সমবায় ব্যাঙ্ক থেকেও বেতন রাজ্য কর্মীদের
শুধু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের মাধ্যমে সরকারি কর্মীদের বেতন দেওয়া চালু হয়েছিল বাম সরকারের আমলে। আরও এক ধাপ এগিয়ে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট সরকার নির্দেশ দিল, এ বার সমবায় ব্যাঙ্ক থেকেও বেতন তুলতে পারবেন কর্মীরা। রাজ্যের অর্থ দফতর বুধবার এই নির্দেশ জারি করেছে। বৃহস্পতিবার তা পৌঁছে গিয়েছে সব সমবায় ব্যাঙ্কে।
এই সিদ্ধান্তের ফলে সরকারি কর্মীরা উপকৃত তো হলেনই। সেই সঙ্গে হাঁপ ছেড়ে বাঁচল সমবায় ব্যাঙ্কগুলিও। মহাকরণ সূত্রের খবর, দফতরের দায়িত্ব নিয়ে অফিসারদের সঙ্গে আলোচনা করে সমবায়মন্ত্রী হায়দর আজিজ সফি জানতে পারেন, বিভিন্ন সমবায় ব্যাঙ্ক থেকে বহু শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী বেতন তোলেন। সরকারি তথ্য বলছে, রাজ্যের ১৩,৫০৫টি প্রাথমিক স্কুলের ৪৪,৭৯৪ জন শিক্ষক এবং ৬৯৫টি হাইস্কুল, হাই মাদ্রাসা ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের ১২,০৮০ জন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর বেতন-অ্যাকাউন্ট আছে কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক এবং তার জেলা শাখাগুলিতে।
সেই তথ্য হাতে পেয়েই সমবায়মন্ত্রী আলোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। তাঁর পরামর্শমতো পরে তিনি চিঠি লেখেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকে। যে-হেতু বহু শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী বেতন তোলেন সমবায় ব্যাঙ্ক থেকে, সেই কারণে সফি চিঠি দেন স্কুলশিক্ষা মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যকেও। সমবায়মন্ত্রীর আর্জি ছিল, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের পাশাপাশি সমবায় ব্যাঙ্ক থেকেও সরকারি কর্মীদের বেতন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক। সফি বৃহস্পতিবার মহাকরণে বলেন, “এতে বহু মানুষ উপকৃত হবেন। সমবায় ব্যাঙ্কগুলোও ক্ষতির মুখে পড়বে না।”
কী ভাবে লোকসানের মুখোমুখি হত সমবায় ব্যাঙ্কগুলো? অর্থমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে সফি বলেছেন, সমবায় ব্যাঙ্কগুলিতে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের বেতন-অ্যাকাউন্ট থাকায় তার বিনিময়ে বিভিন্ন সময়ে তাঁদের ঋণ দেওয়া হয়েছে। সেই ঋণের পরিমাণ প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। সমবায়কর্তাদের বক্তব্য, অন্য ব্যাঙ্ক থেকে বেতন তোলা গেলে ঋণী সরকারি কর্মীরা আর সমবায় ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট চালু রাখবেন না। তা হলে ওই ঋণের টাকা ফেরত না-পাওয়ার আশঙ্কা থেকে যাবে। একেই তো অধিকাংশ সমবায় ব্যাঙ্ক রুগ্ণ, তার উপরে ঋণের টাকা আদায় না-হলে সেগুলির অবস্থা আরও খারাপ হয়ে পড়বে এবং এক সময় বন্ধ হয়ে যাবে। অর্থমন্ত্রী এ কথা চিন্তা করেই সফির আর্জিতে সায় দিয়েছেন বলে সমবায়কর্তাদের অভিমত। ২০০৯-এর ২৬ অগস্ট অর্থ দফতরের নির্দেশিকায় বলা হয়েছিল, ২৮টি রাষ্ট্রায়ত্ত বাঙ্ক থেকে সরকারি কর্মীরা বেতন তুলতে পারবেন। কোন কোন ব্যাঙ্কে ওই সুবিধা পাওয়া যাবে, তা-ও নির্দিষ্ট করে দিয়েছিল রাজ্য সরকার। গত ২৯ জুন অর্থসচিব সি এম বাচাওয়াতের স্বাক্ষরিত নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, সরকারি কর্মীরা রাজ্য সমবায় ব্যাঙ্ক, কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক, বঙ্গীয় গ্রামীণ বিকাশ ব্যাঙ্ক, পশ্চিমবঙ্গ গ্রামীণ ব্যাঙ্ক, উত্তরবঙ্গ ক্ষেত্রীয় গ্রামীণ ব্যাঙ্ক ও সব নগর সমবায় ব্যাঙ্ক থেকে বেতন তুলতে পারবেন। রাজ্যের নতুন সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্গীয় গ্রামীণ বিকাশ ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান রানা মজুমদার জানান, প্রায় ৬০ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর বেতন-অ্যাকাউন্ট আছে বিভিন্ন সমবায় ব্যাঙ্কে। তাঁরা বিভিন্ন সময়ে ঋণ নিয়েছেন। আগের সরকারের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে ওই টাকা ফেরত পাওয়ার ব্যাপারে সংশয় তৈরি হয়েছিল। “বর্তমান সরকারের সিদ্ধান্ত সেই সংশয় দূর করল,” মন্তব্য করেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গ গ্রামীণ ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান সব্যসাচী দাস বলেন, “আমাদের ২১৬টি শাখা থেকে প্রায় ৮০ হাজার শিক্ষকের বেতন দেওয়া হয়। অনাদায়ি ঋণও রয়েছে কয়েক কোটি টাকা। নতুন সিদ্ধান্তে আমরা খুশি।” খুশি ওই ব্যাঙ্কের কর্মচারী সংগঠনও। বঙ্গীয় গ্রামীণ বিকাশ ব্যাঙ্ক অফিসার্স কংগ্রেসের সভাপতি হবিবুর রহমান ও পশ্চিমবঙ্গ গ্রামীণ ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রশান্ত মজুমদারের কথায়, “শিক্ষকদের বেতন দেওয়া বন্ধ করে দিলে আমাদের ব্যাঙ্কগুলি রুগ্ণ হয়ে পড়ত। তাই আমাদের কর্মীরা দুশ্চিন্তায় ছিলেন। সেই দুশ্চিন্তা কেটে গেল।”
Previous Story Rajya Next Story


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.