হায়দরাবাদে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের শেষ দিনে সাংবাদিকদের জন্য মধ্যাহ্নভোজের ব্যবস্থা করেছিল অন্ধ্রপ্রদেশ সিপিএম। সুন্দরাইয়া বিজ্ঞান কেন্দ্রমের যে বাড়ির বেসমেন্টের প্রেক্ষাগৃহে বৈঠক বসেছিল, সেই বাড়িরই ছাদের ছাউনির নীচে লাইন দিয়ে বিরিয়ানির আয়োজন ছিল। সঙ্গে সাদা ভাত এবং দই। শরীর ঠান্ডা রাখতে। অন্ধ্র সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা এসএফআইয়ের প্রাক্তন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ওয়াই ভি রাও সাংবাদিকদের ব্যক্তিগত ভাবে আপ্যায়ন করেছেন। সে দিনই দুপুরে একটি বই এবং একটি পুস্তিকা প্রকাশের অনুষ্ঠান ছিল পশ্চিমবঙ্গ থেকে রাজ্যসভার সাংসদ তথা পলিটব্যুরো সদস্য সীতারাম ইয়েচুরির। অন্ধ্র আবার ইয়েচুরির নিজের রাজ্য। বাংলার সাংবাদিকেরা তাঁর কাছে অনুযোগ জানালেন, আলিমুদ্দিনে অপেক্ষা করা মানে শাস্তি! সাংবাদিক বৈঠক ব্যতিরেকে জল-চায়ের ব্যবস্থাটুকুও থাকে না। আর ক্ষমতায় না-থাকা এক রাজ্যদল বিরিয়ানি খাওয়ায়! ইয়েচুরি প্রথমে হেসে ‘ম্যানেজ’ দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। এক জন তাঁকে জানালেন, রাজ্য কমিটির শেষ বৈঠকের সময় আলিমুদ্দিনের নীচের একটি ঘর সাংবাদিকদের বসার জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল। ইয়েচুরি বললেন, হচ্ছে তো একটু একটু করে! আলিমুদ্দিনে তো কলকাতার সাংবাদিকেরা আর অতিথি নন!
|
দিল্লির পাট চুকিয়ে এলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সচিব গৌতম সান্যাল। যেমন দিল্লি-বাস আপাতত শেষ করে কলকাতায় ফেরত এলেন সিএমও-র অন্য অফিসার শান্তনু বসুও। ফেরার সময় দিল্লির বেঙ্গলি মার্কেট থেকে কলকাতার সহকর্মীদের জন্য দু’বাক্স লাড্ডু নিয়ে এসেছিলেন। অফিস ছুটির পরে যখন বেরোচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী, সেলোফেনে মোড়া লাড্ডুর বাক্স নিয়ে এলেন তরুণ আইএএস। মিষ্টি খেতে ইচ্ছে থাকলেও ওজন বাড়ার ভয়ে খান না মমতা। সে দিনও একটু ভেঙে মুখে দিলেন স্রেফ। বাকিগুলো উড়ে গেল উপস্থিত মন্ত্রী-অফিসার-সাংবাদিক এবং মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশকর্মীদের সৌজন্যে। কেউ এক বারও বললেন না, ‘দিল্লি কা লাড্ডু.. যো খায়া..’ ইত্যাদি! |
রাজ্যপালের বক্তৃতার উপরে বিতর্কে নাম ডাকা সত্ত্বেও সভায় অনুপস্থিত সিপিএমের এক মহিলা বিধায়ক। বামফ্রন্টের সহকারী দলনেতা সুভাষ নস্কর বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের ঘরে গিয়ে বললেন, এমন হতে থাকলে খারাপ ‘বার্তা’ যাবে বাম বিধায়কদের সম্পর্কে। তখনই ঝটিতি সেই বিধায়কের প্রবেশ। পরিচয় জেনে সূর্যবাবু বললেন, “ওহ্, আপনিই! ছিলেন কোথায়?” বিধায়ক সটান বললেন, তাঁকে বলাই হয়নি যে, বলতে হবে! সূর্যবাবু সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। বিধায়ক বললেন, “কী বলব, পয়েন্ট বলে দিন।” সূর্যবাবু বোঝাতে লাগলেন, ও ভাবে বলে দেওয়ার কিছু নেই। ভোটের প্রচারে এত বলেছেন। তার কিছুটা বললেই হবে। নাছোড় বিধায়কের যুক্তি, এলাকায় ভোটের প্রচার আর রাজ্যপালের ভাষণের উপরে বিতর্ক এক নয়। শেষ পর্যন্ত সূর্যবাবুর ‘বিড়ম্বনা’ কাটাতে সুভাষবাবু বাইরে নিয়ে গেলেন বিধায়ককে। সূর্যবাবু বুঝলেন, পরিবর্তনে আরও কত ঝকমারি!
|
যত দিন বামফ্রন্ট সরকার ছিল, দ্বিপাক্ষিক বা বহুপাক্ষিক কোনও বৈঠক নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ইতস্তত করতেন সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদক মঞ্জুকুমার মজুমদার। প্রাণপণ চেষ্টা করতেন ভিতরের কথা গোপন করার। ভোট-বিপর্যয়ের পরে দলে আলোচনায় দেখেছেন, বৈঠকের ভিতরে সিপিএমকে বলে কাজ হয়নি। প্রকাশ্যে কিছু কথা বলে দিলে বরং ভাল হত। মঞ্জুবাবু এখন বলছেন, “যতটা বলার, এ বার সংবাদমাধ্যমকে বলেই দেব। খবর তো সেই বেরিয়েই যায়! তার চেয়ে ঠিক জিনিসটা বলে দিলে ভুলভাল ব্যাখ্যা হবে না!” |
বিধানসভার লবিতে দু’জনের হঠাৎ দেখা। অর্ঘ্য রায়প্রধান এগিয়ে এসে উদয়ন গুহের হাত ধরলেন। কেমন আছেন? পাল্টা সৌজন্য ফেরালেন উদয়ন। দু’জনেরই পিতা কোচবিহারে ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রথিতযশা নেতা। অমর রায়প্রধান এবং কমল গুহ। প্রাক্তন মন্ত্রী কমলবাবু ইতিমধ্যেই প্রয়াত। প্রাক্তন সাংসদ অমরবাবু শয্যাশায়ী। তাঁর ছেলে অর্ঘ্যকে টিকিট দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অর্ঘ্য-উদয়নকে করমর্দন করতে দেখে এক জন চোখা মন্তব্য করলেন, “এই তো! তৃণমূল-ফরওয়ার্ড ব্লক হাত মেলাচ্ছে!” জবাবে উদয়ন, “কী ভেবেছিলেন? মারামারি করব?” |