পঞ্চায়েতে মোট সদস্য সংখ্যা ১০। যার মধ্যে ৯ জনই বামফ্রন্টের। তৃণমূলের ১ জন। কিন্তু, প্রধান, উপ-প্রধান সহ ৮ জন বামফ্রন্ট সদস্যের ইস্তফায় অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। কোনও কাজ না হওয়ায় ফিরে যাচ্ছেন গ্রামবাসীরা। ক্ষোভ বাড়ছে এলাকায়। ঘটনাটি বিষ্ণুপুর ব্লকের দ্বারিক-গোঁসাইপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের।
একযোগে এ রকম ‘গণ-ইস্তফা’য় কিছুটা হতচকিত বিষ্ণুপুরের বিডিও সুদীপ্ত সাঁতরা। শুক্রবার তিনি বলেন, “বুধবার সাত জন এবং এ দিন আরও একজন সদস্য পদত্যাগ করায় আমরা বেশ সমস্যায় পড়েছি। ওই পঞ্চায়েতে কাজকর্ম অচল হয়ে পড়েছে। পদত্যাগীদের মধ্যে রয়েছেন প্রধান, উপ-প্রধানও।” বিডিও জানান, লিখিতভাবে ব্যক্তিগত কারণ দর্শিয়ে পদ ছাড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন তাঁরা। সমস্যা মেটাতে ব্লক প্রশাসন তাঁদের ২৮ জুন শুনানির জন্য ডেকেছে। তার পরেও তাঁরা পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার না করলে জনস্বার্থে ওই পঞ্চায়েতে ‘প্রশাসক’ নিয়োগ করা হবে। |
এ দিন ওই পঞ্চায়েত কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেল আশপাশের গ্রাম থেকে আসা বহু মানুষের ভিড়। প্রধান, উপ-প্রধান না থাকায় কোনও কাজই হচ্ছে না। ‘রেসিডেন্সিয়াল সার্টিফিকেট’ নিতে এসে না পেয়ে ফিরে যাচ্ছিলেন অবন্তিকা গ্রামের অনুপ দাস। তাঁর কথায়, “চাকরির জন্য এই শংসাপত্র খুবই জরুরি। পঞ্চায়েত অফিসে এসে শুনলাম প্রধান, উপ-প্রধান পদত্যাগ করেছেন। কবে শংসাপত্র দেওয়ার লোক পাব জানি না।” নিম্নচাপের বৃষ্টিতে বাড়ির দেওয়াল ভেঙে পড়ায় একটি ত্রিপলের জন্য এসেছিলেন দেউলি গ্রামের বিশ্বজিৎ ঢক। তাঁরও ক্ষোভ, “কিছু না পেয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে।” দ্বারিক-গোঁসাইপুর পঞ্চায়েতের সচিব বীরেশ দাস বলেন, “২২ জুন থেকে প্রধান ও উপ-প্রধান আসছেন না। কোনও কারণ জানাননি। ব্লক অফিস থেকে জেনেছি, তাঁরা পদত্যাগ করেছেন। এখন এলাকার উন্নয়নমূলক সব কাজ থমকে গেছে। বিরক্ত হয়ে ফিরে যাচ্ছেন বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসা মানুষজন। কবে এই সমস্যা কাটবে, কাউকে কিছু বলতেও পারছি না।”
হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত কেন জানতে চাওয়া হলে সিপিএমের পদত্যাগী প্রধান জ্যোৎস্না লোহার বলেন, “শরীর ভাল নয়। অফিসে সময় দিতে পারব না। তাই, এই সিদ্ধান্ত।” একই দাবি ফরওয়ার্ড ব্লকের উপ-প্রধান বাসুদেব ঢকের। কেউ চাপ দিয়েছে? তাঁর দাবি, “কেউ চাপ দেয়নি। নিজের ইচ্ছায় পদত্যাগ করেছি।” যদিও সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য তথা বিষ্ণুপুরের প্রাক্তন বিধায়ক স্বপন ঘোষ বলেন, “রাজ্যে সরকার পরিবর্তনের ফলে স্বাধীনভাবে ওই পঞ্চায়েতটির প্রধান, উপ-প্রধান ও সদস্যেরা কাজ করতে পারছিলেন না। গণ্ডগোল যাতে না পাকায়, সে জন্যই তাঁরা সরে দাঁড়িয়েছেন। এর পিছনে তৃণমূলের একাংশের মদত রয়েছে।”
যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিষ্ণুপুর ব্লক তৃণমূল সভাপতি মথুর কাপড়ি। তাঁর দাবি, “ওদের দলীয় কোন্দলের কারণেই এই ইস্তফা বলে জেনেছি। রাজ্যে ক্ষমতা হারানোর পরে এখন সব দোষ তৃণমূলের ঘাড়ে চাপাতে চাইছে। মানুষই শেষ কথা বলবে।” ২০০৯ সালের লোকসভা ভোটের পরেও এই জেলার পাত্রসায়র ও ইন্দাস ব্লকের কয়েকটি পঞ্চায়েতের সিপিএমের সদস্য ও পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যদের ইস্তফা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। সে ক্ষেত্রেও সিপিএমের অভিযোগের তির ছিল তৃণমূলের দিকে। বিধানসভা নির্বাচনের পর ফের এই ধরনের ঘটনা ঘটল দ্বারিক-গোঁসাইপুর পঞ্চায়েতে। ভবন তৈরি হওয়ার মাস কয়েক আগেই ওই উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এএনএম হিসাবে যোগ দেন বাবুইজোড় গ্রামের রূপা ঘোষ। |