|
|
|
|
এক ধাক্কায় রান্নার গ্যাস বাড়ল ৫০, ডিজেল ৩ টাকা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
ইঙ্গিত ছিল অনেক আগে থেকেই। বরং পিছুটান ছিল রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার। বিশেষত পশ্চিমবঙ্গ-সহ পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের। গত মাসে সেই ভোটের ফল ঘোষণার অব্যবহিত পরেই পেট্রোলের দাম এক ধাক্কায় লিটারপিছু পাঁচ টাকা বাড়িয়েছিল রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলি। আর শুক্রবার ডিজেল, রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার এবং রেশন দোকানে বিক্রি হওয়া কেরোসিনের দাম এক লাফে অনেকটাই বাড়ানোর কথা ঘোষণা করল কেন্দ্র। শুক্রবার মধ্যরাত থেকেই এই বর্ধিত দাম চালু হল। যদিও শরিক দলগুলি সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, ডিজেলের দাম লিটার-পিছু বাড়ছে ৩ টাকা। রান্নার গ্যাস-সিলিন্ডারের দাম এক লাফে বাড়ছে ৫০ টাকা করে। ডিজেল ও রান্নার গ্যাসের দাম ঠিক এক বছরের মাথায় বাড়ানো হল। দাম বাড়ছে রেশন দোকানে বিক্রি হওয়া কেরোসিনও। প্রতি লিটারে ২ টাকা। এর সঙ্গে যোগ হবে প্রতিটি রাজ্যের নিজস্ব শুল্ক। আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধির জমানায় হেঁশেলের খরচ সামাল দেওয়া নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের পক্ষে আরও কঠিন হবে। সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে পথে নামবে বলে জানিয়েছে বাম ও বিজেপি। সরকারের সবচেয়ে বড় শরিক তৃণমূল কংগ্রেস এই মূল্যবৃদ্ধির তীব্র সমালোচনা করেছে। তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় অবশ্য জানিয়েছেন, রাজ্যগুলি শুল্ক কমিয়ে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দেওয়ার কথা ভাবুক। বে-লাগাম মূল্যবৃদ্ধির জেরে নাভিশ্বাস উঠতে থাকা আমজনতার ‘বোঝা’ কমাতে যে তারা সত্যিই আন্তরিক, তা বোঝাতে পেট্রোপণ্যের উপর শুল্ক কমানোর কথাও আজ ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। এ দিন পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী জয়পাল রেড্ডি জানান, অশোধিত তেলের উপর ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক তুলে দেওয়া হয়েছে। প্রায় একই পরিমাণে কমছে অন্যান্য পেট্রোলিয়াম পণ্যের উপর আমদানি শুল্কও। প্রতি লিটার ডিজেলের উৎপাদন শুল্ক ৪.৬০ টাকা থেকে কমিয়ে আনা হচ্ছে ২ টাকায়। রেড্ডির দাবি, ডিজেলের উৎপাদন শুল্ক এর থেকে আর কমানো সম্ভব ছিল না। কারণ, ওই টাকা নির্দিষ্ট করা রয়েছে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সড়ক তহবিল (সেন্ট্রাল রোড ফান্ড) এবং শিক্ষা সেসের জন্য। রেড্ডির দাবি, এই শুল্ক হ্রাসের ফলে কেন্দ্রের মোট রাজস্ব আয় কমবে ৪৯ হাজার কোটি টাকা। উল্টো দিকে, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির দৌলতে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির ক্ষতির পরিমাণ কমবে ২১ হাজার কোটি টাকা। তবে, এর পরও রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলির লোকসান ১.২০ লক্ষ টাকায় দাঁড়াবে বলে দাবি তাঁর।
প্রণব মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে মন্ত্রিগোষ্ঠীর বৈঠকে ডিজেল-রান্নার গ্যাস-কেরোসিনের দাম বাড়ানোর কথা ছিল আজ দুপুরেই। কিন্তু সেই বৈঠক পিছিয়ে দেওয়া হয়। সন্ধ্যায় বৈঠক হলেও সেখানে উপস্থিত ছিলেন না ইউপিএ-র দুই শরিক দলের নেতা শরদ পওয়ার ও আলাগিরি। মনমোহন মন্ত্রিসভার এক সদস্যের কথায়, “অনেক দিন ধরেই এই মন্ত্রিগোষ্ঠীর বৈঠক এড়িয়ে যাচ্ছেন শরিক দলের নেতারা। দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের সঙ্গে নিজেদের জড়াতে চান না তাঁরা। তা সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক বাজারে যে ভাবে অপরিশোধিত তেলের দাম বাড়ছে, তাতে দাম বাড়ানো ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না। এর ফলে সরকারের রাজস্ব ঘাটতি যেমন হবে, তেমনই মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কার থেকেও মুক্ত থাকার কোনও উপায় নেই।”
পরে জয়পাল রেড্ডি বলেন, “জনমুখীনতা ও অর্থনীতির বাস্তব পরিস্থিতির জাঁতাকলে আমি পড়ে রয়েছি। এক পক্ষ বলে দাম বাড়ানোর কোনও যৌক্তিকতা নেই! অন্য পক্ষ বলে দাম বাড়াতেই হবে! এর মধ্যেই সব থেকে যতটা কম বাড়ানো যায়, সেই পথেই হেঁটেছে সরকার।”
তেল-রান্নার গ্যাসের দাম বাড়ানোর মতো বিষয়কে যে বিরোধীরা আঁকড়ে ধরবে, তা ভালই জানে কেন্দ্র। রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার পিছু দাম এক ধাক্কায় ৫০ টাকা বাড়ানোর বিষয়টিও মাথায় রাখছে সরকার। নিম্নবিত্তের বোঝা বাড়িয়ে কেরোসিনের দাম বাড়ানোর ঝুঁকিও নিতে হয়েছে তাদের। পাল্টা যুক্তি হিসেব সরকারও অটলবিহারী বাজপেয়ীর জমানায় রান্নার গ্যাসের দাম এক ধাক্কায় ৫০ টাকার বেশি দাম বাড়ানোর প্রসঙ্গ তুলছে। আজ জয়পাল জানান, ২০০০ সালে সেই সিদ্ধান্তের ছ’মাসের মাথায় গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম ফের ৩৫ টাকা বাড়ানো হয়। সমালোচনার মুখে দাম তারা প্রত্যাহার করে বটে, কিন্তু সেটি প্রতি সিলিন্ডারে মাত্র ১০ টাকা!
তবে জয়পালের যুক্তিতে কানই দিতে চাননি বিরোধীরা। এমনিতেই দুর্নীতি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে ক্রমশ সুর চড়াচ্ছে বিজেপি ও বাম। তার উপরে পেট্রোপণ্যের এই মূল্যবৃদ্ধি তাদের হাতে বাড়তি অস্ত্র তুলে দিয়েছে। দুর্নীতির সঙ্গে মূল্যবৃদ্ধিকেও হাতিয়ার করে সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে তারা। সংসদের অধিবেশন শুরু না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা যে বিষয়টিকে জিইয়ে রাখতে চান, তার ইঙ্গিত দিয়েছেন বিজেপি নেতারা। সিপিএমের অভিযোগ, সরকার ভর্তুকি তুলে দেওয়ার জন্য এ ভাবে সাধারণ মানুষের ঘাড়ে বোঝা চাপাচ্ছে। আবার অন্য দিকে, বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠীগুলিকে কোটি টি টাকা কর ছাড় দিচ্ছে! সরকারের সমালোচনার পাশাপাশি তৃণমূল কংগ্রেসকেও কটাক্ষ করেছে সিপিএম। |
|
|
|
|
|