তবে ভুক্তভোগী বাসিন্দাদের অভিযোগ, শুধু নিকাশি নালা বা খাল মজে যাওয়াই নয়। শহরের অনেক জায়গায় ছোট-বড় নর্দমার উপরে বেআইনি ভাবে দোকান, বহুতল তৈরি হয়েছে। ফলে নর্দমাগুলির দীর্ঘ দিন সাফাই হয় না। সামান্য বৃষ্টি হলেই ভেসে যায় শিবপুর, টিকিয়াপাড়া থেকে গোলাবাড়ি, সালকিয়া, লিলুয়া ও বালি।
সব কিছু জেনেও পুর-কর্তৃপক্ষ উদাসীন। বাসিন্দাদের মতোই হাওড়া শহরের বেহাল নিকাশি ব্যবস্থার জন্য হাওড়া পুরসভাকেই দায়ী করেছেন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও। পুরসভা ও হাওড়া উন্নয়ন সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, হাওড়ার মূল নিকাশি-ব্যবস্থা লিলুয়ার রানি ঝিলের উপর নির্ভরশীল। তা পরিষ্কারের দায়িত্ব রেলের। কিন্তু রেলের তরফে সেই কাজ নিয়মিত না করার ফলেই এমন শোচনীয় অবস্থা। তা ছাড়া হাওড়ার তিন দিকে রেললাইনের পাশের খালগুলিও নিয়মিত সাফাই করে না রেল। যদিও এই অভিযোগ মানতে নারাজ হাওড়ার ডিআরএম পার্থসারথি মণ্ডল। তিনি বলেন, “রানি ঝিল সংস্কারের দায়িত্ব রেল ও রাজ্য সরকারের। বছর দুই আগে রেল সাত কোটি টাকা খরচ করে ঝিলটি সংস্কার করেছে। তার পরে পুরসভা বর্জ্য ফেলায় ফের ঝিলটি বুজে গিয়েছে। |
রেললাইনের পাশের খালগুলিরও সংস্কার করা হচ্ছে।” তবে শুধু রানি ঝিলই নয়। বাকসাড়া খালের জন্যও হাওড়া জলমগ্ন হচ্ছে বলে মনে করেন হাওড়া উন্নয়ন সংস্থার (এইচআইটি) চিফ ইঞ্জিনিয়ার শিখরেশ দত্ত। তিনি বলেন, “পশ্চিম হাওড়া উপনগরী তৈরির সময় বাকসাড়া খালটি পুরো বুজে গিয়েছে। ফলে জমা জল বেরনোর কোনও উপায় নেই।” সম্প্রতি হাওড়া শহরের কয়েকটি এলাকায় জল না সরার প্রতিবাদে রাস্তা অবরোধ, দোকান ও যানবাহন ভাঙচুর করে উত্তেজিত জনতা। এর পরেই মধ্য হাওড়ার তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের কৃষি বিপণনমন্ত্রী অরূপ রায়কে সঙ্গে নিয়ে জলমগ্ন এলাকাগুলি ঘুরে দেখেন পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।
হাওড়ার বেশ কয়েকটি নিকাশি নালার জল গিয়ে পড়ে হাওড়া ড্রেনেজ ক্যানালে। ছ’টি শাখায় বিভক্ত ওই দীর্ঘ খালটি ডানকুনি থেকে বালি, দিল্লি রোড, শলপ মোড়, মৌখালি, নাজিরগঞ্জ হয়ে হুগলি নদীতে মিশেছে। অভিযোগ, ওই খালটিও সংস্কারের অভাবে ধুঁকছে। পুরমন্ত্রী শহরের জলমগ্ন এলাকা পরিদর্শনের সময়
বাসিন্দারা এই ড্রেনেজ ক্যানাল নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগও জানান। তাঁদের কথায়, ওই খালের দু’পাশ বেদখল হয়ে গিয়েছে। এ ছাড়াও খালের উপর দিয়েই যাতায়াতের সুবিধার জন্য কালভার্ট তৈরি হওয়ায় জল যাওয়ার পথ সঙ্কীর্ণ হয়ে গিয়েছে। সমস্যা রয়েছে শেওড়াপোঁতা, স্বর্ণময়ী, বালি খাল, পচা খাল ও পিঁজরাপোল খালেও। |
পুরসভার ইঞ্জিনিয়াররা পুরমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, হাওড়া শহরের ভূগর্ভস্থ নিকাশি নালার কোনও নির্দিষ্ট মানচিত্রই নেই। ফলে বেশ কয়েকটি নিকাশি নালা দীর্ঘ দিন সংস্কারই হয়নি। পুরমন্ত্রী হাওড়ার পুর ইঞ্জিনিয়ারদের একটি মানচিত্র তৈরি করে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের সঙ্গে বৈঠকে বসার নির্দেশ দেন। পুর মন্ত্রীর অভিযোগ, “ঠিকমতো কাজ হলে এ বারের বৃষ্টিতে হাওড়া শহরের এই হাল হত না।” পাশাপাশি নিকাশি নালার উপরে বহুতল ও দোকান তৈরির বিষয়েও পুরসভার বিরুদ্ধেই তোপ দাগেন পুরমন্ত্রী। তিনি বলেন, “দশ বছরে এত বহুতল কী করে তৈরি হল তা তদন্ত করে দেখা হবে। মেয়রের কাছেও বিষয়টি জানতে চাওয়া হবে।” পুরমন্ত্রীর মতো পুরসভার অব্যবস্থার দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন অরূপ রায়ও। তাঁর বক্তব্য: “কেন্দ্রীয় সরকারের টাকায় চার বছর ধরে শুধু লোকদেখানো কাজ হয়েছে। যথেচ্ছ প্লাস্টিক নর্দমায় ফেলা হয়েছে। হাওড়ায় সবার আগে প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। তার উপর দীর্ঘ দিন সাফাই না হওয়ায় অনেক নিকাশিনালা বুজে গিয়েছে।” একই অভিযোগ হাওড়া পুরসভার বিরোধী দলনেতা তৃণমূলের অরুণ রায়চৌধুরীর। হাওড়া পুরসভার নিকাশির দায়িত্বে আছেন স্বয়ং মেয়র মমতা জয়সোয়াল। তিনি এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।
|