|
|
|
|
দুর্গাপুরে ধরাই হল না পুলকার |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
সময়সীমা শেষ হতেই প্রতিশ্রুতি মতো রাস্তায় নেমেছে আসানসোল মহকুমা প্রশাসন। কিন্তু যেখানে ছাত্রীর অপমৃত্যুর জেরে সারা জেলায় পুলকারের উপরে নতুন নজরদারি শুরু হয়েছে, সেই দুর্গাপুরের পরিবহণ কর্তা ‘বৈঠক’ করেই সারা দিন কাটিয়ে দিলেন। তাঁর সাফাই অন্তত তেমনই। মহকুমাশাসক অবশ্য দাবি করেছেন, কিছুটা অভিযান হয়েছে।
শহর জুড়ে বেআইনি পুলকারের দাপাদাপি বন্ধ করতে বুধবারই ২৪ ঘন্টার সময়সীমার কথা জানিয়েছিল দুর্গাপুর ও আসানসোল মহকুমা প্রশাসন। সেই মতো বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ধরপাকড় শুরু হয় আসানসোলে। অভিযানের নেতৃত্ব দেন মহকুমাশাসক সন্দীপ দত্ত। দুর্গাপুরে বুধবার পাঁচটি গাড়ি ধরা হলেও এ দিন কার্যত কিছুই হয়নি। বরং কর্তৃপক্ষ পরস্পরবিরোধী কথা বলছেন। দুর্গাপুরের সহকারী আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক অনিমেষ সিংহ রায়ের ‘যুক্তি’, তিনি জরুরি বৈঠকে ব্যস্ত থাকায় অভিযান করা যায়নি। মহকুমাশাসক মৌমিতা বসু আবার দাবি করেন, “সকালে কয়েকটি স্কুলের সামনে অভিযান চালানো হয়েছে। তবে তেমন বেহাল গাড়ি পাওয়া যায়নি। আগামী সাত দিন তো বটেই, প্রয়োজনে তার পরেও লাগাতার অভিযান চলবে।”
অভিজ্ঞতা বলছে, অবৈধ পুলকার ধরতে কোনও অভিযানের আয়ুই বড় জোর এক সপ্তাহের বেশি হয় না। তার পরে যে কে সেই। সোমবার দুর্গাপুরের কাছেই স্কুলবাস থেকে পড়ে ছাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যুর পরে ফের নড়ে বসেছে প্রশাসন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিয়ম মানার নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই সময়সীমা শেষ হতেই এ দিন আসানসোলের বিভিন্ন এলাকায় স্কুলের সামনে পুলকার ধরা হতে থাকে। কয়েকটি জায়গায় মহকুমাশাসক সন্দীপ দত্ত এবং সহকারী পরিবহণ আধিকারিক সৌমেন দাস নিজেরাই হাজির ছিলেন। মহকুমাশাসক জানান, তিনি নিজেই ২২টি গাড়ি ধরেছেন। সেগুলির একটিতেও যথাযথ কাগজপত্র ছিল না। মাত্র ছ’টির চালকের ‘ড্রাইভিং লাইসেন্স’ ছিল। সেগুলিকে তৎক্ষণাৎ বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পুলকার চালকেরা সাত দিন সময় চান। তাঁরা জানান, এই সময়ের মধ্যে সমস্ত কাগজপত্র তৈরি করে নেবেন। এর পরে তাঁদের ফের সাত দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে প্রতিটি গাড়ির ‘ফিটনেস সার্টিফিকেট’ দাখিল করার কথা বলা হয়েছে।
কিন্তু দুর্গাপুরে এর বিপরীত চিত্র। |
|
অবাধ চলাচল। বৃহস্পতিবার দুর্গাপুরের বিধাননগর এলাকায় তোলা নিজস্ব চিত্র। |
বুধবার সহকারী আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক দাবি করেছিলেন, পুলকারগুলির অবস্থার দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে। নিয়মিত অভিযান চালানো হবে। গাড়িতে বৈধ কাগজ ও ‘ফিটনেস সার্টিফিকেট’ না থাকলে তাঁরা ব্যবস্থা নেবেন। তবে তিনি এবং মহকুমাশাসক দু’জনেই অভিভাবকদের উপরেও অনেকখানি দায়িত্ব চাপান।
