পরপর বেশ কয়েকদিন ৩৮, ৩৯ ডিগ্রি তাপমাত্রার গরমের পরেই হঠাৎ একটানা বৃষ্টিআবহাওয়ার এই পরিবর্তনে বিপর্যস্ত নদিয়ার জনজীবন।
গত বৃহস্পতিবার থেকে রবিবার দুপুর পর্যন্ত একটানা বর্ষণে তাপমাত্রা যেমন কমে গিয়েছে, তেমনই চারপাশও বেশ সজল সবুজ হয়ে উঠেছে। শুকনো নদীর খাত ভরে উঠেছে। শুষ্ক জলাশয়ের নীচের মাটি আর দেখা যায় না। রেললাইনের ধারে, পিচ রাস্তার গা বেয়ে সবুজের প্রকোপ বেড়েছে। তেমনই দু’টি বাড়ির মধ্যের গলির সরু রাস্তাটির উপরের শুকনো কালো মাটিও যেন কোথাও কোথাও প্রাণ ধারণ করেছে। মাথা চাড়া দিয়েছে কচি ঘাসের ডগা। রবিবারের সারাটা দিনই তাই কেটেছে ভরা আলস্যে। সকালে ভিজে ভিজে ছাতা মাথায় বাজারে যাওয়াটুকু ছাড়া কেউই তেমন রাস্তায় বেরোননি। নবদ্বীপের অনেক পাড়ায় বিকেল থেকে জমজমাট হয়েছে ক্লাবগুলো। বিকেলে বৃষ্টি থামতে অবশ্য জনজীবন আস্তে আস্তে আবার একটু জেগে ওঠে। সোমবার আবার বৃষ্টি হবে কি না, সে খবরটাই সন্ধ্যায় সন্ধান করে গিয়েছেন নিত্যযাত্রীরা। এই দিন অবশ্য রাস্তায় যানবাহন ছিল খুবই কম। নদিয়া জেলা নিত্যযাত্রী সমিতির সম্পাদক প্রশান্ত কুমার দে বলেন, “এমনিতেই ছুটির দিন। তার উপরে বৃষ্টির কারণে মানুষ যেমন কম বেরিয়েছেন তেমনই বাসও কম ছিল। কিন্তু সোমবার থেকে পরিস্থিতি কেমন থাকে, তা নিয়ে চিন্তা যাচ্ছে না।”
কলকাতা সহ রাজ্যের সর্বত্র বৃষ্টি হওয়ায় বিঘ্নিত হয়েছে পণ্য পরিবহণ। অনেক জায়গায় দৈনন্দিন বাজারের সব্জি বা মাছও ঠিক মতো পৌঁছচ্ছে না। ফেল যোগান কম হয়ে গিয়েছে। দাম অতএব চড়ছে। চাষিরা বলছেন বৃষ্টির জন্য কিছু কিছু ক্ষেত্রে শাকসব্জির ফলন যেমন সংগ্রহ করা যায়নি, তেমন বহু পণ্য আসছেও না বাজারে। নবদ্বীপ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক তথা ব্যবসায়ীদের জেলা সংগঠনের অন্যতম কর্তা উত্তম সাহা বলেন, “গত তিন দিন ধরে ব্যবসা বাণিজ্য কার্যত স্তব্ধ। এই সময়টাকে এমনিতে ‘আম মন্দা’ বলে। কারণ, আমের জন্য সব ধরনের খাদ্যদ্রব্যে মন্দা চলে। তার সঙ্গে লাগাতার এই বৃষ্টি। বলতে গেলে আমদানি, খুচরো, পাইকারি সব ধরনের ব্যবসাই এক রকম বন্ধ। এখন মাল নিয়ে যাওয়া নিয়ে আসায় অতিরিক্ত খরচা হয়। তাই সকলেই অপেক্ষা করছেন স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার জন্য।”
এর মধ্যে ভাগীরথী বা জলঙ্গিতে জল বাড়লেও তা নিয়ে ভয়ের কোনও কারণ নেই বলে জানিয়েছে জেলা সেচ দফতর। তবে কোথাও কোথাও ভাঙন হতে পারে আশঙ্কা রয়েছে। সেচ দফতর সে দিকে কড়া নজর রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে। জেলার সেচ দফতরের আধিকারিক সুপ্রতীম রায় বলেন, “সাধারণত ১০ জুন থেকে আমাদের এখানে বর্ষার মরসুম শুরু হয়। চলে অক্টোবর পর্যন্ত। এর মধ্যে প্রথম দুই-আড়াই মাসের সময়টিকে আমরা বলি ‘বেসিন রিজার্ভ’ সময়। অর্থাৎ, নদীর সংলগ্ন এলাকাগুলি যত অন্য জলাভূমি রয়েছে যেমন খাল বিল পুকুর সব তখন ভরতে থাকে। মাটি ভিজে যায়। এই পর্ব চলে অগস্ট পর্যন্ত। তারপরে যদি টানা বৃষ্টি হয়, তা হলেই নদী জলভার রাখতে পারে না। কিন্তু সেটা তো পরের কথা।” |