বৈঠক মহাকরণে
এ বার বঙ্গভবনের দায়িত্বে
রেসিডেন্ট কমিশনার
নিজেদের মধ্যে দড়ি টানাটানি নয়, বঙ্গভবনের মান ফেরানোই রাজ্য সরকারের লক্ষ্য ছিল। সেই লক্ষ্য পূরণেই রাজ্যের পূর্ত দফতরের হাত থেকে বঙ্গভবনের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হল দিল্লির রেসিডেন্ট কমিশনারের হাতে।
মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে প্রথম বার দিল্লিতে পা রেখেই রাজ্য সরকারি অতিথিশালা বঙ্গভবনের বেহাল দশা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তখনই পূর্তমন্ত্রী সুব্রত বক্সীকে ফোন করে বঙ্গভবনের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দেন। দেখা যায়, বেহাল অবস্থার প্রধান কারণ হল বাম জমানায় আরএসপি-র হাতে থাকা পূর্ত দফতর কোনও ভাবেই বঙ্গভবনের দায়িত্ব ছাড়তে চায়নি। দিল্লিতে রাজ্য সরকারের রেসিডেন্ট কমিশনার থাকলেও বঙ্গভবনের দেখভাল করার কোনও ক্ষমতাই তাঁর ছিল না।
আজ রেসিডেন্ট কমিশনার ভাস্কর খুলবেকে মহাকরণে তলব করা হয়। পূর্তমন্ত্রী সুব্রত বক্সী তাঁর সঙ্গে গোটা বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করেন। পূর্তসচিব অজিতরঞ্জন বর্ধনও সেখানে হাজির ছিলেন। সিদ্ধান্ত হয়, এখন থেকে রেসিডেন্ট কমিশনারই বঙ্গভবন দেখভালের সামগ্রিক দায়িত্বে থাকবেন। খাওয়া-দাওয়া, থাকার ব্যবস্থা থেকে শুরু করে বঙ্গভবন নতুন করে সাজিয়ে তোলা, সব কিছুরই দায়িত্ব তাঁকে দেওয়া হচ্ছে। দিল্লিতে অন্যান্য রাজ্যের অতিথি শালায় ঠিক যেমন ব্যবস্থা রয়েছে। এত দিন বঙ্গভবনের দায়িত্বে ছিলেন পূর্ত দফতরের এক জন ইঞ্জিনিয়ার এবং এক জন কেয়ারটেকার। রেসিডেন্ট কমিশনার নিজে এক জন আইএএস অফিসার হলেও পরামর্শ দেওয়া ছাড়া তাঁর অন্য কোনও ক্ষমতা ছিল না। সেই ব্যবস্থাটাই বদলাচ্ছে এ বার। এর পর আরও কী কী করা যায়, তা খতিয়ে দেখতে পূর্তমন্ত্রী নিজে দিল্লি আসবেন বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর আগে পূর্ত দফতরের দায়িত্বে ছিলেন আরএসপি-র ক্ষিতি গোস্বামী। রেসিডেন্ট কমিশনারকে বঙ্গভবনের দায়িত্ব দেওয়ার প্রস্তাব দিলেই ‘ওটাও সিপিএম কেড়ে নিতে চায়’ বলে রব উঠত। ফলে কলকাতা থেকে বঙ্গভবনের দেখভাল করতে গিয়ে কোনও কাজই ঠিক মতো করা যায়নি।
পূর্ত দফতরের তদন্তে দেখা গিয়েছে, দিল্লিতে অন্ধ্রপ্রদেশ, গুজরাত বা রাজস্থানের অতিথিশালাগুলির চেয়ে কয়েক মাইল পিছিয়ে রয়েছে বঙ্গভবন। না আছে গুজরাত ভবনের মতো অনলাইন ঘর বুকিংয়ের ব্যবস্থা, না আছে ভাল বাঙালি খাবারের জোগান। অন্ধ্রভবনে গিয়ে যে কেউ হায়দরাবাদি খানার স্বাদ নিতে পারেন। বঙ্গভবনে বাইরের কেউ পয়সা দিয়েও ভাত-ডাল-মাছের ঝোল খেতে পারবেন না। নাম-কে-ওয়াস্তে ‘রুম সার্ভিস’ চালু থাকলেও মন্ত্রী-আমলা ছাড়া সাধারণ অতিথিদের কপালে তা বিশেষ জোটে না। এই ব্যবস্থা পাল্টে ক্যান্টিনকে ‘বেনফিশ’ বা কোনও বেসরকারি সংস্থার হাতে দিয়ে বাণিজ্যিক ভাবে চালানো যায় কি না, দেখা হচ্ছে। রাঁধুনি ও অন্য কর্মীদের প্রশিক্ষণের বন্দোবস্তের কথাও ভাবা হচ্ছে। দোতলায় খাবার ঘরের সামনে একটি লাউঞ্জ তৈরিরও পরিকল্পনা রয়েছে।
বাম জমানায় দিল্লি এলে বঙ্গভবনেই উঠতেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। বঙ্গভবনের ৬৮টি ঘরের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যপাল ও মুখ্যসচিবের জন্য নির্দিষ্ট ঘর রয়েছে। তদন্তে দেখা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর ঘরেও বঙ্গভবনের সাধারণ কর্মীরা যখন তখন ঢুকে পড়তেন। মুখ্যমন্ত্রীর কম্পিউটারের হার্ড ডিস্কও বেশ কয়েক বার চুরি গিয়েছে। হয়েছে অশালীন কাজকর্মও। ঘটনা জানাজানি হতে ওই ঘরের চাবি রেসিডেন্ট কমিশনারের কাছে রাখার কথা হয়েছিল। কিন্তু পূর্ত দফতর তখন তাতেও রাজি হয়নি।
বঙ্গভবনে রাজ্যের যে মন্ত্রী বা আমলারা আসেন, তাঁদের নিরাপত্তা, গাড়ির বন্দোবস্ত করে রেসিডেন্ট কমিশনারের দফতর। সেখানে গাড়ির তেল ও যন্ত্রপাতি সারানোর জন্য প্রতি মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ হচ্ছে। কোনও মোটর ভেহিকল ইন্সপেক্টর ছাড়াই ব্যয় হচ্ছে বলে সেখানেও দুর্নীতি হচ্ছে কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। রেসিডেন্ট কমিশনার চান, মাসে অন্তত চার দিনের জন্য এক জন ইন্সপেক্টর তদারকি করুন। রাজ্য সরকার মনে করছে, রেসিডেন্ট কমিশনার ও পূর্ত দফতরের হাতে দায়িত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব থাকায় বঙ্গভবনের কর্মীরাও মনে করতেন, তাঁরা যে কোনও অপরাধ করেই পার পেয়ে যাবেন।
একই ভাবে দিল্লির সাকুর্লার রোডে নির্মীয়মাণ অতিথিশালার পরিষেবা-সংক্রান্ত যাবতীয় দায়িত্বও বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে রাজ্য সরকার। কারণ ইতিমধ্যেই ওই বাড়ি তৈরি করতে ১৬ কোটি টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু তা দেখে বিশেষ খুশি হননি মুখ্যমন্ত্রী। অন্তত সেখানকার পরিষেবা ও সুযোগ-সুবিধা যাতে উচ্চ মানের হয়, সে বিষয়ে রাজ্য সরকার সচেষ্ট। কারণ এর পর থেকে দিল্লি এলে মুখ্যমন্ত্রী ও সরকারের প্রতিনিধিরা ওখানেই থাকবেন।
Previous Story Desh Next Story


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.