|
|
|
|
কড়া প্রতিক্রিয়া সরকারেরও |
হিংসা-তথ্যে ‘অপলাপ’, মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি সূর্যের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
রাজনৈতিক হিংসায় নিহতের সংখ্যা নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে বিরোধীদের চাপানউতোর আরও এক কদম এগোল। রাজ্য মন্ত্রিসভাকে এই ব্যাপারে ‘ভ্রান্ত তথ্য’ যাঁরা সরবরাহ করছেন, তাঁরা ‘সীমাহীন ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ’ করছেন বলে এ বার খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে লিখিত অভিযোগ জানালেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে তিনি জানিয়েছেন, বুধবার উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গায় নিহত সিপিএম কর্মী জাকির হোসেনকে ধরে নির্বাচনোত্তর হিংসায় এ পর্যন্ত ২০ জন বাম কর্মী-সমর্থক খুন হয়েছেন। ‘দলমত নির্বিশেষে’ অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দাবি জানিয়েছেন বিরোধী দলনেতা।
সূর্যবাবুর অভিযোগের কড়া জবাব দিয়েছেন পরিষদীয় মন্ত্রী তথা বিধানসভায় সরকার পক্ষের দলনেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও। তাঁর বক্তব্য, “আবার বলছি, বিধানসভায় যা তথ্য দিয়েছি, তা প্রশাসনিক রিপোর্টের ভিত্তিতেই রাজনৈতিক হিংসার তথ্য। বিরোধী দলনেতা রাজনৈতিক হিংসা বলতে কী বোঝেন, সেটা বোঝা যাচ্ছে না! সংখ্যা নিয়ে অহেতুক দাবি না-করে ওঁর উচিত রক্তপাত বন্ধ করতে সক্রিয় হওয়া। যে কাজটা আমরা করতে চাইছি!”বিধানসভার সদ্যসমাপ্ত অধিবেশনে মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রী মমতার তরফে বিবৃতি পড়ে পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থবাবু জানিয়েছিলেন, ভোটের ফলপ্রকাশের পর থেকে রাজ্যে রাজনৈতিক হিংসায় মোট ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে সিপিএমের কর্মী-সমর্থক ৮ জন। বাকি ১০ জনই শাসক তৃণমূল ও কংগ্রেস এবং ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার। সরকার ওই তথ্য দেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আলিমুদ্দিন থেকে পাল্টা তালিকা প্রকাশ করে সিপিএম জানিয়েছিল, ১৩ মে ফলপ্রকাশের দিন থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত ১৯ জন বাম কর্মী-সমর্থক খুন হয়েছেন। অর্থাৎ বামেদের নিহতের সংখ্যাই সরকারি পরিসংখ্যানে মোট নিহতের চেয়ে বেশি! সিপিএমের ওই পরিসংখ্যান নিয়ে সরকারের তরফে আবার পাল্টা প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। এ বার সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সবিস্তার তালিকা-সহ লিখিত অভিযোগ পাঠিয়ে ‘রাজনৈতিক হিংসা নিয়ে রাজনীতি’র লড়াইয়ে আরও এক ধাপ এগোল প্রধান বিরোধী দল।
গত কয়েক দিনে সিপিএম এবং অন্যান্য বাম শরিক দলের নেতা, কর্মী-সমর্থকদের উপরে হামলার ঘটনা উল্লেখ করে বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠানো চিঠিতে বিরোধী দলনেতা জানিয়েছেন, নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর থেকে এখনও পর্যন্ত নিহত বাম কর্মী-সমর্থকদের সংখ্যা ২০-তে পৌঁছেছে। চিঠিতে সূর্যবাবু বলেছেন, ‘বিধানসভায় দৃষ্টি আকর্ষণী প্রস্তাবের জবাবের সময় আপনার তরফে পরিষদীয় মন্ত্রী মহাশয় সিপিএম এবং বামফ্রন্টের অন্যান্য শরিক