|
|
|
|
কাজ না হলে জমি ফেরানোর নির্দেশ |
সব প্রকল্প খতিয়ে দেখে ত্রুটি শোধরাচ্ছেন পার্থ |
জয়ন্ত ঘোষাল • নয়াদিল্লি |
রাজ্যের কোনও চলতি শিল্পপ্রকল্প বন্ধ করে দিতে চান না, কিন্তু প্রতিটি প্রকল্প খতিয়ে দেখতে চান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে গত এক মাস ধরে প্রত্যেক শিল্পপতির সঙ্গে আলাদা আলাদা ভাবে বৈঠক করে প্রকল্পগুলি পর্যালোচনা করেছেন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। প্রকল্পগুলির ত্রুটিবিচ্যুতি খুঁজে বার করে তা সংশোধন করার নির্দেশ দিয়েছেন। বেশ কিছু ক্ষেত্রে শিল্পসংস্থাগুলির সঙ্গে পুরনো চুক্তি নতুন করে মূল্যায়ন করার কাজও এগিয়ে গিয়েছে।
যেমন অন্ডালের দুর্গাপুর এরোট্রোপলিস প্রকল্প। এই প্রকল্পের কাজ যখন পুরোদমে এগোচ্ছে, ঠিক তখনই ২ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে ১৪৪ একর জমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে বিতর্ক দানা বাঁধে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অসন্তোষ দেখে শিল্পমন্ত্রী সংস্থাটিকে জানিয়ে দেন, ওই ১৪৪ একর জমি ফিরিয়ে দিতে হবে। এই প্রকল্পের ২৬ শতাংশ অংশীদার চাঙ্গি আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থা। এই সংস্থার সিইও-সহ প্রতিনিধিরা কলকাতা শিল্পমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। ২৮ জুন দুর্গাপুর এরোট্রোপলিসের পরিচালন পর্ষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ওই জমি চাষিদের ফিরিয়ে দেওয়া হবে। এই সিদ্ধান্তের কথা আজ রাজ্য সরকারকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংস্থার প্রধান কর্ণধার পার্থ ঘোষ।
 সমস্যা তৈরি হয়েছে প্রসূন মুখোপাধ্যায়ের নয়াচর প্রকল্প নিয়েও। বিধানসভা ভোটের আগেই এই কেমিক্যাল হাব প্রকল্প নিয়ে তাঁর সঙ্গে রাজ্য সরকারের বিবাদ হয়। আনুষ্ঠানিক ভাবে বিবৃতি দিয়ে চুক্তি বাতিল করে দেয় আগের বামফ্রন্ট সরকার। এই পরিস্থিতিতে নতুন শিল্পমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন প্রসূনবাবু। রাজ্য সরকারের তরফে তাঁকে বলা হয়েছে, নয়াচরে কেমিক্যাল হাব হবে না। পরিবেশ-বন্ধু শিল্প করতে হবে। ওখানে ইকো ট্যুরিজম হবে। নয়াচরে বিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে তোলার প্রস্তাবও প্রসূনবাবু দিয়েছেন। এই তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ার জন্য রাজ্য সরকার প্রসূনবাবুর সঙ্গে নতুন চুক্তি করতে রাজি।
সমস্যায় পড়েছে উত্তরবঙ্গের কাওয়াখালি প্রকল্পও। পার্থবাবু জানিয়েছেন, যে হেতু জমি নিয়েও এই প্রকল্প এখনও হয়নি, তাই জমি ফেরত দিতে হবে। এই প্রকল্পটি মূলত ইউনিটেকের। প্রসূনবাবু সেখানে সংখ্যালঘু অংশীদার। এর আগে ইউনিটেকের অংশীদার ছিল বেনি সান্তোসার সালিম গোষ্ঠী। কিন্তু রাজনৈতিক বিতর্কের জেরে এ দেশে বিনিয়োগের ব্যাপারে উৎসাহ হারিয়েছেন সান্তোসা। রাজ্যের বিভিন্ন প্রকল্পে সালিমদের অংশ প্রসূনবাবুর ইউনিভার্সাল সাকসেস কিনে নিয়েছে। কাওয়াখালি প্রকল্পের জটিলতা কাটানোর চেষ্টা করছেন প্রসূনবাবু।