ঘটনা হল, অধিকাংশ সময়েই ছেলেমেয়েদের স্কুলে যাতায়াতের কথা ভেবে অভিভাবকেরা তাঁদের অসন্তুষ্টি প্রকাশ করতে পারেন না। প্রশাসন পাশে না দাঁড়ানো পর্যন্ত তাঁরা কার্যত অসহায়। কিন্তু প্রশাসনের তরফে ধারাবাহিক নজরদারি কখনই চোখে পড়েনি। এর আগে পুলকার নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনও ধারাবাহিক অভিযানও হয়নি।
গত বছর অগস্টেও দুর্গাপুরে এক দিন অভিযান চালিয়ে পাঁচটি গাড়ি আটক করা হয়েছিল। ঘণ্টাখানেক পরেই সেগুলিকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তখন অনিমেষবাবু জানিয়েছিলেন, গাড়িগুলির যাত্রী পরিবহণের লাইসেন্স ছিল না। কিন্তু পড়ুয়াদের বাড়ি ফেরার সমস্যার কথা ভেবেই সেগুলিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বস্তুত প্রতি বারই পুলকারকে অব্যাহতি দেওয়ার ক্ষেত্রে একই ‘কুমিরছানা’ দেখানো হয়, কিন্তু সে দিনের মতো নিজেদের গাড়ি নামিয়ে প্রশাসন বিকল্প ব্যবস্থা করে না। অন্তত করেনি এখনও। গত বারও অনিমেষবাবু দাবি করেছিলেন, চালকদের দ্রুত লাইসেন্স নিতে বলা হয়েছে। পরের বার ধরা হলে ছাড় মিলবে না। কিন্তু এর পরে আর কোনও অভিযানই হয়নি। ‘অজ্ঞাত কারণে’ পরিবহণ দফতর হাত-পা গুটিয়ে বসে পড়ে এবং পুলকার মালিকেরা আইনকে রীতিমতো বুড়ো আঙুল দেখিয়ে লাভের ব্যবসা চালিয়ে যেতে থাকেন।
এ দিনও অভিযানে না যাওয়া প্রসঙ্গে নির্লিপ্ত ভাবে অনিমেষবাবু বলেন, “আমার দু’টি জরুরি বৈঠক ছিল। তাই অভিযান করা যায়নি।” তবে আজ, শুক্রবার থেকে ফের অভিযান হবে বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন। দুর্গাপুর গার্ডিয়ান্স ফোরামের তরফে জইনুল হক অভিযোগ করেন, “আজকাল পলিথিনের চাদর দিয়ে ঘেরা এক ধরনের গাড়িতে পড়ুয়াদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বহু গাড়িতে আবার জ্বালানি হিসাবে বেআইনি ভাবে রান্নার গ্যাস ব্যবহার হচ্ছে। পড়ুয়াদের কোনও নিরাপত্তা নেই। যে কোনও সময় ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।” এ ক্ষেত্রেও অনিমষেবাবুর আশ্বাস, খোঁজ নিয়ে ‘উপযুক্ত ব্যবস্থা’ নেবেন।
বর্ধমানের জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা অবশ্য বলেন, “দুর্গাপুরে এমন হয়েছে বলে আমি জানি না। তবে সাত দিন সব জায়গায় এমন ভাবে অভিযান চালানো হবে যাতে স্কুলের সামনেই গাড়ি চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া যায়।” তিনি জানান, গত সোমবার যে বাস থেকে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী করুণা সিংহ পড়ে গিয়েছিল, সেটি ইসিএলের চুক্তিতে নেওয়া বাস নয়। চুক্তিতে নেওয়া বাসটি খারাপ হওয়ায় তার বদলে সেটি পাঠানো হয়েছিল। জেলাশাসক বলেন, “ইসিএল বা ডিভিসি-র মতো সংস্থা ছাত্রছাত্রীদের জন্য চুক্তিতে যে সব গাড়ি নেয়, তারা আবেদন করলে এসবিএসটিসি থেকে নতুন গাড়ি দেওয়ার ব্যবস্থা হবে। এর জন্য এসবিএসটিসি-কে সামান্য কিছু টাকা দিতে হবে। পুলকার সংগঠনও চাইলে এই আবেদন জানাতে পারে।”
দায়িত্বে থাকা অফিসারেরা হাত গুটিয়ে বসে থাকলে এই সব ‘পরিকল্পনা’ যে মাঠে মারা যাবে, তা অবশ্য বলাই বাহুল্য।
|
|
অভিভাবকেরা দরকারে ফোন করুন |
• দুর্গাপুর (০৩৪৩) ২৫৪২০০৪ |
|
• আসানসোল (০৩৪১) ২২৫২২২২ |
|
* নম্বর দু’টি আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের |
|
|
|
|
|
|