দলের নিহত কর্মী ও সমর্থকদের যে সংখ্যা পেশ করেছেন, তা সত্যের চরম অপলাপ মাত্র! এটা মর্মান্তিক, গণতন্ত্রের পক্ষে লজ্জাজনক! রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী-সহ মন্ত্রিসভার সদস্যদের যাঁরা এ ধরনের ভ্রান্ত তথ্য সরবরাহ করছেন, তাঁদের অপরাধ সীমাহীন ও শাস্তিযোগ্য’। আলিমুদ্দিন ১৯ জন নিহতের নাম-ঠিকানার তালিকা পেশ করার পরে সরকারের তরফে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছিল, প্রশাসনিক রিপোর্টের ভিত্তিতেই বিধানসভায় তথ্য দেওয়া হয়েছিল। এ বার তার জবাবেই ‘ভ্রান্ত তথ্য সরবরাহে’র অভিযোগ সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর কোর্টে পাঠিয়েছে সিপিএম। প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছে পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থবাবুর কাছেও।
সূর্যবাবুর বক্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে নিহত ১৫ জন বাম কর্মী-সমর্থকের তালিকা দিয়ে এসেছিলাম। তার পরেও ওঁরা বিধানসভায় বললেন, বামেদের ৮ জন মারা গিয়েছেন! মুখ্যমন্ত্রীই বলেছিলেন, হিংসা বা আক্রমণের ঘটনার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে জানাতে। সুনির্দিষ্ট কিছু তথ্য তাঁর কাছে পাঠানো হল। আশা করি, এই ধরনের ঘটনা বন্ধ করতে প্রশাসনের সর্ব স্তরেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” যার প্রেক্ষিতে পরিষদীয় মন্ত্রী বলেছেন, “পুলিশমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে ও স্বরাষ্ট্র দফতরে আলোচনা করে যথাসময়ে চিঠির উত্তর দেব। তবে সূর্যবাবু বিরোধী দলনেতার পদের ওজনকে লঘু করছেন! শুধু বাম কর্মী-সমর্থক কত জন মারা গিয়েছেন, এই সংখ্যা নিয়ে বিবাদ করে কার কী উদ্দেশ্য সাধিত হচ্ছে, জানি না!” পার্থবাবুর কটাক্ষ, “বিরোধী দলনেতার সাহস থাকলে সুশান্ত ঘোষকে হাজির করুন! তাঁকে আড়াল করে এ সব তথ্য দিচ্ছেন কেন?”
মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভাতেই বলেছিলেন, রাজনৈতিক হিংসা নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যেই তৃণমূলকে বিজয় মিছিল করতে তাঁরা বারণ করেছেন। কিন্তু বিরোধী দলনেতার চিঠিতে অভিযোগ করা হয়েছে, ‘অত্যন্ত পরিতাপের সঙ্গে আপনাকে জানাতে বাধ্য হচ্ছি, রাজ্য জুড়ে বিজয় পালনের নামে বামপন্থী কর্মী ও সমর্থকদের উপরে শাসক জোটের আক্রমণের ঘটনা এখনও ঘটেই চলেছে’। তৃণমূল শিবিরের পাল্টা প্রশ্ন, বিধানসভার ফলপ্রকাশের পরে শাসক জোটের যে সব কর্মী-সমর্থক খুন হয়েছেন, তাঁদের মৃত্যুর জন্য তা হলে কে দায়ী? বাম জমানার অজস্র ঘটনায় তৎকালীন বিরোধী শিবিরের নেতা-কর্মীদের খুন হওয়ার ঘটনারই বা জবাবদিহি কে করবে? তা ছাড়া, সিপিএমের অন্তর্দ্বন্দ্বে বা অন্যান্য কারণে খুন-হওয়া লোকজনের নামও সিপিএম ‘রাজনৈতিক হিংসায় নিহতে’র তালিকায় ঢুকিয়ে দিচ্ছে বলে তৃণমূলের অভিযোগ। পক্ষান্তরে, সিপিএমের অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক, কোনও স্তরেই কার্যকর হচ্ছে না। পার্থবাবুর ব্যাখ্যা, “লোকসভা নির্বাচনের পর থেকে তৃণমূলেরও বহু কর্মী-সমর্থক ঘরছাড়া হন। দল যা-ই হোক, আমরা সবাইকেই ঘরে ফেরানোর চেষ্টা করছি। যে কোনও মৃত্যুই দুঃখজনক। সার্বিক ভাবে রক্তপাত বন্ধ করতে চাইছে রাজ্য সরকার। আর সূর্যবাবুরা ৯, ১০ বা ১৯ যা-ই হোক, শুধু নিজেদেরটা দেখছেন!” |
|
|
|
|
|