পূর্ব মেদিনীপুর
নতুন চেয়ারম্যান, প্রাথমিকে নিয়োগ নিয়ে আশা এবং প্রশ্ন
রাজ্যে পালাবদলের পরে যেটা এক রকম অনিবার্যই ছিল, পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদে সেই ‘পরিবর্তন’ও ঘটে গেল। বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান হলেন সেই গোপাল সাহু, যিনি এত দিন ‘তৃণমূল শিক্ষা সেল’-এর জেলা নেতা হিসাবে পথে নেমে আন্দোলন করেছেন বাম-নিয়ন্ত্রিত সংসদের বিরুদ্ধে। এতদ্বারা অবশ্য শিক্ষা ক্ষেত্রে তথাকথিত ‘নিরপেক্ষতা’ বজায় রাখা নিয়ে নতুন সরকারের স্লোগান কতটা রক্ষা হল, নাকি পাল্টা দলতন্ত্রই কায়েম হচ্ছে--সে প্রশ্ন উঠেছে। গোপালবাবু নিজে পেশায় একটি হাইস্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক। সজ্জন মানুষ হিসাবে পরিচিত। তবে প্রশ্নটা উঠেছে ব্যক্তিকে নিয়ে নয়, নীতিগত।
চেয়ারম্যান হিসাবে গোপালবাবুর প্রথম কাজটাই অবশ্য ‘চ্যালেঞ্জিং’। জেলায় থমকে থাকা প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের কাজটা এ বার সম্পন্ন করার দায় নতুন চেয়ারম্যানেরই। ২০০৯-এ নির্ধারিত নির্বাচন না-হওয়ায় জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ ‘অবৈধ’ বলে অভিযোগ তুলে পথে নেমেছিল তৃণমূল শিক্ষা সেল। সেই ‘অবৈধ’ সংসদ প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ করতে পারবে না বলে দাবি তুলেছিল তৃণমূল। তিন-তিন দফায় শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করেও স্থগিত করতে হয়েছিল। সংসদ অফিসের সামনে ধর্নায় সব আবেদনকারীকে পরীক্ষার সুযোগ দেওয়ার দাবিও তুলেছিল গোপালবাবুদের সংগঠন। সংসদের চেয়ারম্যান ওঙ্কারপ্রসাদ রায়কে অফিসে ঢুকতে না-দেওয়া, নতুন এক জন চেয়ারম্যান মনোনীত হওয়ার পরেও তাঁকে কাজে যোগ দিতে বাধার ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছিল তৃণমূল শিক্ষা সেল। গত বছরের শেষে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনের পরে অবশ্য বামেরাই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় সংসদে। কিন্তু তাতেও অচলাবস্থা কাটেনি।
বিধানসভা নির্বাচনে পূর্ব মেদিনীপুরে ১৬টি আসনেই জয় এবং রাজ্যে ক্ষমতা দখলের পরে সরকারি প্রতিনিধি এবং বিধায়ক প্রতিনিধির নিরিখেও সংসদে এখন তৃণমূলেরই নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হয়েছে। দলীয় শিক্ষা সেলের নেতাকে চেয়ারম্যান করে নতুন শাসকদল সেই নিয়ন্ত্রণ আরও শক্ত করল বলেই মনে করা হচ্ছে। কিন্তু এ বার কি আগে তোলা নিজেদের দাবি মতো সব আবেদনকারীকে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হবে? আন্দোলনের নেতা থেকে চেয়ারম্যান হয়ে যাওয়া গোপালবাবুর কাছে কিন্তু স্পষ্ট উত্তর মেলেনি। এখনও সরকারি ভাবে দায়িত্বভার নেননি, নিয়ে সব দিক বিবেচনা করে পদক্ষেপ করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
অভিজ্ঞ শিক্ষক গোপালবাবু জানেন, রাজ্যের অন্য সব জেলাতেই ২০০৯-১০ সালে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে আবেদনকারীদের একটা অংশকে মেধার ভিত্তিতে পরীক্ষায় ডাকা হয়েছিল, সবাইকে নয়। অন্য সব জেলাতেই এই ব্যবস্থা মেনেও নিয়েছিল তখনকার বিরোধীদল তৃণমূল। শুধু পূর্ব মেদিনীপুরেই তাদের নানা ওজর-আপত্তিতে ঝুলে থেকেছে হাজার-হাজার তরুণ-তরুণীর প্রাথমিক শিক্ষক হওয়ার, চাকরি পাওয়ার স্বপ্ন। এই জেলায় অধিকাংশ পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদ এবং পুরসভায় ক্ষমতাসীন তৃণমূল আসলে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের মতো ‘জনপ্রিয়’ একটি বিষয়ে নিজেদের ভূমিকা থাকবে না, সেটাই মানতে পারেনি। তাই বারে বারেই আন্দোলনে ভেস্তে গিয়েছে নিয়োগ-প্রক্রিয়া।
ইতিপূর্বে বাম-নিয়ন্ত্রিত সংসদ ৩ হাজার ৯২৪টি শূন্যপদের জন্য সওয়া দু’লক্ষের বেশি আবেদনকারীর মধ্যে থেকে ৪৫ হাজার জনকে পরীক্ষায় বসার জন্য অ্যাডমিট কার্ড পাঠিয়েছিল। অর্থাৎ শূন্যপদের প্রায় ১৫ গুণ বেশি আবেদনকারী পরীক্ষার্থী হওয়ার সুযোগ পাচ্ছিলেন। তৃণমূল শিক্ষা সেলের তখনকার দাবি ছিল, ওই সওয়া দু’লক্ষের বেশি আবেদনকারীকেই পরীক্ষায় বসতে দিতে হবে। এখন সেই শিক্ষা সেলেরই নেতা চেয়ারম্যান হয়ে বলছেন, সব দিক বিবেচনা করেই পরীক্ষার বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে! গোপালবাবুরা জানেন, অন্য জেলায় এক রকম আর পূর্ব মেদিনীপুরে অন্য রকম ব্যবস্থা করাটা বেশ কঠিন। নিয়ম-কানুন বদলাতে হবে সে ক্ষেত্রে। বিস্তর সমস্যা।
প্রাথমিক শিক্ষক হতে চাওয়া তরুণ-তরুণীরা আপাতত চাইছেন, অন্তত অচলাবস্থাটা কাটুক।
First Page Medinipur Next Story


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.