|
|
|
|
|
|
|
|
মুখোমুখি... |
|
তিনি বৃদ্ধ হলেন না |
সঙ্গে ফটোগ্রাফার দূরে থাক, ন্যূনতম ইন্টারভিউ নেওয়ার ব্যবস্থাও নেই। রিপোর্টারের ডায়েরি নেই। মাইক্রোক্যাসেট
রেকর্ডার নেই। মোবাইলে কিছু একটা বিগড়েছে। সেই যন্ত্রেও সাক্ষাৎকার গ্রহণের রাস্তা খোলা নেই। এত হোমওয়ার্ক
বিহীন যাওয়ার কারণ অবশ্য অ্যাপয়েন্টমেন্টের পিছনে পেশাগত কোনও কারণ জড়িয়ে না থাকা। নিছক তেন্ডুলকরের
ওপর একটা বই পৌঁছে দেওয়ার জন্য মুম্বইয়ের খার
এলাকার এই একতলার কামরাতে ঢোকা। এলাকা অভিজাত কিন্তু
বাড়ির বাইরেটা জৌলুসহীন। ঘরটাও চূড়াম্ত অগোছালো। চোদ্দো বাই চোদ্দো
হবে টেনেটুনে।
শুনলাম ওঁর অস্থায়ী
অফিস। উল্টো দিকে টেবিলের ও ধারে রাশি রাশি কাগজপত্রের ভিড়ে মুখটা অর্ধেক ঢাকা পড়ে গিয়েছে। দেব আনন্দ
ফিল্মের প্রথম দৃশ্যের মতোই সত্তর ডিগ্রি ঘুরলেন। বললেন “ইয়েস।” গৌতম
ভট্টাচার্য-র তখনই মনে হল চূড়ান্ত
অপ্রস্তুত অবস্থাতেও এই ভদ্রলোককে এখনই ইন্টারভিউর জন্য অনুরোধ করা উচিত । |
দেব মোটেও অনুপ্রাণিত নন। বললেন, আরে এ ভাবে কি বিনা নোটিশে ইন্টারভিউ হয় নাকি?
প্যাড কোথায় আপনার? লিখবেন কীসে?
কোনও ডিক্টাফোনও তো দেখছি না। ভাই, আমরা পুরনো আমলের লোক। ‘ওঠ ছুঁড়ি তোর বিয়ে হল’ দর্শনে বিশ্বাস করি না। সব কিছুর ধরন আছে। আগে কথা বলতে হয়। এই যে আমার সেক্রেটারি চুড়িওয়ালা, ওর মাধ্যমে আসতে হবে। তার পর আমার টাইম ঠিক হবে। জানানো হবে। মুম্বইয়ের কাগজের জন্যও আমার এক নিয়ম।
দেব আনন্দ - দেব আনন্দ আসলে এ সব কিছুই বললেন না। বললেন, “ইন্টারভিউ! লেট্স গো!” কে বলবে ভদ্রলোকের বয়স অষ্টাশি। এইট্টি-এইট গোয়িং অন এইট্টি-নাইন।
দেব আনন্দ: (বইটা হাতে নিয়ে) সচিন আমার খুব প্রিয়। কিন্তু এই মুহূর্তে আমি মজে আছি ধোনিতে।
পত্রিকা: তাই?
দেব আনন্দ: ওয়ার্ল্ড কাপ ফাইনালের দিন আমি টিভি দেখার মতো অবস্থায় ছিলাম না। গাড়িতে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গা যাচ্ছিলাম রেডিয়ো কমেন্ট্রি শুনতে শুনতে। ধোনি যে ওই রকম প্রেসারে নিজেকে ব্যাটিং অর্ডারে আগে নিয়ে এল... ছয়টা মেরে নির্বিকার স্টাম্পটা তুলে নিল... পরের দিন সকালে মাথা ন্যাড়া করে ফেলল... কী অসম্ভব সিনেমাটিক!
পত্রিকা: এখন সন্ধে সাতটা। আর কতক্ষণ কাজ করবেন?
