স্ত্রীর জন্য কিডনি চেয়ে ফাঁদে দুই পাচারকারী
মৃত্যুশয্যায় স্ত্রী। একমাত্র কিডনি প্রতিস্থাপন করলেই বাঁচতে পারেন তিনি। আর সে জন্যই খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে কোনও ‘হৃদয়বান’ ব্যক্তির খোঁজ করা হয়েছিল। সঙ্গে দেওয়া হয়েছিল যোগাযোগের নম্বরও।
‘নুন আনতে পান্তা ফুরনো’ সংসারের হাল ফেরাতে সেই বিজ্ঞাপনে সাড়া দিতে দেরি করেননি বর্ধমানের বুদবুদের সুকান্তনগর এলাকার আভারানি দাস। তবে যোগাযোগের পরেই আভারানি বুঝতে পেরেছিলেন ‘ফাঁদে’ পা দিয়েছেন। স্থানীয় রেল পুলিশকে সে কথা খুলে বলেন তিনি। পুলিশের পরামর্শেই ওই চক্রের দুই চাঁইকে কল্যাণী স্টেশনে আসতে বলে শেষ পর্যন্ত হাতেনাতে তাদের ধরিয়ে দিয়েছেন ওই মহিলা। কল্যাণীর বাসিন্দা অনিমেষ বিশ্বাস এবং কলকাতার বরাহনগর এলাকার বিনয় যাদব নামে ধৃত দুই যুবক পুলিশের জেরায় কবুল করেছে, গত দু’বছরে এ ভাবেই ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকায় ‘দরাদরি’ করে অন্তত ৬ জনের কাছে থেকে কিডনি কিনেছে তারা। এ ব্যাপারে চেন্নাইয়ের তিনটি হাসপাতালের নাম করেছে তারা। তারা জানায় ওই হাসপাতাল এবং কয়েক জন চিকিৎসকের যোগসাজশেই কিডনি প্রতিস্থাপন করা হত। তাদের কাছ থেকে একাধিক এটিএম কার্ড, মোবাইল এবং একটি মোটরসাইকেল আটক করেছে পুলিশ।
ধৃত দুই পাচারকারী। নিজস্ব চিত্র
চাষ-সমৃদ্ধ বর্ধমানের সুকান্তনগর গ্রামে দীর্ঘদিন বসবাস করলেও শঙ্কর দাসের বিশেষ জমিজমা নেই। স্ত্রী আভারানির সঙ্গে গাঁ-গঞ্জে ঘুরে ধর্মচর্চা করেই দিন গুজরান তাঁদের। কিন্তু পুজো-আচ্চা আর কখনও কোনও গ্রামে যাগযজ্ঞের ডাক পড়লে সামান্য আয় হয় তাঁদের। তার উপরে কিছু দিন আগেই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। বাজারে তাঁদের বড় অঙ্কের ঋণ। টানাটানির সংসারে হাল ফেরাতে তাই হিমসিম খাচ্ছিলেন দাস দম্পতি।
এই সময়ে হঠাৎই গত ২৫ জুন একটি বাংলা দৈনিকে ওই বিজ্ঞাপনটি চোখে পড়ে আভারানির। তিনি বলেন, “ভেবেছিলাম, এক লপ্তে মোটা টাকা পেলে ভাগ্যটা ফিরবে। তাই কাউকে কিছু না জানিয়েই যোগাযোগ করেছিলাম। আমাকে কল্যাণী স্টেশনে আসতে বলা হয়েছিল। সেখানেই কিডনির দরদাম হয়েছিল।”
ওই দুই যুবকের কথামতো মঙ্গলবার নির্দিষ্ট সময়ে কল্যাণী স্টেশনে পৌঁছে গিয়েছিলেন আভারানি। তাঁর গেরুয়া বসন দেখেই এগিয়ে এসেছিল দুই যুবক। আভারানি জানান, প্ল্যাটফর্মে টিকিট কাউন্টারের পাশে একটু আড়াল খুঁজে কথাবার্তা শুরু হয়েছিল তাঁদের। মহিলা বলেন, “বিজ্ঞাপন অনুযায়ী আমি জানতে চেয়েছিলাম ওঁর স্ত্রীর কী হয়েছে, কোথায় ভর্তি আছেন, যা শুনে ওই যুবক জানান, অত জানতে হবে না। আপনি ৭৫ হাজার টাকা পাবেন, চলবে!” কথার ধরন দেখেই সন্দেহ হওয়ায় আভারানিও দরদাম শুরু করেন। ৮০ হাজারে রফা হয়। ঠিক হয়, কবে কোথায় অস্ত্রোপচার হবে তা ‘ঠিক সময়ে’ জানিয়ে দেওয়া হবে।
বাড়ি ফিরে আর চেপে রাখতে পারেননি। গোটা ঘটনাটাই শঙ্করবাবুকে জানান আভারানি। সব শুনে শঙ্করবাবু স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছিলেন, সংসারে যতই অভাব থাকুক, স্ত্রীর কিডনি বিক্রি করে অনটন মেটানোর প্রয়োজন নেই। শুধু তাই নয়, স্ত্রী যে কিডনি পাচার চক্রের ফাঁদে পড়েছেন, তা-ও বুঝতে অসুবিধা হয়নি তাঁর। স্বামীর পরামর্শেই এ বার বিষয়টি পুলিশকে জানানোর সিদ্ধান্ত নেন আভারানি। সেই মতো বৃহস্পতিবার কল্যাণী এসে আরপিএফ বা রেল নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ওই দম্পতি। সঙ্গে আসেন তাঁদের পুত্র বিশালও। পুলিশকে বিস্তারিত জানিয়ে আরপিএফের চৌকি থেকেই ফের ফোন করা হয় অনিমেষকে। তবে এ বার আভারানি নন, ফোন করেন শঙ্করবাবু। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই ওই দু’জন হাজির হয় স্টেশনে। আড়াল থেকে তাদের পুলিশকে চিনিয়ে দেন আভারানি। আর তাদের সঙ্গে কথা বলতে এগিয়ে যান বিশাল। শুরু হয় ‘দরদাম’। কথাবার্তা মিনিট কয়েক গড়াতেই পুলিশ গিয়ে হাতেনাতে গ্রেফতার করে দুই যুবককে।
আরপিএফের সিনিয়র কমাডান্ট এম মুর্শেদ বলেন, “আভারানি এবং তাঁর স্বামীর অভিযোগ পেয়ে আরপিএফের জওয়ানেরা ওই দুই যুবককে আটক করে। জেরা করতেই কিডনি পাচারের কথা স্বীকার করে তারা। তাদের জিআরপি’র হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।”
Previous Story Swasth Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.