজনীতিকেই কৌশলে খোঁচা দিয়েছে সিপিএম। শিশুমৃত্যুর ঘটনাকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ আখ্যা দিয়ে সূর্যবাবু যেমন বলেছেন, “হাসপাতালে এমন কিছু ঘটলে রাজনীতি করা উচিত নয়। আমরা রাজনীতি করতেও চাই না।” এই সূত্রেই সূর্যবাবুর বক্তব্য, “আমি যখন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলাম, কয়েক বছর আগে ওই হাসপাতালে এই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল। এখন যিনি মুখ্যমন্ত্রী, সেই সময় তিনি বিরোধী নেত্রী ছিলেন। ঘটনা জানাজানির সঙ্গে সঙ্গেই উনি নিজে সেখানে হাজির হয়েছিলেন। মাইক বাজিয়ে, বিক্ষোভ দেখিয়ে, সুপারের চেয়ার দখল করে এমন ঘটনা ঘটানো হয় যে, স্বাস্থ্যমন্ত্রী হয়েও আমি হাসপাতালে যেতে পারিনি! পরের দিন গিয়েছিলাম। আমরা ওই রকম কিছু করতে চাই না!” স্বাস্থ্য এমনই একটি ক্ষেত্র, যেখানে পরিকাঠামোর হাল কখনও ‘পর্যাপ্ত’ হতে পারে না, তা-ও বলেন বাম জমানার স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
শিশুমৃত্যুর ঘটনা নিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকেও আলোচনা হয়। এই ঘটনার ‘ফায়দা’ তুলতে এখনই রাস্তায় নেমে আন্দোলনে না-গেলেও মমতার সরকারকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি সিপিএম। বৈঠকের পরে দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মহম্মদ সেলিম বিরোধী দলনেতার সুরেই বলেন, “আমরা মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করি না। তৃণমূল জন্মলগ্ন থেকেই সেটা করছে! তৃণমূল নেত্রীও আগে করেছেন।” মুখ্যমন্ত্রী হয়ে মমতার বিভিন্ন হাসপাতালে আচমকা পরির্দশনের ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে সেলিমের কটাক্ষ, “যিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং আরও সব মন্ত্রী, তিনি নানা জায়গায় হানা দিয়েছেন! নাটক না-করে তাঁর উচিত, শিশুদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো।”
বিরোধী দলনেতা এ দিন জানান, তাঁদের আমলে বি সি রায় হাসপাতালে শিশুমৃত্যুর ঘটনার পরে পরিকাঠামো সাজানোয় মনোযোগ দেওয়া হয়েছিল। সেই সময়ে শিশুদের জন্য অক্সিজেনের ব্যবস্থা নিয়ে কিছু অভিযোগ ছিল। পরে ২৪ ঘণ্টা অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবস্থা করা হয়। নতুন ব্লক গড়ে আধুনিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের ব্যবস্থা করা হয়, যার উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। সূর্যবাবুর বক্তব্য, “পরিকাঠামো উন্নতির কোনও শেষ নেই। আজ যেটা উন্নত, কয়েক দিন পরে সেটারও উন্নতির দরকার। আগের চেয়ে ওই হাসপাতালে পরিকাঠামো ভাল হওয়া সত্ত্বেও এমন ঘটনা কী ভাবে ঘটল, দেখতে হবে। তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। তারা নিশ্চয়ই দেখবে।” |
|
|
|
|
|