দেব আনন্দ: অনেক কাজ আছে। অগস্টে নতুন ছবির রিলিজ। তারপর আর একটা ছবির কথা ভেবে রেখেছি। এরই মাঝে অফিস শিফ্ট করব। পরের বার এলে দেখবেন অন্য অফিস। তারপর খুচখাচ কিছু ট্র্যাভেলিংও আছে।
পত্রিকা: ক্লান্ত লাগে না? এত প্রাণশক্তি কোথা থেকে পান?
দেব আনন্দ: লাগে না। কারণ যে কাজটা আমি করি সেটা ভীষণ টগবগে রাখতে পারে আমায়। আমার মধ্যে যে সৃষ্টিশীল চেতনা রয়েছে তা অনবরত খাবার পায় এর থেকে। আমি তো একটা যেমন তেমন কাজ করি না। কাজের ধরনটা এমন যে সেটা দ্রুত বিচারের জন্য ছড়িয়ে যায় গোটা বিশ্বে। ঠিক হয় আমি সফল হলাম না ব্যর্থ? আমি তো নিজের মনের মধ্যে টানা আড়াই ঘণ্টা একটা ফিল্ম দেখার মতো পরপর শটগুলো দেখে যেতে পারি। আমার মনের বিশ্রাম নেই। ওটা দ্রুতগতিতে চলতেই থাকে। সচিনের ছক্কা একদিন থেমে যাবে কারণ ওটা ফিজিক্যাল। আমার ছক্কা থামবে না কারণ ওটা মন থেকে উড়ে যাচ্ছে। আমি নিজেকে বলিও তো (হাত দিয়ে উড়িয়ে দেওয়ার ভঙ্গি) মারতে যাও। মারতে যাও। কৌন রোকেগা!
পত্রিকা: কিন্তু এক এক সময় মনে হয় না যে আমার তো সব পাওয়া হয়ে গিয়েছে। আর আমি কী-ই বা পেতে পারি? অ্যাতো অ্যাতো জুবিলি হিট। এত খ্যাতি। এত অর্থ। নিজেকে এই জায়গা থেকে মোটিভেট করেন কী করে?
দেব আনন্দ: প্রাপ্তির কি কোনও শেষ সীমানা হয় নাকি? আমার তো সব সময় মনে হয় যেটুকু পেয়েছি সেখান থেকে ঝাঁপাই। আরও বড় কিছু পেতে হবে। আরও আরও বিশাল কিছু। আমি অ্যাভারেজ হওয়ায় বিশ্বাসী নই। আমাকে সব সময় আউটস্ট্যান্ডিং হতে হবে।
পত্রিকা: টিভিতে যখন ‘গাইড’ দেখায়। ‘জুয়েল থিফ’। বা ‘হাম দোনো’। নস্টালজিক লাগে না? কত স্মৃতি। কত সব মুহূর্ত।
দেব আনন্দ: ধুর, খুব দরকার না পড়লে আমি নিজের পুরনো ছবি-টবি একদম দেখি না। নতুন ছবিতে কোনও রেফারেন্স দরকার পড়লে অন্য কথা।
পত্রিকা: কেন?
দেব আনন্দ: স্রেফ সময় নষ্ট। এক একটা ছবি দেখতে বসা মানে আমার জীবন থেকে তিন ঘণ্টা চলে যাওয়া। ওই সময়টা অন্য কাজে দিলে কত উপকার! তা ছাড়া পেশাদার হিসেবে আমি তো নিজেও নিজের পুরনো কাজের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। পুরনোগুলো ফিরে ফিরে দেখা মানে তো রিপিট করার আশঙ্কা থাকছে।
পত্রিকা: সেই ম্যাজিক মুহূর্তগুলো নেড়েচেড়ে দেখতে ইচ্ছে হয় না?
দেব আনন্দ: জীবনের প্রতিটা মুহূর্তই তো মাজিক। এই যে আমি বসে আড্ডার মেজাজে ইন্টারভিউ দিচ্ছি, এটাও তো ম্যাজিক হিসেবেই রেকর্ডেড হয়ে যাবে।
পত্রিকা: একেবারেই অতীত বিলাসী নন?
