|
|
|
|
পাড় ভাঙছে, দিন গুনছে চরকুমারি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নাকাশিপাড়া |
এ বার কি সত্যিই মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে চরকুমরি পাড়া?
প্রতি রাতে নদীর পাড় ভাঙার শব্দ শোনেন। নাকাশিপাড়া থানার চরকুমরিপাড়া গ্রামের চারশো পরিবারের মানুষ প্রতিটি শব্দেই মনে করেন, নদী এগিয়ে আসছে আরও এক পা এক পা করে।
কিন্তু এই ভাঙন কোনও নতুন কথা নয়। দশ বছর আগে নাকাশিপাড়ার উদয়চন্দ্রপুরে ভাগীরথীর তীরে শুরু হয়েছে ভাঙন। প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে নদী এগিয়ে আসছে একটু একটু করে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ইতিমধ্যে সাড়ে তিন কিলোমিটার জমি নদীগর্ভে চলে গিয়েছে। কিন্তু প্রশাসনের হুঁশ ফেরেনি। এই অবস্থায় গত ৫ বছরে ভাঙন আরও তীব্র হয়েছে। বেথুয়াডহরি থেকে পাটুলিখালের পিচের রাস্তার গা লাগোয়া অঞ্চল ভাঙতে ভাঙতে এমন অবস্থায় এসে পৌঁছেছে, যদি আর এক কিলোমিটার এলাকা ভাঙে তা হলে নাকাশিপাড়া ব্লকের মূল ভূখণ্ড থেকে চিরদিনের মতো বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে চরকুমরিপাড়া। ভাগীরথীর বুক ঘেঁসে তখন জেগে থাকবে নতুন একটা দ্বীপ। |
|
ক্রমশ এগিয়ে আসছে ভাগীরথী। নাকাশিপাড়ায় ছবিটি তুলেছেন সুদীপ ভট্টাচার্য। |
তাই বর্ষা শুরুর আগে থেকেই আতঙ্কে ভোগেন এই এলাকার মানুষ। ওই এলাকারই বাসিন্দা নাকাশিপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের কল্যাণী মাহাতো। পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তৃণমূলের উমাশঙ্কর দে বলেন, “গত কয়েক বছরের ভাঙনে প্রায় তিন হাজার বিঘা কৃষি জমি ভাগীরথীর বুকে হারিয়ে গিয়েছে। আর মাত্র এক কিলোমিটারের ভাঙনেই চরকুমরিপাড়া বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। ওই গ্রামে কিন্তু চারশো পরিবারের বাস।” তিনি বলেন, “দাদুপুর-উদয়চন্দ্রপুর এলাকার কয়েকশো পরিবার সর্বস্বান্ত হয়েছেন। আরও কয়েকশো পরিবার সর্বস্বান্ত হওয়ার অপেক্ষায়।”
তাঁরা বিধায়ক থেকে শুরু করে প্রশাসনের সব স্তরে ভাঙন ঠেকিয়ে রাখার আবেদন করেছেন। প্রাক্তন প্রধান তৃণমূলের আজাই শেখ বলেন, “এই এলাকার অনেকে জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে কৃষি জীবিকা ছেড়ে দিন মজুরি করতে জয়পুর, দিল্লি, কেরলে কাজ করতে যাচ্ছেন।” তিনি বলেন, “প্রাক্তন বাম রাজ্য সরকার একবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে কোনও কাজ হয়নি।” পঞ্চায়েতের বর্তমান বিরোধী নেতা সিপিএমের সতীশচন্দ্র দে-ও বলেন, “উদয়চন্দ্রপুর ঘাটের উল্টো দিকেই ছিল বর্ধমানের পাটুলিঘাট। এখন সেই ঘাটে ভুটভুটিতে করে যেতে দেড় ঘণ্টার মতো সময় লাগে। এতটা জায়গা ভাঙল, তবু ভাঙন রোধে এতদিনেও কোনও কাজ হল না।” স্থানীয় বিধায়ক তৃণমূলের কল্লোল খাঁ বলেন, “কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের যৌথ উদ্যোগে ভাঙন রোধে বেশ কয়েক কোটি টাকার ভাঙন রোধের কাজ হবে।” সেচ দফতরের কৃষ্ণনগরের সাব ডিভিশনের আধিকারিক সুপ্রতিম রায় বলেন, “ওই এলাকায় ভাঙন রোধের জন্য প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদনও হয়ে গিয়েছে। আমরা খুব দ্রুত কাজ শুরু করব।” |
|
|
|
|
|