ছুটি বিক্রি, বিমার টাকা তছরুপের চক্র কৃষি বিভাগে
নিয়োগ কেলেঙ্কারি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে জেরবার হচ্ছে রাজ্যের কৃষি দফতর। এ বার সেখানে ধরা পড়ল নানান ফন্দিফিকিরে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার দুষ্ট চক্র। সেই চক্র একাধিক বার পাইয়ে দিচ্ছে মৃত কর্মীর গ্রুপ ইনসিওরেন্সের টাকা। আবার ছুটি বিক্রির টাকাও বেআইনি ভাবে তুলে নিচ্ছে ওই চক্রের লোকজন।
কৃষি দফতরের বিভিন্ন খামারে হাজার সাতেক কৃষিশ্রমিক কাজ করেন। তাঁদের একটি অংশকে কাজে লাগিয়েই ওই দুষ্ট চক্র রাজ্য সরকারের কোষাগার থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ। সম্প্রতি বীরভূমের রাজনগরে সিসল ফার্মে ওই চক্রের দুষ্কর্ম ধরা পড়েছে। সেখানে ছ’জন মৃত কর্মীর পোষ্যদের দ্বিতীয় বার গ্রুপ ইনসিওরেন্সের টাকা পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে এক মৃত কর্মীর ছুটি বিক্রির টাকাও বেআইনি ভাবে তুলে নেওয়ার ঘটনাও প্রকাশ্যে এসে গিয়েছে।
কৃষি দফতরের কর্মীদের বক্তব্য, রাজনগরের রেমি সিসল ফার্মের এই সব ঘটনা আসলে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা আর্থিক দুর্নীতিরই সামান্য অংশ! দফতরের ১৫৬টি খামারের হিসেবপত্র পরীক্ষা করা হলে আরও বড় তছরুপের হদিস মিলবে। তৃণমূল কর্মী সংগঠন ইউনাইটেড রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে সব ক’টি কৃষি খামারে অডিটের মাধ্যমে ওই তছরুপের চক্রে জড়িত আমলা ও কর্মীদের শাস্তি দাবি করেছে।
কী ভাবে সরকারি টাকা হাতিয়ে নেয় ওই দুষ্ট চক্র?
কৃষি দফতরের এক অফিসার জানান, কোনও খামারের কোনও মৃত কৃষিশ্রমিকদের পোষ্যকে বেছে নেয় ওই চক্রের লোকজন। তাদের দিয়ে দরখাস্ত লিখিয়ে নেওয়া হয়। তাতে বলা হয়, মৃত শ্রমিকের বিমার টাকা এখনও মেলেনি। অবিলম্বে যেন তা মিটিয়ে দেওয়া হয়। সেই দরখাস্ত পাওয়ার পরে দফতরেরই এক শ্রেণির কর্মীর যোগসাজশে দ্রুত সেই টাকা মঞ্জুর হয়ে যায়। ‘কমিশন’ হিসেবে সেই টাকার একটি অংশ কেটে নিয়ে ভাগাভাগি করে নেয় চক্রের চাঁইরা।
যেমন হয়েছে পানমণি হেমব্রম নামে মৃত এক কৃষিশ্রমিকের বেলায়। ১৯৯৬ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর তাঁর ছেলে বিজিয়ন হেমব্রমকে এক বার ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। তাঁকেই ফের ১০ হাজার ৩৫১ টাকা দেওয়া হয়েছে ২০১১ সালের মার্চে। একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে লখিরাম মুর্মু, মারি হাঁসদা, মটক সোরেন, পাতা টুডু, বাবুরাম মুর্মুর মতো বেশ কয়েক জন কৃষিশ্রমিকের বেলাতেও।
এ বছর জুনের গোড়াতেই এই আর্থিক নয়ছয়ের বিষয়টি কৃষি দফতরের অতিরিক্ত অধিকর্তার নজরে আনা হয়। তিনি বীরভূমের সহকারী কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন)-কে এ ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে বলেন।
দু’বার টাকা দেওয়ার ঘটনাকে দফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মী ‘অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি’ বলে স্বীকার করেছেন। কিন্তু এখনও তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি।
ইউনাইটেড রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “দোষী কর্মী-চক্রকে আড়াল করতেই পুরো ব্যাপারটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে জেলা কৃষি দফতর। দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়ার জন্য আমরা মন্ত্রীর কাছে দাবি জানিয়েছি।’’
রাজ্য কৃষি অধিকর্তা সার্থক বর্মা বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য স্পেশ্যাল অডিট টিম রাজনগর যাচ্ছে। তাদের রিপোর্ট পাওয়ার পরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
Previous Story Rajya Next Story


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.