দেব আনন্দ: একটুও না। আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু লিভ ইন দ্য পাস্ট। অতীত আমার কাছে তখনই প্রয়োজনীয় যদি আমার কাজে সেটা সাহায্য করে।
যেমন আমি অটোবায়োগ্রাফি লেখার সময় অতীতটা দরকার পড়েছিল। তখন নেড়েচেড়ে দেখেছিলাম। আবার গুটিয়ে রেখে দিয়েছি।
(এমন ভাবে বললেন দেব যেন অতীতটা কার্পেটের মতো। বাড়িতে অতিথি এসেছিল বলে বার করা হয়েছিল। আবার তুলে রেখে দেওয়া হল।) |
|
পত্রিকা: কিছু মনে করবেন না, অনিচ্ছুক অতীতেই আপনাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আপনার প্রবল দুই প্রতিদ্বন্দ্বী সম্পর্কে যদি বলেন। দিলীপ কুমার আর রাজ কপূর।
দেব আনন্দ: রাজ কপূরকে আমি খুব ভাল চিনতাম। রাজ সিনেমা খুব ভালবাসত। সিনেমার জন্য প্রচুর করেওছে। দিলীপ কুমার সহকর্মী হিসেবে দারুণ। এত ভাল ভাল কাজ করেছে। কিন্তু দিলীপ কখনও ছবি পরিচালনার আগ্রহ দেখাল না। হয়তো অভিনেতা থাকতে পেরেই ও খুশি। যদিও আমি আশা করেছিলাম পেশাদারি জীবন ও আরও টানবে নতুন ভূমিকায় চলে গিয়ে। যেটা রাজ করেছে।
পত্রিকা: রাজ কপূর তো কার্যত আপনার প্রেমিকা জিনত আমনকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছিলেন।
দেব আনন্দ: (এক লহমা যেন নিশ্চল) আমার বইতে লিখেছি তো। কিছু গোপন করিনি।
পত্রিকা: রাজ কপূরের সঙ্গে আপনার যোগাযোগ কি অব্যাহত ছিল?
দেব আনন্দ: হ্যাঁ, ওর লাস্ট পার্টিতেই তো আমি ছিলাম। আর্ম চেয়ারে করে ওকে আনা হল। চলে যাওয়ার সময় রাজ চেঁচিয়ে বলল, আরে মেরে কো উঠাও ইয়ার। আমার ওকে দেখে তখনই আফসোস হচ্ছিল কত বড় অপচয়! রাজ যদি নিজের জীবনটা একটু গুছিয়ে কাটাত, আরও কত বছর ও বাঁচতে পারত।
পত্রিকা: আপনার সেরা সময়ের ঠিক পর পরই শুরু হয়ে গেল রাজেশ খন্নার সোনার সময়। আশ্চর্যজনক ভাবে বেশি বছর সেটা স্থায়ী থাকল না। হস্তান্তরিত হয়ে গেল অমিতাভ বচ্চনের যুগে। বলিউডের এই পালাবদলের ব্যাখ্যা কী ভাবে করবেন?
দেব আনন্দ: সে ভাবে ভাবিনি কখনও। হয়তো রাজেশ যতটা ফোকাস্ড থাকা উচিত ছিল, তত ছিল না। হয়তো নিজেই নিজের ক্ষতি করে ছিল। হয়তো অমিতাভ যে পসরাটা নিয়ে হাজির হয়েছিল, সেটা মানুষের কাছে বেশি অ্যাট্র্যাকটিভ, বেশি চার্মিং মনে হয়ে ছিল। ভাবিনি সে ভাবে। তবে আমি সব জমানাতেই জ্বলজ্বল করে ছিলাম।
পত্রিকা: মৃত্যু নিয়ে ভেবেছেন?
দেব আনন্দ: ডেথ ইজ মাস্ট। অবশ্যম্ভাবী। আমার কথা হল মৃত্যু যদি হওয়ারই হয়, হোক। যতক্ষণ বেঁচে আছি ততক্ষণ কাজ করে যাই। তার পর আমার কাজের শেষ বিচার তো পড়েই রইল। ভাবুক না বিশ্ব তখন আমাকে নিয়ে। আমার কাজ নিয়ে কথা বলুক। ছোটছোট টুকরোয় ভাঙুক। চূড়াম্ত সমালোচনা করুক। প্রশংসা করুক।
পত্রিকা: পরজন্মে বিশ্বাস করেন? অনেক শিল্পীকে বলতে শুনেছি বাকি যা থাকল পরের বার এসে করব!
