স্কুলের গেটে বালিকাকে ছুরি, প্রহারে নিহত ব্যর্থ প্রেমিক |
বাপি মজুমদার • চাঁচল |
ব্যর্থ প্রেমের জেরে ফের খুনোখুনি। এ বার খুন হল সপ্তম শ্রেণির এক বালিকা। স্কুলের গেটের সামনেই। ব্যর্থ ‘প্রেমিক’ও মারা গেল জনতার মারে। সে বাড়ি থেকে পালানোর প্রস্তাব দিয়েছিল ওই বালিকাকে। তাতে রাজি না-হওয়াতে সে বুকে ছুরি বসিয়ে দেয়। দিন কয়েক আগে ব্যারাকপুরে ব্যর্থ প্রেমের জেরে তিন জনকে গুলি করে মারে এক পুলিশ কনস্টেবল।
শুক্রবার বেলা ১১টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে মালদহের চাঁচল থানার চড়ুলমণি হাই স্কুলের সামনে। পুলিশ জানায়, মৃতার নাম সাবিনা খাতুন (১৩)। মৃত যুবকের নাম মোকিম আনসারি (২২)। কাশিমপুর গ্রামে দু’জনের পাশাপাশি বাড়ি। |
|
শোকাহত নিহত ছাত্রীর পরিবার। |
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, মোকিম পেশায় নির্মাণ শ্রমিক। সে সাবিনাকে দিল্লিতে পালিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু, সবিনা রাজি হয়নি। এ দিন স্কুলের পথে সাবিনা রওনা হতেই সাইকেল নিয়ে পিছু নেয় মোকিম। দু-দফায় সাবিনাকে টেনে রাস্তার ধারের পাটখেতের মধ্যে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু স্থানীয় মানুষ বাধা দিলে মোকিম সাইকেল নিয়ে স্কুলের গেটে দাঁড়িয়ে থাকে। সাবিনা পৌঁছতেই সামনে গিয়ে রাস্তা আটকে দাঁড়ায় মোকিম। তার পরেই পর পর কয়েকবার সাবিনার বুকে ছুরি ঢুকিয়ে দেয়। সাবিনা আর্তনাদ করে লুটিয়ে পড়ে। খুনের পরে ছুরি হাতে সাবিনার দেহের কাছেই নিজের সাইকেলে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে বিড় বিড় করতে দেখা গিয়েছে মোকিমকে।
স্কুলের কয়েকজন ছাত্র জানায়, সাবিনার আর্তনাদ শুনে তারা ছুটে গিয়ে দেখে, রক্তমাখা ছুরি হাতে মোকিম দাঁড়িয়ে। ছাত্ররা মোকিমকে বলতে শোনে, ‘আমার সাবিনাকে যে ছুরি দিয়ে খুন করেছি, তা দিয়ে আমাকেও মারো।’ পথচলতি মানুষ উত্তেজিত হয়ে পড়েন। কয়েকজন বাঁশ নিয়ে মোকিমের হাতে আঘাত করে ছুরিটি ফেলে দেন। তার পরেই শুরু হয় মারধর। ছাত্রদের হটিয়ে জনতা নির্বিচারে বাঁশপেটা করলে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় মোকিমের।
মালদহের পুলিশ সুপার ভুবন মণ্ডল বলেন, “প্রতিবেশী ওই দিনমজুর যুবক সাবিনা খাতুনকে উত্ত্যক্ত করত। এলাকায় উত্তেজনা রয়েছে। পরিস্থিতি থমথমে। পাঠানো হয়েছে বিশাল পুলিশ বাহিনী।” |
|
গণপ্রহারে হত যুবকের শোকাহত পরিবার। |
সাবিনার বাবা কলিমুদ্দিন স্থানীয় একটি শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে পড়ান। দুই মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে ছোট সাবিনা। তার দাদা আজহারউদ্দিন বলেন, “মোকিম প্রায়ই আমার বোনকে উত্ত্যক্ত করত। ওদের বাড়িতে সব জানানোও হয়। ও বোনকে বিয়ে করবে বলে জোরাজুরি করত। কিন্তু সাবিনা রাজি ছিল না। তাতেই বোনকে এ ভাবে মেরে ফেলল।”
মোকিমের বাবা জাহিরুদ্দিন আনসারি ছোটখাটো কাজ করে সংসার চালান। দূর সম্পর্কের আত্মীয়তাও রয়েছে প্রতিবেশী কলিমুদ্দিনের সঙ্গে। জাহিরুদ্দিন বললেন, “ছেলের সঙ্গে সাবিনার সম্পর্ক ছিল। ছেলে দিল্লিতে কাজ করতে চলে যায় বছর দেড়েক আগে। দিল্লিতে থাকার সময়ে সাবিনা মাঝেমধ্যেই ফোন করে ছেলেকে গ্রামে আসতে বলত। এমনকী, ছেলের সঙ্গে সাবিনা পালিয়ে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু, ছেলে ফিরলে সাবিনা বলে আমি নাবালিকা। পালালে ঝামেলা হবে। তখন ছেলে এখানেই কাজ জোগাড় করে নেয়। আচমকা এমন ঘটনা ঘটে গেল।” |
বাপি মজুমদারের তোলা ছবি।'
|
|