|
|
|
|
পরেশকে চার্জশিটে খুশি দিল্লি চায় চেটিয়াও ফিরুক |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
আলফার ‘সন্ত্রাসপন্থী’ নেতা পরেশ বরুয়ার বাংলাদেশে ফেরা কার্যত বন্ধ করে দিল সে দেশের সরকার। বিদেশমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম ও প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের ঢাকা সফরের আগে এই ইতিবাচক পদক্ষেপকে স্বাগত জানাচ্ছে ভারত সরকার। পাশাপাশি দিল্লি চাইছে, সফরের আগে বাংলাদেশের জেলে বন্দি আর এক আলফা শীর্ষনেতা অনুপ চেটিয়াকে প্রত্যর্পণের বিষয়টিও চূড়ান্ত করুক ঢাকা।
চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র পাচারের মামলায় আগের সরকারের দুই গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর সঙ্গে রবিবার আলফার ‘সামরিক কম্যান্ডার’ পরেশ বরুয়াকেও চার্জশিট দিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। তাঁর নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। বিদেশ মন্ত্রকের মাধ্যমে সেই পরোয়ানা দিল্লিতেও পাঠিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। পাশাপাশি পরেশকে গ্রেফতারের জন্য ইন্টারপোলের সাহায্যও চেয়েছে ঢাকা। ঢাকার এই পদক্ষেপে স্বভাবতই খুশি দিল্লি।
বাংলাদেশে শেখ হাসিনার নতুন সরকার ক্ষমতায় এসে আলফা জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করার পরে ২০০৯-এ পরেশ পালিয়ে মায়ানমার সীমান্তে চিনের ইউনান শহরে চলে যান। সেখানে ঘাঁটি গেড়েই তিনি ভারতের বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনকে চোরাই অস্ত্র সরবরাহের ‘এজেন্ট’ হিসাবে কাজ করছেন। কিন্তু আলফার অন্য গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের প্রায় সকলেই ভারতে ফিরে সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনা শুরু করেছেন। পরেশ তাঁদের কাজকে বিশ্বাসঘাতকতা বলে বর্ণনা করে সন্ত্রাস চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা করেছেন। অসমে তাঁর অনুগত কিছু জঙ্গি এখনও নাশকতা চালিয়ে যাচ্ছে। ভারতীয় গোয়েন্দাদের ধারণা, সুযোগ পেলেই ইউনান থেকে বাংলাদেশে ফেরার পরিকল্পনা রয়েছে পরেশের। বাংলাদেশে পরেশের বিরুদ্ধে এত দিন কোনও মামলা ছিল না। কিন্তু এ বার গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পরে পরেশের কাছে এই দেশের দরজা কার্যত বন্ধই হয়ে গেল। |
|
|
পরেশ বরুয়া |
অনুপ চেটিয়া |
|
বাংলাদেশে আগের বিএনপি-জামাত সরকারের শীর্ষমহলের সঙ্গে পরেশের যোগাযোগ কত গভীর ছিল, রবিবার চট্টগ্রাম আদালতে পেশ করা পুলিশের চার্জশিটটিই তার প্রমাণ। দীর্ঘ তদন্তের পরে বাংলাদেশ পুলিশ আদালতকে জানিয়েছে, পরেশই চিনের একটি সংস্থার কাছ থেকে কয়েক কোটি ডলারের এই অস্ত্রশস্ত্র বাংলাদেশে এনেছিল। ২০০৪-এর ১ এপ্রিল জাহাজে করে এগুলি বাংলাদেশ শিল্প মন্ত্রকের জেটিতে খালাস হয়। তার পরে ১০টি ট্রাকে তা তোলার সময়ে টহলদার দুই পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যায়। চর্জশিটে পুলিশ বলেছে, আগের সরকারের কয়েক জন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী, আমলা ও সেনাকর্তার প্রত্যক্ষ তদারকিতে এই অস্ত্রগুলি চট্টগ্রামে আনা হয়েছিল। ঠিক ছিল ট্রাকে করে আলফা জঙ্গিদের কাছে সেগুলি পৌঁছে দেওয়া হবে।
আগের সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেয়। নতুন করে এই মামলার তদন্ত শুরুর নির্দেশ দেয় তারা। তার ভিত্তিতেই এই চার্জশিট। রবিবার পরেশের সঙ্গে আগের সরকারের শিল্পমন্ত্রী তথা জামাতে ইসলামির সর্বোচ্চ নেতা মতিউর রহমান নিজামি ও তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের নামেও চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। দেশদ্রোহ ও দুর্নীতির অভিযোগে দু’জনেই এখন জেলে। চার্জশিটে বলা হয়েছে, অস্ত্র ভাণ্ডার ধরা পড়ার পরে তদন্তের নামে প্রহসন চালিয়ে যে দুই পুলিশ অস্ত্রগুলি ধরেছিলেন, তৎকালীন সরকারের শীর্ষ মহলের নির্দেশে তাঁদেরই আসামি করে মামলা সাজানো হয়।
পরেশের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপে দিল্লি খুশি হলেও অনুপ চেটিয়া প্রত্যর্পণ নিয়ে কালক্ষেপে কিছুটা হতাশ। রাজশাহির জেলে বন্দি আলফার সাধারণ সম্পাদক অনুপ চেটিয়াকে ভারতে পাঠানোর জন্য ঢাকার কাছে বহু বছর ধরে দরবার করছে দিল্লি। জেল থেকে শান্তি আলোচনাকে সমর্থন জানিয়েছেন এত দিন পরেশ-ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত চেটিয়া। ভারত মনে করে, তিনি ভারতে এসে আলোচনায় অংশ নিলে পরেশ-পন্থী আলফা জঙ্গিরা অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়ে যাবে। কিন্তু নানা বাধ্যবাধকতার কারণে তাঁকে ফেরতের বিষয়ে ঢাকা এখনও সুনির্দিষ্ট কোনও পদক্ষেপ করতে পারছে না। আলফা ও অন্যান্য জঙ্গিদের নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ সরকারের তৎপরতায় দিল্লি খুশি। কাল সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীও এই বিষয়ে ঢাকার আচরণে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে দিল্লির কূটনৈতিক মহল চাইছে, মনমোহনের ঢাকা সফরের আগে চেটিয়াকে প্রত্যর্পণের বিষয়টিও ঢাকা চূড়ান্ত করুক। |
|
|
|
|
|