দেব আনন্দ: আমি নিশ্চিত নই। পরজন্ম সাবজেক্টটা নিয়ে কখনও নাড়াচাড়া করিনি। এ সব নিয়ে না ভেবেও আমি দিব্যি একটা গোটা জীবন কাটিয়ে দিতে পারি। আমার সব সময় মনে হয়, কাল যা করেছি আজ তার চেয়ে বেটার করার ক্ষমতা রাখি। আমার যাবতীয় মনোযোগ যেন সেদিকে থাকে।
পত্রিকা: এই ২০১১-তে বসেও মনে হয় কালকের চেয়ে আজ বেটার করার ক্ষমতা রাখি?
দেব আনন্দ: অবশ্যই। কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের ক্ল্যাসিকস সেকশনে যখন ‘গাইড’ দেখানো হল কী অভিনন্দনের বৃষ্টি। আমার মনে পড়ে গেল ১৯৬৬-তে ছবিটা যখন রিলিজ হল দিল্লি আর মুম্বইতে কী তুলকালাম প্রতিক্রিয়াই না পেয়ে ছিলাম। দু’টো ভিন্ন সময়। দু’টো সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রজন্ম। অথচ এক ছবি ঘিরে উচ্ছ্বাস। তখন মনে হয় নিশ্চয়ই আমি আগের চেয়ে বেটার করতে পারি। বিশ্ব বলার চেষ্টা করুক, না তুমি পারবে না। বেকার চেষ্টা করছ। কিন্তু আমি নিজের ডাক অনুসরণ করায় বিশ্বাসী। বিশ্বের প্রতিক্রিয়া আমাকে নিরুৎসাহ করতে পারবে না। আমি চেষ্টা করেই যাব। করেই যাব। আর কী বিউটিফুল এই সৃষ্টিশীল কাজকর্মে জড়িয়ে থাকাটা। মন দৌড়চ্ছে। দৌড়চ্ছে। এক জায়গায় বসে থাকছে না। আমায় চালায় আমার প্যাশন। আমি যা কিছু করি তার মধ্যে আমার প্যাশন। |
|
জিনাত ও দেব |
পত্রিকা: এই বয়সীরা সবাই থোড়াই এমন ভাবে! দেব আনন্দ: ভাবে না হয়তো। কাউচে বসে টিভি দেখে। আমি দেখি না এটাই তো আমার কাছে এক্সাইটিং। আমার মনে তো ক্রমাগত মুভমেন্ট হতে থাকে। পরের পর ছবি আসতে থাকে। আমার এবার লক্ষ্য থাকে সেই ছবিগুলোকে জুড়ে আড়াই ঘণ্টার একটা বিশ্বাস্য ফিল্ম তৈরি করা। আমি শুধু আমার ভাবনাকেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। কিন্তু সেটাও তো কাউচে বসার চেয়ে ভাল! আসল চ্যালেঞ্জটা হল মানুষ দেখে যেন সসম্মানে বলে ‘দেখো ইসনে ক্যায়া কিয়া। দেখো তো সহি!’