বিতর্ক চলছে শালবনিতে জিন্দলদের ইস্পাত প্রকল্পের জমি নিয়েও। এ ব্যাপারে তাদের চিঠি দিয়েছে রাজ্য
সরকার। হেমন্ত কানোরিয়া যে সব জমি অধিগ্রহণ করেছেন সেখানেও শেয়ার বিক্রি নিয়ে কিছু বিতর্ক দানা বেধেছে। দক্ষিণেশ্বরে দেশলাই কারখানা করার জন্য জমি নিয়েছিল আইটিসি গোষ্ঠী। সেই প্রকল্প লাভজনক হবে না বুঝতে পেরে সেই জমিতে এখন তারা আবাসন গড়ার কথা ভাবছে। কিন্তু পার্থবাবু স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছেন, যে উদ্দেশ্যে জমি নেওয়া হয়েছে, তা করা না-হলে জমি ফেরত দিতে হবে। অন্য কোনও প্রকল্প করতে গেলে সরকারকে আগাম জানিয়ে নতুন করে চুক্তি করতে হবে।
এই ভাবেই প্রতিটি প্রকল্প ধরে ধরে এগোচ্ছেন পার্থবাবু। আর সে ক্ষেত্রে পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালসই হোক বা উজ্জ্বল উপাধ্যায়ের কয়লা ও তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প রাজ্য সরকার কোনও রাজনৈতিক ধারণা আঁকড়ে থাকছে না। পার্থবাবু বলেন, “আমরা কোনও শিল্পপতির বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রোশ রাখব না। আবার কাউকে বাড়তি সাহায্যও করব না। কোনও শিল্পপতিকে রাজ্য থেকে সরিয়ে দেওয়া আমাদের উদ্দেশ্য নয়।
প্রকল্প না-করে জমি নিয়ে রেখে দেওয়া চলবে না।
আমরা সময়সীমা বেঁধে দেব। তার ভিত্তিতেই চুক্তি হবে। প্রকল্প না-হলে ওই সময়সীমার পর জমি সরকার
ফেরত নিয়ে নেবে।”
ইতিমধ্যেই বেশ কিছু নতুন প্রকল্পের প্রস্তাব রাজ্য সরকারের কাছে এসে পৌঁছেছে। ওয়াই কে মোদী কয়লা নির্ভর মিথেন প্রকল্পে ১০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে চান। সঞ্জয় সুরেখার ম্যাট্রিকস সংস্থাটি ৫০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। বলাগড়ে সঞ্জীব গোয়েন্কা নতুন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র করতে চান।
কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশে রাজ্যে এখন জমি অধিগ্রহণ বন্ধ। যদিও পার্থবাবুর কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী শিল্প চান। অদূর ভবিষ্যতে রাজ্যে জমি অধিগ্রহণও শুরু হবে। তবে রাজ্য সরকার জমির দালালি করবে না। চাষিদের থেকে জোর করে জমি কাড়বে না। ব্যবসায়ীরা সরাসরি চাষিদের কাছ থেকে জমি কিনুন। যদি সমস্যা হয় তা হলে সরকার সাহায্য করবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যাতে কোনও অবনতি না হয়, তা দেখবে।”
পার্থবাবুর সঙ্গে শিল্পপতিদের বৈঠক-পর্ব শেষ হলে আসরে নামবেন মুখ্যমন্ত্রী নিজে। তার আগে আপাতত পুরনো সব প্রকল্প খতিয়ে দেখতে ব্যস্ত শিল্পমন্ত্রী। যা নিয়ে তাঁর সরস মন্তব্য, “আমি মৌ-দাদা হতে চাই না! কাজ-দিদির কাজের ভাই হতে চাই।” |
|
|
 |
|
|