|
|
|
|
প্রতিশ্রুতির বর্ষপূর্তি |
ছ’জেলায় ক্যানসারের চিকিৎসা আটকে রইল উদ্বোধনেই |
সোমা মুখোপাধ্যায় • কলকাতা |
ঠিক এক বছর আগের কথা।
গত চিকিৎসক দিবসে রাজ্যবাসীকে সরকারের ‘উপহার’ ছিল ছ’টি জেলায় ক্যানসার চিকিৎসার পরিকাঠামো উদ্বোধন। আবার এল ১ জুলাই।
এবং জানা গেল, বছর ঘুরলেও প্রকল্পগুলো কার্যত চালুই হয়নি। কেমোথেরাপির ওষুধের তালিকা হারিয়ে গিয়েছে, কর্মী নিয়োগের ফাইল উধাও। ডাক্তার-নার্সদের তালিম শেষ হয়নি।
এমনকী, প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা কর্মসূচি বাবদ ছ’টি জেলায় এক লক্ষ করে মোট যে ছ’লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা ছিল, তা-ও মেলেনি! স্বাস্থ্যের কোষাগারে এখন নাকি টাকার অভাব নেই। তা সত্ত্বেও এই অবস্থা কেন? ‘অভাব’টা নিছক টাকার নাকি
সদিচ্ছার, ইতিমধ্যে সে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বিভিন্ন মহলে।
ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য শহরে আসাটাই গ্রাম-গঞ্জের গরিব মানুষের বিরাট সমস্যা। ঘটিবাটি বিক্রি করে এসেও ভোগান্তির শেষ থাকে না। প্রথমত শহরের সরকারি হাসপাতালে উপচে পড়া ভিড়, তার উপরে থাকার অসুবিধে। এর প্রেক্ষিতে জেলাস্তরেই ক্যানসার নির্ণয়, কেমোথেরাপি ও কিছু ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর।
আর এ জন্য প্রাথমিক ভাবে বেছে নেওয়া হয়েছিল ছ’টি জেলাকে উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়া, নদিয়া, পুরুলিয়া, পূর্ব মেদিনীপুর ও কোচবিহার। ঠিক ছিল, প্রতি জেলায় এক জন ক্যানসার-চিকিৎসক নিয়োগ করে সপ্তাহে তিন দিন আউটডোর ও এক দিন টিউমার বোর্ড বসানো হবে। কিছু কিছু অস্ত্রোপচার হওয়ার পরিকল্পনা ছিল। বিপিএল রোগীদের নিখরচায় কেমোথেরাপির ওষুধ জোগানোর কথাও ঘোষণা হয়েছিল।
কিন্তু ঘোষণাই সার। স্বাস্থ্য-সূত্রের খবর: জেলার চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ নতুন উদ্যোগে ন্যূনতম আগ্রহ দেখাননি।
ফলে কলকাতা থেকে ক্যানসার চিকিৎসক ও শল্য চিকিৎসকেরা জেলায় প্রশিক্ষণ দিতে গিয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রে চূড়ান্ত হতাশ হয়ে ফিরেছেন। অধিকাংশ জেলা হাসপাতালে বায়পসি হয় না। স্থানীয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি মারফত সরকারি হারে খরচ দিয়ে বায়পসি-সহ বিভিন্ন পরীক্ষার ব্যবস্থা করার পরিকল্পনাও কোথাও বাস্তবায়িত হয়নি। কারণ, চুক্তিই হয়ে ওঠেনি!
পশ্চিমবঙ্গে এখন ফি বছর ৭০ হাজার মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র হুঁশিয়ারি, ২০২০-র মধ্যে এ দেশে ক্যানসার মহামারির চেহারা নেবে। তার পরেও সরকারি স্তরে এ হেন নিস্পৃহতা দেখে হতাশাই বাড়ছে চিকিৎসা-মহলে। এক স্বাস্থ্য-কর্তার আক্ষেপ, “ঠিক হয়েছিল, জেলার মেডিক্যাল অফিসারদের মধ্যে থেকে ক্যানসারের জন্য মেডিক্যাল অফিসার মনোনীত করা হবে। কাউন্সেলর, মোটিভেটর ইত্যাদি পদের জন্য সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল। ওখানেই শেষ। কলকাতা থেকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারেরা গিয়ে ট্রেনিং দিতে শুরু করেছিলেন। তাতেও তো কারও উৎসাহ দেখা গেল না!”
এনআরএসের রেডিওথেরাপি-র প্রধান চিকিৎসক সুবীর গঙ্গোপাধ্যায়ও জেলায় গিয়েছিলেন প্রশিক্ষণ দিতে। সুবীরবাবু জানাচ্ছেন, “ঠিক হয়েছিল, এক-একটা মেডিক্যাল কলেজ দু’টো করে আউটডোরকে ‘দত্তক’ নেবে। মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকেরা মাসে এক বার গিয়ে সব কিছু দেখে আসবেন। কিছুই হয়নি। নিজের আগ্রহ না-থাকলে শুধু সরকারি ফতোয়া দিয়ে কি এ কাজ হয়?”
তা হলে কি উদ্যোগের এখানেই সমাধি?
স্বাস্থ্য দফতরের ক্যানসার বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহ-অধিকর্তা গঙ্গাধর মহাপাত্র বলেন, “আগে কী হয়েছিল জানি না। তবে প্রকল্পটি আবার চালু করার কথা চলছে। এ বার শুধু ছ’টা নয়, সব জেলায়। টাকা বরাদ্দের ব্যাপারও থাকছে না। কর্মীদের অনুপ্রাণিত করে কাজ আদায় করতে হবে।”
কিন্তু সেই ‘অনুপ্রেরণা’ কারা কী ভাবে জোগাবেন? আর ছ’টা জেলা নিয়েই যেখানে সরকার এমন হাবুডুবু, সেখানে বিস্তারিত পরিকল্পনা ছাড়া রাজ্য জুড়ে এমন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প সফলই বা হবে কী ভাবে?
স্বাস্থ্য-কর্তারা নিরুত্তর। |
|
|
|
|
|