|
|
|
|
তিন হাসপাতালে পরিদর্শন |
পরিষেবা উন্নতিতে নানা দাওয়াই স্বাস্থ্য অধিকর্তার |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কাটোয়া |
মুর্শিদাবাদের মান্নিহার বিবি ছেলেকে নিয়ে ভর্তি কাটোয়া হাসপাতালে। ভর্তি হওয়ার আগে বহরমপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ছেলের চিকিৎসা করান তিনি। আগের চিকিৎসকের ওষুধ খাওয়ানোরই পরামর্শ দেন এখানকার শিশু চিকিৎসক। হাসপাতাল সুপার সোমনাথ মুখোপাধ্যায়কে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা শুভময় দত্তচৌধুরীর প্রশ্ন, ‘‘তাহলে কি ধরে নিতে হবে, এই চিকিৎসক কোনও চিকিৎসাই করেননি?” বেড টিকিটটির প্রতিলিপি নেন তিনি।
এর পরেই মহিলা ওয়ার্ড। স্বাস্থ্য কর্তারা সেখানে গিয়ে দেখা পেলেন ওকড়সা গ্রামের নজিমুল্লা শেখের। স্বাস্থ্যকর্তাকে তাঁর অভিযোগ, “নানা বিভাগেই কর্মীদের একাংশ জোর করে টাকা কেড়ে নিচ্ছেন। প্রতিকার চাই।” তাঁকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করার জন্য বললেন শুভময়বাবু।
হাতের কাছে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তাকে পেয়ে বিভিন্ন অভিযোগ করলেন রোগীরা। জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে মিলল নানা চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একের পর এক হাসপাতালে পরিদর্শন করছেন। সেই পথেই হাসপাতালে নজরদারি করতে বেরিয়ে পড়েছেন রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তাও। শনিবার কাটোয়া হাসপাতালে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা শুভময় দত্তচৌধুরী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর দেখানো পথেই মহকুমা ও জেলা হাসপাতালগুলি পরিদর্শন করছি। এই পরিকাঠামোতেও ভাল কাজ করা সম্ভব।”
ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, ২১ জুলাইয়ের পর তিনি রাজ্য ঘুরে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পরিকাঠামো ও সমস্যা দেখবেন। গত সপ্তাহেই কলকাতার টাউন হলে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের এক সভায় মুখ্যমন্ত্রী জানান, স্বাস্থ্যের বড়কর্তাদেরও কলকাতা ছেড়ে জেলায় জেলায় গিয়ে পরিস্থিতি দেখে তাঁর কাছে রির্পোট দিতে হবে। যদিও রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন, ওই ঘোষণার আগে থেকেই তাঁরা ‘পরিদর্শন’ করছেন। বর্ধমান জেলার আগে তাঁরা নদিয়া, পূর্ব মেদিনীপুর ঘুরে এসেছেন। প্রতি শুক্রবার ও শনিবার জেলার হাসপাতালগুলি স্বাস্থ্যকর্তারা ঘুরে দেখছেন। এই পরিদর্শনে থাকছেন রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা শুভময় দত্তচৌধুরী, উপস্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন সরপুরিয়া ও জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের এক আধিকারিক।
শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ স্বাস্থ্যকর্তারা আসানসোল মহকুমা হাসপাতালে যান। ইতিমধ্যেই ওই হাসপাতালকে জেলা হাসপাতাল স্তরে উন্নীত করা হবে বলে ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। জেলা হাসপাতাল করতে গেলে কী কী পরিকাঠামোগত উন্নয়ন করা প্রয়োজন তা খতিয়ে দেখেন স্বাস্থ্যকর্তারা। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, এখানে অনুমোদিত শয্যার সংখ্যা ৪৫০টি। অথচ ২৭৫টি শয্যায় রোগী থাকেন। স্বাস্থ্যকর্তাদের ধারণা, পরিকাঠামো অনুযায়ী আরও ১০০টি শয্যা অনায়াসে বাড়ানো সম্ভব। এছাড়াও ১০ শয্যার সিক নিউবর্ন কেয়ার ইউনিট ও ১০ শয্যার ট্রমা সেন্টার তৈরি হবে। ট্রমা সেন্টার তৈরির জন্য কেন্দ্রীয় সরকার অর্থসাহায্য করছে বলে বিশ্বরঞ্জন সরপুরিয়া জানিয়েছেন। তবে এই হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতা ও জরুরি বিভাগ নিয়ে বারবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা শুভময় দত্তচৌধুরী।
শনিবার সকাল ১০টা নাগাদ স্বাস্থ্যকর্তারা পৌঁছন দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে। তাঁদের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, প্রসূতি বিভাগে চিকিৎসকের সংখ্যা কম। অন্তত এক জন চিকিৎসক শীঘ্র প্রয়োজন। জরুরি বিভাগের পরিষেবা নিয়েও অসন্তুষ্ট স্বাস্থ্য অধিকর্তা। নিদিষ্ট সময়ে বহির্বিভাগ শুরু হয় না, এমন অভিযোগ পান তিনি। এ ব্যাপারে চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি ক্ষোভ প্রকাশও করেন।
বেলা ২টো নাগাদ কাটোয়া হাসপাতালে যান স্বাস্থ্যকর্তারা। সঙ্গে ছিলেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তন্ময় মুখোপাধ্যায়। প্রথমেই তাঁরা জরুরি বিভাগ ঘুরে দেখেন। সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এক্স-রে বিভাগ দু’টি পর্যায়ে খুলে রাখতে সুপার সোমনাথ মুখোপাধ্যায়কে নির্দেশ দেন তিনি।
ফেরার আগে বলেন, “গান শুনে, টিভি দেখে রোগীদের সময় কাটছে দেখে ভাল লাগল। পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেমে নানা রকম কর্মসূচির প্রচার কানে এল। অন্য হাসপাতালেও যাতে এ সব করা যায় তার জন্য স্বাস্থ্য দফতর উদ্যোগী হবে।”
প্রতিটি হাসপাতালের সুপারদের প্রতি তাঁর নির্দেশ, প্রসূতিদের সাধারণ প্রসব কতগুলি হচ্ছে এবং কোন ব্লক থেকে কত প্রসূতি আসছেন, তা নিয়মিত স্বাস্থ্য দফতরে জানাতে হবে। রাজ্যের এক সহকারী স্বাস্থ্য অধিকর্তার মতে, “এই নির্দেশের ফলে আমাদের হাতে সরাসরি ব্লকভিত্তিক তথ্য আসবে। কোন কোন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সাধারণ প্রসব কম হচ্ছে তা দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।” |
|
|
|
|
|