পত্রিকা: তা হলে মানুষ বুড়ো হবে না? দেব আনন্দ: বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মুভমেন্ট স্লো হতে পারে। বুদ্ধি তো তীক্ষ্ম হয়। তার ধার বেড়ে যায় অনেক। প্রশ্ন হল তবু লোকে ভোঁতা হয়ে যায় কেন? আমার উত্তর রিল্যাক্সেশনে বিশ্বাসী হয়ে পড়ে বলে। আমার নিজের মনে হয় কত রিল্যাক্স করব? কী করে করব? ঘুমোব? জীবনে একটা মানুষ কতক্ষণ ঘুমোতে পারে? অমিতাভ বচ্চনকে দেখুন তো। যত বয়স বাড়ছে, তত অভিনেতা হিসেবে যেন ওর চেকনাইও বাড়ছে। আজকের দিনে ওর জন্য আলাদা করে চিত্রনাট্যও লেখা হচ্ছে। অমিতাভকে দেখি সব সময়ই দৌড়চ্ছে। আপনি ফিজিক্যালি ওকে দৌড়তে না দেখলেও ওর দৌড়টা ফিল্ করতে পারবেন। এটাই হল এনার্জি। এটাই হল ইচ্ছেশক্তি। ইচ্ছেকে জ্বালানি করে মানুষ জীবনে ক্রমাগত এগিয়ে যেতে পারে।
পত্রিকা: আপনার হাতে কোনও আংটিটাংটি দেখছি না। জ্যোতিষীর কাছে যান না? দেব আনন্দ: এসব কখনও করিনি।
পত্রিকা: কেউ ভবিষ্যদ্বাণী করেনি আপনি এত সফল হবেন? দেব আনন্দ: অনেক বছর আগে আমি মা-র ওষুধ জোগাড় করতে দীর্ঘ রাস্তা গাড়ি চালিয়ে অমৃতসর গেছিলাম। ক্লান্ত হয়ে একটা দোকানে বাদামের শরবত খেতে ঢ়ুকেছি, দোকানদার বলেছিল দেখি কাছে আয়। তুই বেটা একদিন অনেক বড় হবি। আমার মা-ও মনে করতেন আমার নামযশ হবে। কিন্তু ওইটুকুই। কোনও দিন ভাগ্য ফেরাতে আংটি পরিনি। গনৎকারের কাছেও যাইনি।
পত্রিকা: কখনও মনে হয় না আপনার যে এতগুলো প্রজন্ম পিছনে চলে গেল। বলিউডে নতুন সব মুখ। নতুন ভাবনা। নতুন গল্প। ক্রমশই আপনি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়তে পারেন। দেব আনন্দ: আরে ভাই লেন্স বদলাতে পারে। দর্শক বদলাতে পারে। সময় বদলাতে পারে। মূল বুনোট কী করে বদলাবে? চরিত্র কী করে বদলাবে? মা তো আজও মা। বাবা আজও বাবা। ভাই আজও ভাই। প্যার আভি ভি প্যার।
পত্রিকা: ঝকঝকে সব নতুন নায়ককে দেখে কখনও আতঙ্ক হয়নি? দেব আনন্দ: নো। বরঞ্চ প্রতিবার যখন দেখি লোকে দুমদাম শার্ট খুলে ফেলছে তখন মনে মনে হাসি।
পত্রিকা: হাসেন কেন? দেব আনন্দ: হাসি কারণ নিজেকে বলি, এই যে শেষ করে ফেলল আরও একজন। শার্ট খুলে দেখানো মানে হাতে গোনা পাঁচ থেকে ছ’বছর। নির্ঘাত অপমৃত্যু। ভাবুন তো রাজ কপূর, দিলীপ কুমার, অমিতাভ বচ্চন, আমি নিজে! আমরা কখনও শার্ট খুলে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছি?
পত্রিকা: আপনার জীবনের নায়িকাদের নিয়ে অদম্য কৌতূহল। এঁরাও নিশ্চয়ই আপনাকে উদ্বুদ্ধ করেছেন নানা ভাবে? দেব আনন্দ: নিশ্চয়ই। আমি ক্রিয়েটিভ রোমান্সে ভয়ঙ্কর বিশ্বাসী একটা মানুষ। নায়িকারা আমার জীবনে ভীষণ ইন্সপায়ারিং।
