|
|
|
|
বর্ষার চরিত্র বদল, শুখা জেলায় অতিবর্ষণ |
দেবদূত ঘোষঠাকুর • কলকাতা |
‘পরিবর্তন’-এর রাজ্যে বদলের খেল্ দেখাচ্ছে আবহাওয়াও। বিশেষ করে বর্ষা। দু’ভাবে চরিত্র বদলের সুস্পষ্ট প্রমাণ রেখেছে সে।
• সেচ ও পানীয় জলের জন্য রাজ্যের যে-সব জেলাকে প্রায় সারা বছরই আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়,
জুনের বৃষ্টি তাদের ‘শুখা’ বদনাম ঘুচিয়ে দিয়েছে।
• জুনে বৃষ্টির বিচারে দক্ষিণবঙ্গ বেমালুম হারিয়ে দিয়েছে উত্তরবঙ্গকে।
বর্ষার মরসুমে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া শেষ কবে ৫০০ মিলিমিটার বৃষ্টি পেয়েছে, সেই তথ্য খুঁজে বার করার জন্য আবহবিদেরা রেকর্ড বই ঘাঁটছেন। অনাবৃষ্টির জন্য গত বছর যে-সব জেলায় খরা ঘোষণা করতে হয়েছিল, সেখানে এ বার জুনেই জলাধার টইটম্বুর। মজে যাওয়া নদী, খালবিল উপচে বন্যার উপক্রম।
বর্ষা এ বার এক সপ্তাহ দেরিতে ঢুকেছে দক্ষিণবঙ্গে। আর প্রথম থেকেই তার ব্যবহার কিছুটা অস্বাভাবিক। বস্তুত উল্টো পথে প্রবেশ দিয়েই বর্ষার চরিত্র পরিবর্তনের সূচনা। প্রতি বছরই বর্ষা ঢোকে উত্তরবঙ্গ দিয়ে। এ বার বঙ্গোপসাগর দিয়ে গাঙ্গেয় বঙ্গে এসেছে সে। আর ঢোকার পর থেকেই সে ব্যাট করে চলেছে টি-টোয়েন্টির মেজাজে। আসতে এক সপ্তাহ দেরি করে ফেলায় বর্ষণে যে-ঘাটতি হয়েছিল, পরবর্তী ১৫ দিনে সেটা সুদে-আসলে পুষিয়ে দিয়েছে বর্ষা। জুনে বৃষ্টির নিরিখে উত্তরবঙ্গকে এ বার হারিয়ে দিয়েছে দক্ষিণবঙ্গ।
দক্ষিণ কী ভাবে হারাল উত্তরকে? |
|
ছবি: শুভ্র মিত্র |
আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, গত ১৫ জুন বঙ্গোপসাগর থেকে স্থলভূমিতে ঢোকা অতি গভীর নিম্নচাপটি তিন দিন ধরে শক্তি না-কমিয়ে ছিল বীরভূম-বাঁকুড়ার উপরে। তার পরেও আদৌ দুর্বল না-হয়ে সে অতি ধীরে ঢুকেছে ঝাড়খণ্ডে। তার প্রভাবেই এক সপ্তাহ ধরে বৃষ্টি হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের শুখা জেলাগুলিতে। অন্য জেলাগুলিও তার ভাগ পেয়েছে। এমনকী কলকাতাও। আর ওই প্রবল বৃষ্টির জেরেই উত্তরকে এ বার ছাপিয়ে গিয়েছে দক্ষিণ।
আবহাওয়া দফতরের তথ্য বলছে, দক্ষিণবঙ্গের ‘শুখা’ চার জেলা বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূম ও পশ্চিম মেদিনীপুরে বর্ষা এ বার জুনেই দু’হাত উপুড় করে দিয়েছে। শুধু ওই চার জেলা নয়, দক্ষিণবঙ্গের সব জেলাতেই এই জুনের বৃষ্টি গত ১০-১৫ বছরের রেকর্ডকে ম্লান করে দিয়েছে। জুনের শেষ ১৫ দিনে দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টি হয়েছে ৪২৯ মিলিমিটার। যা এই সময়ের গড় বৃষ্টিপাতের থেকে শতকরা ৭৫ ভাগ বেশি। আবহাওয়া দফতরের রেকর্ড বলছে, ২০০৮ সালের জুনে দক্ষিণবঙ্গে ৪২৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। তবে সে-বার দক্ষিণবঙ্গের সর্বত্র ১৫ দিন ধরে টানা বৃষ্টি হয়নি। কিছু জায়গায় কয়েক দিনের অতিবর্ষণেই বেড়ে গিয়েছিল মোট বৃষ্টির পরিমাণ।
