|
|
|
|
মমতা দেখুন: এন আর এস |
প্রকল্পে গতি আনতে ভরসা
মুখ্যমন্ত্রী, অপেক্ষায় সবাই
সর্বাণী আচার্য • কলকাতা |
|
|
কোথাও অর্থের সঙ্কট। কোথাও কাজে ঢিলেমি। কোথাও আবার পরিকল্পনায় অদল-বদল। এ সবের মধ্যেই পথ হারিয়েছে কাজের গতি। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে একাধিক প্রকল্প চলছে ধীর গতিতে। এই গতিহীনতা থেকে মুক্তি পেতে হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মীদের অধিকাংশের কাছেই ‘মুশকিল আসান’ রাজ্যের নতুন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁরা চাইছেন, ‘হঠাৎ সফরে’ এক বার যদি তাঁদের হাসপাতালেও এসে পড়েন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তা হলে হয়তো গতি পাবে থমকে যাওয়া কাজও।
এরই মধ্যে আবার সুপারের ইস্তফা দেওয়ার ঘটনাকে ঘিরে বেড়েছে জটিলতা। এক রোগিণীর মৃত্যুর পরে তৃণমূলের এক কাউন্সিলর ও তাঁর সঙ্গীরা সুপারকে গালিগালাজ ও হেনস্থা করেছেন এই অভিযোগে বুধবার ইস্তফা দেন সুপার লক্ষ্মীকান্ত ঘোষ। ওই কাউন্সিলরের অবশ্য দাবি, তিনি বা তাঁর সঙ্গীরা নন, সুপারকে হেনস্থা করেছেন অন্য রোগীর পরিজনেরা।
যে সব প্রকল্প থমকে রয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে সেন্ট্রাল ওটি কমপ্লেক্স। হাসপাতালের অনেক আশার প্রকল্প। দিল্লির বিভিন্ন আধুনিক হাসপাতাল ঘুরে দেখে তৈরি হয়েছিল প্রকল্পের খসড়া। ৭টি ওটি, সার্জিক্যাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট, সেন্ট্রাল অ্যানাস্থেটিক মনিটরিং সিস্টেম সমস্তই থাকবে সেখানে। কিন্তু যে ভবনটিতে ওটি কমপ্লেক্স তৈরি হওয়ার কথা, তা একটি হেরিটেজ বিল্ডিং। ফলে প্রথমে সেই নিয়ে দীর্ঘ টানাপোড়েনের পরে শুরু হয় কাজ। কিন্তু হাসপাতাল সূত্রের খবর, গত ৩-৪ মাস ধরে কাজ চলছে একেবারে ঢিমেতালে। বেড়ে গিয়েছে প্রকল্পের খরচও। হতাশায় ভুগতে শুরু করেছেন সার্জারি থেকে ইউরোলজি, সমস্ত বিভাগের চিকিৎসকেরাই। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক, ইএনটি বিভাগের এক চিকিৎসকের কথায়, “জায়গাটা নষ্ট হচ্ছিল। কার্যত সমাজবিরোধীদের আড্ডা হয়ে উঠেছিল। ওই ভবনে একটি মিউজিয়ামও তৈরি হওয়ার কথা। এত কাঠখড় পুড়িয়ে যা-ও বা কাজ শুরু করা গেল, এখন আবার টাকার অভাবে কাজের গতি কমে গিয়েছে।”
হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বিভাগে লিনিয়র অ্যাক্সিলরেটর যন্ত্র বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল গত বাম সরকারের আমলেই। সুস্থ কোষ বাঁচিয়ে রেখে ক্যানসার আক্রান্ত কোষগুলি আরও নিপুণ ভাবে নষ্ট করা যাবে এই যন্ত্রের সাহায্যে। যা হবে বেসরকারি ক্ষেত্রের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশেরও কম খরচে। কিন্তু যন্ত্র কেনা দূরস্থান। বাড়ির