|
|
|
|
সম্পাদকীয় ২... |
বর্ষা, বন্যা, সরকার |
মৌসুমি বর্ষণের অবিশ্রাম ধারা এখনও শুরু হয় নাই। খাল-বিল, নদী-নালা শুকনোই ছিল, শুকনো ছিল মাটিও। তথাপি আষাঢ়ের প্রথম সপ্তাহে একটি মাঝারি শক্তির নিম্নচাপ সমৃদ্ধ বর্ষা আগমনীতেই দক্ষিণবঙ্গে যে প্লাবন বহাইয়া দিয়াছে, তাহা রীতিমত উদ্বেগজনক। বিশেষত মেদিনীপুরের মতো বন্যাপ্রবণ জেলায় কংসাবতীর জলোচ্ছ্বাস যদি এখনই জনসাধারণের জন্য এমন দুর্দশা বহিয়া আনে, তবে শ্রাবণ-ভাদ্রের ভরা বর্ষায় কী হইবে? পশ্চিমবঙ্গের বর্ষাচিত্র এতটুকুও বদলায় নাই, সত্য। মহাকরণে নূতন সরকার গদিয়ান হইলেও রাতারাতি তাহা বদলাইবে না, ইহাও সত্য। কিন্তু বন্যার শঙ্কা রোধ এবং বন্যার্তদের ত্রাণ ও পুনর্বাসন, উভয় ক্ষেত্রেই চিরকালীন অকর্মণ্যতা ও দলবাজির সংস্কৃতি হইতে বাহির হইয়া আসার সময় আসিয়াছে। সামান্য বৃষ্টিতে কিংবা ডিভিসির জলাধার হইতে কয়েক হাজার কিউসেক জল ছাড়িলেই কংসাবতী, কেলেঘাই, ক্ষীরপাই, দামোদর, রূপনারায়ণ কূল ছাপাইয়া দুই ধারের জনপদ ভাসাইবে, এই অবস্থা চলিতে পারে না।
নূতন সরকারের কাছে নূতন প্রত্যাশা অযৌক্তিক নয়। রাজ্যবাসী বোধহয় এ বার আশা করিতেই পারেন যে, বন্যাত্রাণের চেয়েও বন্যারোধে সরকার স্থায়ী পরিকল্পনা রূপায়ণ করিবে। পরিত্যক্ত নিম্ন দামোদর প্রকল্প উজ্জীবিত করাই হোক কিংবা নূতন কোনও প্রকল্প রচনা করা, নদী-বিশেষজ্ঞদের সাহায্যে অবিলম্বে দক্ষিণবঙ্গের বন্যাপ্রবণ নদীগুলির বুজিয়া-যাওয়া খাত হইতে পলি অপসারণ করিয়া সেগুলির নাব্যতা বাড়ানো দরকার, যাহাতে সেগুলির জলধারণ ক্ষমতা বাড়ে এবং অল্প বর্ষণেই প্লাবন সৃষ্টি না-হয়। যে-সব অঞ্চল প্রাকৃতিক ভাবেই গামলা বা বাটির মতো, সেখান হইতে বদ্ধ জল দ্রুত নিষ্কাশনের উপায়ও বাহির করা উচিত। অন্যথায় বছরের পর বছর বন্যার একই গল্প পুনরাবৃত্ত হইয়া চলিবে। বন্যাত্রাণ ও পুনর্বাসনে গত ত্রিশ-চল্লিশ বছরে সরকারের যে বিপুল অর্থ ব্যয় হইয়াছে, বন্যারোধ প্রকল্প তাহার চেয়ে স্বল্প ব্যয়েই সম্পূর্ণ করা যাইত। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার বদলে আশু রিলিফ দিয়া ভোটের বাক্স ভরাইবার চিন্তাই রাজ্যের রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষকে সুসংহত বন্যা-নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প রূপায়ণে অনাগ্রহী করিয়াছে। নূতন সরকারের কাছে এ ব্যাপারে রাজ্যবাসীর প্রত্যাশা রহিয়াছে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁহার মন্ত্রকের কাজকর্ম সুষ্ঠু ভাবে হইতেছে কি না দেখিতে শহরে ব্যাপক ভাবে ঘুরিতেছেন। দার্জিলিং সহ উত্তরবঙ্গেও মন্ত্রীদের একটি দল ঘুরিয়া আসিল। তুলনায় দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে মন্ত্রীদের পদবিক্ষেপ তত নিবিড় নয়। মহাকরণ বা সচিবালয়ে বসিয়া ফাইল স্বাক্ষর করার পুরানো কার্যপদ্ধতি প্রশাসনকে চলিষ্ণু করার শ্রেষ্ঠ পন্থা নয়। মন্ত্রীরা দফতরে বসিয়া থাকিলে অফিসাররাও বসিয়া থাকেন, কর্মীরাও। নদী-সংস্কার, বন্যারোধ বা বন্যাত্রাণের মতো কাজগুলি কিন্তু কেবল দফতরে বসিয়া করার নয়। মমতা-মন্ত্রিসভার সমস্ত সদস্য তাঁহার দ্বারা সবিশেষ অনুপ্রাণিত হইতেছেন, ইহা এখনও দৃশ্যমান নয়। কলিকাতার নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্য বিধানের প্রশ্নে অবশ্য সংশ্লিষ্ট পুরসভা, নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ও আধিকারিকদের তৎপরতায় কোনও খামতি নাই। রাজধানী শহরের বাসিন্দারা তাহার সুফলও পাইতেছেন। কিন্তু কলিকাতার বাহিরে যে বিস্তৃত জনপদ, সরকারকে তাহাদের প্রতিও সুবিচার করিতে হইবে। |
|
|
|
|
|