পত্রিকা: শোনা যায় এঁদের মধ্যে সুরাইয়াকে নিয়ে আপনি এত ডগমগ ছিলেন যে সুরাইয়া গ্রেগরি পেকের ভক্ত বলে আপনিও গ্রেগরি পেকের অনুকরণ শুরু করেন। দেব আনন্দ: ইয়েস সুরাইয়া। একটা সময় অবশ্য মনে হতে লাগল ইট্স আ ব্লাডি জোক। আমি কেন নকল করতে যাব আর একজনের। আজ মনে হয় একজন গ্রেগরি পেক। একজন দেব আনন্দ। একটাই মিলদু’জনেই জীবনকে ভালবেসে ছিল।
পত্রিকা: জিনাতের কথা তো আত্মজীবনীতেই লিখেছেন। কী ভাবে আপনি যে দিন প্রোপোজ করবেন বলে ঠিক করেছেন সেদিন উনি রাজ কপূরে আসক্ত হয়ে পড়লেন। শোনা যায় ওটা পড়ে নায়িকা খুব প্রসন্ন হননি। আজ কেমন সম্পর্ক? দেখা হয়? দেব আনন্দ: দেখুন ভাই অটোবায়োগ্রাফিতে আমি চেষ্টা করেছি যথাসম্ভব সত্যি কথা লেখার। জিনাতের সঙ্গে আমি যে ঝাঁপিয়ে পড়ে দেখা করার, যোগাযোগ করার চেষ্টা করি এমন নয়। আর মুম্বই এমনিতেও এত বড় শহর। চট করে কারও সঙ্গে দেখাও হয় না।
পত্রিকা: ডায়েট চার্ট কী? এত বছর যে নীরোগ কাটিয়ে দিলেন। নিশ্চয়ই আপনি ফুডি নন? দেব আনন্দ: নই একেবারেই। ঠিক ততটা খাই যতটা খেলে বেঁচে থাকা যায়। আমি ড্রিঙ্ক করি না। স্মোক করি না। মশলাদার খাবার এড়িয়ে চলি। তাই হয়তো আজও লিফ্ট কাজ না করলে সিঁড়ি বেয়ে উঠে যেতে পারি। হাতের কাছে গাড়ি না থাকলে টক করে ট্যাক্সিতে ঢুকে যেতে পারি। দ্যাটস দেব আনন্দ!
পত্রিকা: ঘনিষ্ঠ প্রিয়জনেরা যাঁরা পৃথিবী ছেড়ে গিয়েছেন, তাঁদের কথা ভাবলে মন খারাপ হয় না? শচীন দেব বর্মন, কিশোর কুমার... দেব আনন্দ: আমি ভীষণ ভীষণ মিস করি বিজয় আনন্দকে। কিশোরকে মিস করি। ওই উদাত্ত গলা! শচীন দেব বর্মন! কী কী সব মানুষ। কিন্তু কোথাও গিয়ে মেনেই নিতে হয় এঁরা নেই। ফ্যাক্ট অফ লাইফ।
পত্রিকা: পৃথিবীটা চালাচ্ছে কে বলে মনে হয়? ঈশ্বর? দেব আনন্দ: কোথাও একটা অজানা শক্তিস্থল আছে। আমিও অন্যদের মতো সেই শক্তির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। আর তার কাছেই কৃতজ্ঞ।
পত্রিকা: অগষ্টে রিলিজ করছে আপনার পরের ছবি ‘চার্জশিট’। আপাতত এটাই শেষ? দেব আনন্দ: না, না, শেষ কে বলল? ‘চার্জশিট’-য়ের পর করছি ‘হরে রামা হরে কৃষ্ণ’-র সিকোয়েল। ছবির নাম ‘হরে রামা হরে কৃষ্ণ-আজ’।
পত্রিকা: কিন্তু হিপিরাই তো আধুনিক পৃথিবী থেকে অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে। দেব আনন্দ: ঠিক। কিন্তু হিপিডম অদৃশ্য হয়ে যায়নি। সেটা মানুষের মনের মধ্যে গেঁড়ে বসে রয়েছে। আমার ছবির বিষয় তাই যে বিশ্ব বদলাচ্ছে। প্রযুক্তি বদলাচ্ছে। মানুষের অন্তর্জগৎ বদলাচ্ছে না।
পত্রিকা: আপনি কী চান? মৃত্যু পরবর্তী মানুষ আপনাকে কী ভাবে মনে রাখবে? দেব আনন্দ: আরে ও সব আমি ভাবতেই চাই না। ইতিহাস আমার কাজ কী ভাবে বিচার করবে, লোকে আমায় নিয়ে কী ভাববে এ সব মাথায় ঢোকানো মানে নিজেকে দাঁড় করিয়ে দিলাম। একটা পজ্ দিলাম। থামব। ভাবব। কোন দুঃখে পজ্ দেব? আমি তো অবিরাম দৌড়চ্ছি। আর দৌড়েই যেতে চাই। আরও ভাল করতে হবে আমাকে। বেটার, বেটার, বেটার। |
|
|
|
|
|