সাধারণ ভাবে উত্তরবঙ্গে বর্ষা ঢোকে ৪ জুন। কিন্তু মৌসুমি বায়ুর যে-অংশটি মায়ানমার হয়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ঢোকে, এ বার সেটি পথে অত্যন্ত দেরি করে ফেলায় নির্দিষ্ট সময়ে উত্তরবঙ্গে বর্ষা ঢোকেনি। দক্ষিণবঙ্গে ১৫ জুন বর্ষা পৌঁছনোর ঠিক আগে উত্তরবঙ্গে ঢোকে সে। কিন্তু তখন সে ছিল দুর্বল। দক্ষিণবঙ্গে অতি গভীর নিম্নচাপের ফলেই উত্তরবঙ্গের বর্ষা সক্রিয় হয়। তবে সেটা ঘটতে জুনের তৃতীয় সপ্তাহ হয়ে যায়। জুনে উত্তরবঙ্গে বৃষ্টির গড় পরিমাণ ৪৮৫ মিলিমিটার। এ বার সেখানে ৪৪১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। যা গড় হিসেবের থেকে নয় শতাংশ কম। তবে দক্ষিণবঙ্গে কয়েক দিন ধরে বৃষ্টি দিয়ে যাওয়া ঘূর্ণাবর্তটি বৃহস্পতিবার অবস্থান করছিল উত্তরবঙ্গের উপরে।
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বৃহস্পতিবার বলেন, “ওই ঘূর্ণাবর্তের জেরে আগামী দু’দিন উত্তরবঙ্গে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হবে। তাতে জুনের ঘাটতি পুষিয়ে যাবে।” ঘূর্ণাবর্তটি দূরে সরে গেলেও সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর জেরে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে এ দিনও বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি চলবে বলে জানান আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা।
|
জুনের বাজিমাত |
|
বৃষ্টির হিসেব মিলিমিটারে জুন মাসে দক্ষিণবঙ্গের গড় বৃষ্টিপাত |
এলাকা |
হওয়ার কথা |
হয়েছে |
|
সাল |
বৃষ্টি |
বাঁকুড়া |
২১৫ |
৫৪৪ |
|
২০০৭ |
২৪৭ |
পুরুলিয়া |
২২২ |
৫২৩ |
|
২০০৮ |
৪২৭ |
পশ্চিম মেদিনীপুর |
২৪৪ |
৪৪৪ |
|
২০০৯ |
৬৯ |
বীরভূম |
২২২ |
৪১১ |
|
২০১০ |
২০০ |
দক্ষিণবঙ্গ (গড়) |
২৪৪ |
৪২৯ |
|
২০১১ |
৪২৯ |
|
দিল্লির মৌসম ভবন এ-পর্যন্ত তাদের শেষ পূর্বাভাসে জানিয়েছে, জুলাইয়ে সারা দেশে বৃষ্টি কমবে। কিন্তু অন্তত এ রাজ্যের ক্ষেত্রে জুলাইয়ের শুরুটা খারাপ হবে না বলেই মনে করছেন আবহবিদেরা। বর্ষার প্রথম ১৫ দিনে অতি গভীর নিম্নচাপ, ঘূর্ণাবর্ত বৃষ্টির তীব্রতা বাড়িয়ে দিয়েছে। উপগ্রহ-চিত্র পর্যবেক্ষণ করে আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, রাজস্থান এবং উত্তর ভারতেও আগামী কয়েক দিন ভাল বৃষ্টি হবে। তবে বৃষ্টির তীব্রতা কিছুটা কমবে দক্ষিণ ও পশ্চিম ভারতে। আবহবিদেরা বলছেন, গত বছর আরব সাগরে ঘনঘন তৈরি হওয়া নিম্নচাপ পূর্ব ভারত থেকে মেঘ টেনে নিয়ে গিয়েছিল। এ বার আরব সাগরের সেই প্রবণতাটা কম। তাই পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতে আর খরার আশঙ্কা দেখছে না মৌসম ভবন। |
|
|
|
|
|