|
|
|
|
কেশপুর-গড়বেতায় বেপাত্তা প্রধানরা, থমকে আছে উন্নয়ন |
বরুণ দে • মেদিনীপুর |
বিধানসভা নির্বাচনে বদলে গিয়েছে রাজনৈতিক সমীকরণ। পশ্চিম মেদিনীপুরের মতো ‘লালদুর্গে’ও বিপর্যস্ত হয়েছে সিপিএম। আর তার পর থেকেই এত দিনের শক্ত ঘাঁটিতে ‘রোষে’র মুখে পড়েছে তারা। দলীয় অফিস বন্ধ হয়েছে। নেতা-কর্মীরাও নানা আশঙ্কায় এলাকা ছাড়া। এই ‘পরিবর্তন’ শুধু রাজনৈতিক-সাংগঠনিক পর্যায়েই থেমে থাকেনি। স্থানীয় প্রশাসনিক স্তরেও অচলাবস্থা তৈরি করেছে।
কেশপুর, গড়বেতার মতো একদা সিপিএমের ‘গড়’-এ গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতির প্রধান, সভাপতি, কর্মাধ্যক্ষরা এলাকাছাড়া হওয়ায় মাস খানেক ধরে শিকেয় উঠেছে উন্নয়নের কাজ। পঞ্চায়েত থেকে নানা রকম শংসাপত্র দেওয়ার কাজ থমকে গিয়েছে। বিধবা বা বার্ধক্য ভাতা, তফসিলিদের ভাতা প্রদান, একশো দিনের প্রকল্প, ইন্দিরা আবাস যোজনায় সাহায্য দানের মতো সামাজিক সুরক্ষামূলক কর্মসূচিও ব্যাহত হচ্ছে।
সবথেকে খারাপ অবস্থা কেশপুরেই। এখানে সিপিএমের শতাধিক দলীয় কার্যালয় বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি একের পর এক গ্রাম পঞ্চায়েত, এমনকী পঞ্চায়েত সমিতির কাজও স্তব্ধ। গড়বেতার দাসেরবাঁধের কাছে হাড়গোড় উদ্ধারের পরে ন’বছর আগে কেশপুরের এক ‘গণহত্যা’ নিয়ে নতুন করে মামলা দায়ের হওয়ায় এলাকা ছাড়া হয়েছেন কেশপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তড়িৎ খাটুয়া। এমনকী তাঁকে ফোনেও পাওয়া যাচ্ছে না।
কেশপুর ব্লকের ১৫টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে দু’তিনটি ছাড়া বাকিগুলির প্রধানরাও গ্রামছাড়া। অনেক কর্মাধ্যক্ষেরও একই অবস্থা। পঞ্চায়েত সমিতি বা গ্রাম পঞ্চায়েতের বৈঠকে হাজির থাকছেন না তাঁরা। ফলে পরিকল্পনা তৈরি বা কাজের উদ্যোগকোনওটাই হচ্ছে না। কমবেশি একই পরিস্থিতি গড়বেতায়। তবে সেখানে পরিস্থিতি কিছুটা শুধরোতে শুরু করেছে। গরঙ্গা পঞ্চায়েতের প্রধান অবশ্য এখনও অফিসে আসছেন না। ঝাড়গ্রাম মহকুমার সাঁকরাইল পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী আবার পদত্যাগ করেছেন। খড়্গপুর মহকুমার দাঁতন, নারায়ণগড়ে বেশ কয়েকটি পঞ্চায়েতে একাধিক সদস্যের দলবদল করিয়ে অনাস্থায় সিপিএমের প্রধানদের সরানো শুরু করেছে তৃণমূল।
সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বিজয় পালের অভিযোগ, “ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকেই জেলা জুড়ে সন্ত্রাস চালাচ্ছে তৃণমূল। ওদের সন্ত্রাসের কারণেই অনেকে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। কোথাও আবার জোর করে পঞ্চায়েতে অনাস্থা পাস করানো হচ্ছে।” নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কেশপুরের এক পঞ্চায়েত প্রধান বলেন, “প্রতি মাসে সভা না-হলে উন্নয়নের কাজ বন্ধ হয়ে যাবে। মে মাসে সভা ডেকেছিলাম। তৃণমূলের কিছু লোক এসে বলল, এখন সভা করা যাবে না।” হুমকি-হামলার অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়ের বক্তব্য, “কয়েকটি বাদে জেলার বেশির ভাগ পঞ্চায়েতে স্বাভাবিক কাজকর্মই হচ্ছে। কিন্তু কেউ যদি অফিসে আসতে না-চান, তাঁকে তো জোর করে আনা যায় না! আমাদের দিক থেকে সহযোগিতার অভাব হবে না।” জেলা প্রশাসন আপাতত প্রতিটি ব্লকে সর্বদলীয় বৈঠকে করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার উদ্যোগ শুরু করেছে। জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্তর বক্তব্য, “পঞ্চায়েতের কাজ না-হলে সাধারণ মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাই কাজকর্ম স্বাভাবিক রাখতে উদ্যোগ শুরু হয়েছে।” জেলা পরিষদের সিপিএম সভাধিপতি অন্তরা ভট্টাচার্যও ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে স্বাভাবিক কাজকর্ম চালু রাখতে সবার কাছে সহযোগিতার আবেদন করেছেন। |
|
|
|
|
|