ভিতটুকুই কেবল তৈরি হয়ে পড়ে। কাজ বন্ধ মাস ছ’য়েক। বিভাগীয় প্রধান সুবীর গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, “যে ভাবে শামুকের গতিতে কাজ হচ্ছে, তাতে হয়তো আমার চাকরি জীবনে আর এ কাজ শেষ হবে না। এখন নতুন সরকারের কাছে আশা, সদর্থক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে বিবেচনা করে কাজটি ত্বরান্বিত করতে উদ্যোগী হবেন তাঁরা।”
রোগীর পরিজনদের থাকার জন্য বাড়ি তৈরির কথা ছিল হাসপাতালের পুকুরপাড়ে। শিলান্যাসও করেছিলেন পূর্বতন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সূর্যকান্ত মিশ্র। গাঁথা হয়নি একটি ইটও।
হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের চিকিৎসক অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলাতেও হতাশা স্পষ্ট। বললেন, “অর্থোপেডিকে ২৪ ঘণ্টা ইমার্জেন্সি ওটি চালানো খুবই দরকার। দীর্ঘদিন প্রস্তাব দিয়েছি। কিছু হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী যে ভাবে বিভিন্ন হাসপাতাল পরিদর্শন করছেন, তা রোগীদের ভালর জন্যই। আশা করব, আমাদের হাসপাতালেও যে সব প্রকল্প ধীরে চলছে, সে সব সুনির্দিষ্ট সময়েই শেষ হবে।”
হাসপাতালের মর্গ নিয়ে এলাকার মানুষের ক্ষোভের অন্ত নেই। মর্গ থেকে দিনের পর দিন দূষণ ছড়াচ্ছে। রাস্তা দিয়ে দুর্গন্ধে হাঁটা দায়। বহুদিনের প্রকল্প হওয়া সত্ত্বেও ঝাঁ-চকচকে আধুনিক মর্গ তৈরির কাজ আটকে একেবারে প্রাথমিক পর্যায়েই। হাসপাতালের পূর্ত বিভাগের দাবি, সরকারি পুরনো বাড়ি ভাঙার নিয়ম মানতে গিয়েই বিস্তর সময় লেগে গিয়েছে। তার উপরে বদল হয়েছে পরিকল্পনাতেও। ফলে নকশা তৈরি থেকে বাজেট পেশ, সবই করতে হয়েছে নতুন করে। সব বাধা কাটলে মাসখানেকের মধ্যেই কাজ শুরু হবে বলে আশা।
মুখ্যমন্ত্রী পরিদর্শনে এলে কি কাজের গতি ত্বরান্বিত হবে বলে মনে হয়? এ নিয়ে সরাসরি কোনও মন্তব্য করতে চায়নি সিপিএম প্রভাবিত চিকিৎসক সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ্ সার্ভিস ডক্টরস্। সংগঠনের এনআরএস ব্রাঞ্চ সম্পাদক শ্রীজিৎ ঘোষের কথায়, “কাজ চলছে। আশা করি, কাজের গতি ভবিষ্যতে আরও বাড়বে। তবে, তৃণমূল প্রভাবিত সংগঠন প্রোগ্রেসিভ সার্ভিস ডক্টরস্ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নিমাই নাথের সাফ কথা, “হাসপাতালে কাজের গতি নিয়ে আমরা একেবারেই সন্তুষ্ট নই। যত রোগী মারা যাচ্ছেন, কাজগুলি শেষ হয়ে গেলে তাঁদের তো সেই পরিষেবা দিয়ে আমরা বাঁচাতে পারতাম। মুখ্যমন্ত্রীর পরিদর্শনের প্রভাব যে কতটা সদর্থক, তা জেলার হাসপাতালগুলিতেও বোঝা যাচ্ছে। সেখানে অনেকেই নির্দিষ্ট সময়ে আসতে শুরু করেছেন। যদি আচমকা মুখ্যমন্ত্রী চলে আসেন, এই ভয়ে।” ‘মমতা-টনিকে’ কাজ হবে, সেই আশাতেই এখন রয়েছে এনআরএস। |
|
|
|
|
|