|
|
|
|
পুরুলিয়া অস্ত্রবর্ষণ মামলা |
ডেভিকে প্রত্যর্পণের আর্জি খারিজ ডেনমার্কের কোর্টে |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
পুরুলিয়া অস্ত্রবর্ষণ মামলার অন্যতম ষড়যন্ত্রী কিম ডেভিকে ভারতে পাঠানো যাবে না বলে রায় দিল ডেনমার্ক হাইকোর্টের পাঁচ সদস্যের বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চ। ভারতের জেলে তাঁর উপর নির্যাতন হতে পারে, ডেনমার্কের নাগরিক ডেভির এই ‘আশঙ্কা’কেই গুরুত্ব দিয়ে তাকে ভারতে পাঠানোর আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন বিচারপতিরা।
ডেভিকে হাতে পাওয়ার আশা অবশ্য এখনও ছাড়ছে না নয়াদিল্লি। ভারতের পক্ষ থেকে ডেনমার্ক সরকারকে এই রায়ের বিরুদ্ধে সে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে আবেদন জানানোর জন্য অনুরোধ করা হবে। আজ দায়িত্বভার নিয়ে নতুন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব রাজ কুমার সিংহ বলেন, “আমরা এ বিষয়ে কোনও রকম সুযোগ হাতছাড়া করতে নারাজ।” রায় হাতে পাওয়া গেলে সিবিআই বিদেশ মন্ত্রকের মাধ্যমে ডেনমার্কের বিচার মন্ত্রককে আবেদন জানাবে যাতে তারা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানায়।
আজকের রায়ের পরে স্বাভাবিক ভাবেই মুক্তির শ্বাস ফেলেছেন ডেভি। একই সঙ্গে ডেভি জানান, পুরুলিয়া অস্ত্রবর্ষণ মামলার প্রমাণ ডেনমার্কে নিয়ে গিয়ে সেখানেই মামলাটির শুনানির জন্য সিবিআইয়ের কাছে দাবি জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সিবিআই তা প্রত্যাখ্যান করায় তিনি ‘বিস্মিত’।
পুরুলিয়া অস্ত্রবর্ষণ মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত ৪৯ বছর বয়সী ডেভিকে হাতে পাওয়ার জন্য ২০০১ সাল থেকে চেষ্টা চালাচ্ছে সিবিআই। অবশেষে গত বছর ৯ এপ্রিল ডেনমার্কের আইন মন্ত্রক তাঁকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। তবে তারা দু’টি বড় শর্ত দেয়। তার একটি হল, ডেভিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যাবে না। অন্যটি হল, তাঁকে কারাদণ্ড দেওয়া হলে ডেনমার্কের কারাগারেই সেই শাস্তি ভোগ করবে ডেভি। দু’টি শর্তই মেনে নিয়েছিল ভারত।
দেশের সরকারের এই নির্দেশের বিরুদ্ধে প্রথমে হিলেরডের স্থানীয় আদালতের দ্বারস্থ হন ডেভি। সেখানে শুনানির সময় ডেভির আইনজীবী জানান যে, ভারতের জেলে ডেভির উপর নির্যাতন হতে পারে। ভারতে মানবাধিকার সংক্রান্ত বিষয় নিয়েও অভিযোগ করেন তিনি। পাল্টা হিসেবে পুরুলিয়া অস্ত্রবর্ষণ মামলার গুরুত্ব বিচার করে ডেভিকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়া উচিত বলে আদালতে সওয়াল করেছিলেন সে দেশের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জোর্গেন জেনসেন। গত বছর ১ নভেম্বর নিম্ন আদালত ডেভির আবেদনে সাড়া দিয়ে তাঁকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ খারিজ করে দেয়। সিবিআইয়ের অনুরোধে সেই রায়ের বিরুদ্ধে কোপেনহেগেনের ইস্টার্ন হাইকোর্টে আবেদন করে ডেনমার্ক সরকার।
সিবিআই সূত্রের দাবি, ভারতের জেলে তাঁর উপর নির্যাতন হতে পারে বলে ইস্টার্ন হাইকোর্টেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন ডেভির আইনজীবী। আজ রায় দিতে গিয়ে সেই প্রসঙ্গ তোলেন বিচারপতিরা। তাঁদের আশঙ্কা, ভারতের জেলে ডেভির উপরে ‘নির্যাতন বা অন্য অমানবিক ব্যবহার করা হতে পারে’। পাশাপাশি ওঠে মানবাধিকারের প্রসঙ্গও। ভারতের হেফাজতে থাকাকালীন ডেভির উপর কোনও রকম ক্ষতি করা হবে না বলে ভারত ডেনমার্ককে যে কূটনৈতিক আশ্বাস দিয়েছিল, আজ তা-ও খারিজ করে দিয়েছে আদালত। এই মামলায় পুরুলিয়া মামলার আর এক অভিযুক্ত ব্রিটিশ নাগরিক পিটার ব্লিচকে সাক্ষ্য দিতে ডাকে আদালত। অস্ত্রবর্ষণ কাণ্ডে ডেভির এক সঙ্গীরও সাক্ষ্য নেয় আদালত। সিবিআইয়ের একটি সূত্রের দাবি, সব ক’টি ক্ষেত্রেই সাক্ষীরা ভারতের জেলগুলির ‘খারাপ’ অবস্থার কথা তুলে ধরেন। ওঠে ভারতের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগও।
তবে হাইকোর্টের আজকের রায়ের পরেও হাল ছাড়তে নারাজ সিবিআই। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার দাবি, প্রত্যর্পণের আর্জি খারিজ করলেও আদালত পুরুলিয়া মামলায় সিবিআইয়ের তদন্ত সম্পর্কে কোনও বিরূপ মন্তব্য করেনি। অভিযুক্ত কিম ডেভি ওরফে নেইল্স হক যে পুরুলিয়া অস্ত্রবর্ষণের প্রধান ষড়যন্ত্রী, সে বিষয়ে সিবিআই নিঃসন্দেহ। তা ছাড়া, বিভিন্ন সময় ডেভি তা স্বীকারও করেছেন বলে দাবি করেছে সিবিআই। গোয়েন্দা সংস্থার বক্তব্য, ডেভি সম্পর্কে আদালতের রায় সম্পূর্ণ এখনও হাতে পাওয়া যায়নি। সেটা পাওয়ার পরেই পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে। |
|
|
|
|
|