|
|
|
|
জঙ্গলমহল ‘শান্তির মহল’ হবে, উদ্যোগী মুখ্যমন্ত্রী |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
জঙ্গলমহলকে তিনি ‘শান্তির মহল’ করতে চান বলে ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাঁওতাল বিদ্রোহের স্মরণে বৃহস্পতিবার সিধো-কানহো ডহরে ‘হুল দিবসে’র অনুষ্ঠানে জঙ্গলমহলের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তাঁর সরকার কী কী করতে চলেছে, সেই পরিকল্পনা জানাতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “জঙ্গলমহল হবে শান্তির মহল।”
জঙ্গলমহলে অর্থনৈতিক অনুন্নয়নই যে সেখানে সাম্প্রতিক অস্থিরতার প্রধান কারণ, তা মমতা আগেও বলেছেন। সেই জঙ্গলমহলেরই বাসিন্দা ১৬ জন ভূমিহীন কৃষককে এ দিনের অনুষ্ঠানে জমির পাট্টা দিয়ে মমতা বলেন, “কয়েক জনকে যে পাট্টা দেওয়া হল, তা প্রতীকী। আমি নিজে জঙ্গলমহল গিয়ে সেখানকার অবহেলিত, ভূমিহীনদের আরও বেশি করে জমির পাট্টা দেব।” অর্থনৈতিক, সামজিক উন্নয়নেই যে জঙ্গলমহলে শান্তি ফিরবে, তা বোঝাতে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা, সেখানকার ৯০০ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘দ্বিতীয় ভাষা’ হিসাবে সাঁওতালি পড়ানো হবে। তিনি বলেন, “আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, জঙ্গলমহলের অন্তুর্ভুক্ত মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়ায় ৯০০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বেছে নেওয়া হয়েছে। এখানে অলচিকিতে সাঁওতালি ভাষা পড়ানো হবে।” এ জন্য প্রতিটি বিদ্যালয় পিছু ২ জন করে সাঁওতালি ভাষার শিক্ষক নিয়োগ হবে। মমতার ঘোষণা, “২০১১-১২ সালের মধ্যে এই কর্মসূচি রূপায়িত হবে। এ জন্য অলচিকি অক্ষরে বইও ছাত্রদের দেওয়া হবে।”
অনুষ্ঠানে বিগত বামফ্রন্ট সরকারের নাম না-করেও কড়া সমালোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। সাঁওতাল বা আদিবাসীদের উন্নয়নে এত দিন যে ‘কার্যকর’ কোনও পদক্ষেপ সরকার করেনি, তা বোঝাতে গিয়ে মমতা বলেন, “কোনও রকমে একটা স্তম্ভ করে বছরে এক বার মালা দিয়ে চলে গেলাম, তা ঠিক নয়!” জঙ্গলমহলে যে ‘হিংসার রাজনীতি’ হয়েছে, সেই প্রসঙ্গ টেনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বন্দুক দিয়ে জঙ্গল বাঁচানো যায় না। জঙ্গলবাসী ভাইবোনেরা ভালবাসা দিয়েই জঙ্গলকে রক্ষা করবে।” অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদীর উপস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী জানান, জঙ্গলের অধিকার অরণ্যের বাসিন্দাদের হাতেই দেওয়ার দাবি তাঁরা কেন্দ্রের কাছে পেশ করেছেন। মমতার বক্তব্য, “কেন্দুপাতা বিক্রি করে রোজগার করেন জঙ্গলবাসীরা। অল্প দামে তারা সেই পাতা বিক্রি করতে বাধ্য হয়। আমরা ঠিক করেছি, সরকার বেশি দাম দিয়ে সেই পাতা কিনে নেবে জঙ্গলবাসীদের কাছ থেকে। তার পরে সরকার তা বিক্রি করবে।”
সাঁওতাল বিদ্রোহের দুই নায়ক সিধো ও কানহোর বংশোদ্ভূতদের সংবর্ধনাও দেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই অনুষ্ঠানেই উত্তর ২৪ পরগনার আমডাঙার আদিবাসী কয়েক জন ছাত্রছাত্রীকেও পড়াশোনা করার জন্য বৃত্তি দেওয়া হয়। মমতা বলেন, “১৮৫৫ সালের সাঁওতাল বিদ্রোহ আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। কিন্তু এত দিন পর্যন্ত সিধো-কানহোর অবদান রক্ষার জন্য ভাল করে কিছু করা হয়নি।” মুখ্যমন্ত্রী এ দিন ঘোষণা করেন, সিধো-কানহোকে নিয়ে একটি বিশেষ অ্যাকাডেমি গড়া হবে। তাঁর কথায়, ‘‘সিপাহি বিদ্রোহকে যেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়, সিধো-কানহোর নেতৃত্বে সাঁওতাল বিদ্রোহ নিয়েও আরও চর্চা ও গবেষণা দরকার। সেই কাজই করবে অ্যাকাডেমি।” |
|
|
|
|
|