ওরা প্রত্যেকেই স্কুলপড়ুয়া। কেউ খেলাটা কিছুটা রপ্ত করেছে। কেউ একেবারেই নবিশ। এমনই এক ঝাঁক খুদে শিক্ষার্থীকে নিয়ে সম্প্রতি যৌথ ভাবে ২৪ দিনের এক কবাডি প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন করেছিল হাওড়া জেলা কবাডি অ্যাসোসিয়েশন ও বন্ধনী ব্যায়াম সমিতি। গ্রীষ্মকালীন এই প্রশিক্ষণ শিবিরের শেষে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হল শংসাপত্র।
মধ্য হাওড়ার গদাধর মিস্ত্রি লেনে বন্ধনী ব্যায়াম সমিতির মাঠে ওই প্রশিক্ষণ শিবিরে যোগ দিল স্থানীয় চারটি স্কুলের ছাত্রীরা। সাঁতরাগাছি ভানুমতী বালিকা বিদ্যালয়, মহাকালী বালিকা বিদ্যালয়, দেশবন্ধু বালিকা বিদ্যালয় ও ভবানী বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসেছিল শিক্ষার্থীরা।
বন্ধনী ব্যায়াম সমিতিতে নিয়মিত কবাডি চর্চা হয়। এই ক্লাব থেকে উঠে এসেছেন পাপিয়া দাস, তমসা দাস, তনুশ্রী দাস, বিজলি দে, তুহিনা মণ্ডল, বর্ণালী প্রধান, মিঠু দাসের মতো একাধিক জাতীয় স্তরের কবাডি খেলোয়াড়। জেলা কবাডি সংস্থার সচিব স্বপনকুমার পাঁজা বললেন, “এই ক্লাবটিতে কবাডি খেলার ভাল পরিবেশ রয়েছে। এখানে রাজ্যস্তরের ম্যাচও হয়েছে। তাই এই ক্লাবের সহায়তা নিয়ে আমরা গ্রীষ্মকালীন এই প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন করলাম।”
|
প্রশিক্ষণ নিতে এসেছিল মোট ৫৫ জন শিক্ষার্থী। তবে প্রশিক্ষণ শেষ করল ৩০ জন। প্রাক্তন দুই জাতীয় পর্যায়ের খেলোয়াড় বিজলি দে ও প্রতিমা হাজরা মেয়েদের কবাডি শেখান। কী শিখল ওরা? বন্ধনীতে কবাডি শিখেই ১৯৯৮ সালে জুনিয়র ন্যাশনালে বাংলা দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বিজলি। বললেন, “অধিকাংশই একেবারে নতুন মুখ। খেলাটা ওদের ভাল করে রপ্ত করতে আরও সময় লাগবে।” প্রতিমাদেবী বললেন, “ওয়ার্ম আপ থেকে শুরু করে কোর্টে কী ভাবে দাঁড়াবে, কী ভাবে রেডিংয়ে যাবে কিংবা ক্যাচিং করবে, সবই ওদের শেখানো হয়েছে।”
প্রশিক্ষণ নিতে আসা দেশবন্ধু বালিকা বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী অনামিকা দাস ও নবম শ্রেণির ছাত্রী কুহেলি বর এ বারের অনূর্ধ্ব-১৭ বিভাগে স্কুল বেঙ্গল কবাডিতে হাওড়া দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করে দলকে জিতিয়েছে। শংসাপত্র নিয়ে অনামিকা বলল, “দিদিদের কাছ থেকে খেলাটার অনেক কিছুই শিখতে পেরেছি। ভাল খেলোয়াড় হতে চাই।” শেষ দিনে স্কুলের ছাত্রীদের উৎসাহ দিতে এসে ভানুমতী স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা নন্দিতা কুণ্ডু বললেন, “পড়াশোনার চাপ বাড়ছে। তবু আমরা চাই পড়াশোনার সঙ্গে মেয়েরা খেলাধুলোও করুক। আমাদের মাঠ নেই। এই মাঠই ভরসা।” দেশবন্ধু স্কুলের শারীরশিক্ষক শিপ্রা রায়ের মুখেও একই সমস্যার কথা, “স্কুলের মেয়েরা খোখো, কবাডি, অ্যাথলেটিক্স-এ নিয়মিত অংশ নেয়। কিন্তু মাঠ না থাকায় সমস্যা হয়। বন্ধনী ক্লাবটি কাছে হওয়ায় কখনও কখনও মেয়েদের নিয়ে এখানে চলে আসি।”
প্রশিক্ষণ শিবিরে এসে নজর কেড়ে নেয় সুস্মিতা মজুমদার, সীমা সাউ, রিঙ্কু খাসকেল, প্রীতিলেখা মণ্ডল ও অনীতা মাইতি। শংসাপত্র ছাড়াও ওদের হাতে তুলে দেওয়া হল পুরস্কার। জেলা কবাডি সংস্থার কার্যকরী সভাপতি নিমাই দত্ত বললেন, “স্কুলছাত্রীদের কবাডির প্রতি আগ্রহ বাড়াতে এই বিশেষ প্রশিক্ষণ শিবির হল। এর পরে অন্য স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের নিয়েও এমন প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন হবে।” |