নদীবাঁধ ভেঙে ভাসল গ্রাম |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
দুর্যোগ পুরোপুরি না কাটলেও তিন দিন পরে রবিবার রোদ উঠল আকাশে। পশ্চিম মেদিনীপুরের বিভিন্ন জায়গা থেকে জল নামতেও শুরু করেছে। তবে কংসাবতী নদীর বাঁধ ভেঙে জলমগ্ন হয়েছে ডেবরা ব্লকের বেশ কয়েকটি গ্রাম। প্রায় পাঁচশো মানুষ জলবন্দি। কেশিয়াড়ি ও নয়াগ্রামের মধ্যে সংযোগকারী ভসরাঘাটের ফেয়ার ওয়েদার সেতুও জলের তলায় চলে গিয়েছে। |
|
জলমগ্ন কেশপুরের নলডিহি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বর। |
এ দিন সকাল থেকেই ডেবরায় কংসাবতীর বাঁধে ভাঙন শুরু হয়। দুপুরের পর রায়পুরের কাছে বাঁধ ভেঙে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যে আরও একশো মিটার দূরে অন্য একটি জায়গায় ভাঙন দেখা দেয়। বাঁধের আরও একটি অংশ দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। ভাঙনের ফলে সত্যপুর ও ষাঁড়-লোয়াদা পঞ্চায়েতের সত্যপুর, রায়পুর, রাধাকান্তপুর, ষাঁড়-লোয়াদা, বড়চিল্লি শালডহরি-সহ প্রায় ১০-১২টি গ্রাম বন্যার কবলে পড়েছে। এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন স্থানীয় বিধায়ক রাধাকান্ত মাইতি-সহ প্রশাসনিক কর্তারা। তৃণমূল বিধায়কের অভিযোগ, “গত ৩৪ বছরে বাঁধে এক ঝুড়িও মাটি ফেলেনি সিপিএম। তারই ফল ভুগতে হল মানুষকে।” ডেবরার বিডিও মালবিকা খাটুয়া বলেন, “জলবন্দি মানুষজনকে উদ্ধারের পাশাপাশি ত্রাণের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।” |
|
জলের তলায় মেদিনীপুর শহরের পালপাড়া। |
বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে ঘাটালে। মনসাতলা চাতালে জল বাড়ায় ঘাটাল-চন্দ্রকোনা সড়কপথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। জলের তোড়ে দাসপুরের কলমীজোড়ে কংসাবতী নদীর উপরে থাকা বাঁশের সেতু ভেঙে গিয়েছে। বিকেলের দিকে দাসপুরের নিজামপুরে কংসাবতীর বাঁধ ভেঙে জল ঢুকতে শুরু করে দাসপুর ২ ব্লকের একের পর এক গ্রামে। সব মিলিয়ে ৪টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়। ঘাটাল-পাঁশকুড়া সড়কও জলমগ্ন হয়ে পড়ে। বিপর্যস্ত হয় যান চলাচল। এই সড়কপথেই কলকাতা ও হলদিয়ার সঙ্গে যুক্ত ঘাটাল। ফলে, সার্বিক ভাবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ঘাটালের মহকুমাশাসক অংশুমান অধিকারী বলেন, “ঘাটাল শহর ও বিভিন্ন এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে, আমরা পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত রয়েছি।” কেশপুরের সরুই এলাকায় টুবাই নদীর বাঁধ ভেঙে জলমগ্ন হয়েছে মেদিনীপুর-চন্দ্রকোনা রাস্তার একাংশ। |
|
জলছবি... কুবাই নদীর বাঁধ ভেঙে জলমগ্ন মেদিনীপুর-চন্দ্রকোণা সড়ক। |
দু’দিনের ঝড়-বৃষ্টিতে বহু কাঁচা বাড়ি ভেঙেছে। সব মিলিয়ে জেলার ২৯টি ব্লকের মধ্যে ১০টি ব্লকের ৭৬টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৭০৫টি গ্রাম ক্ষতির মুখে পড়েছে। প্রশাসন জানিয়েছে, ১,৯৩৭টি বাড়ি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির সংখ্যা ১৩,১১৬টি। জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্ত বলেন, “প্রাথমিক ভাবে ত্রাণের জন্য ত্রিপল, শাড়ি ও ধুতি দেওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকারের কাছ থেকে আরও ত্রিপল চাওয়া হয়েছে।” ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে ১১,১০০টি ত্রিপল দিয়েছে জেলা প্রশাসন। দেওয়া হয়েছে দু’হাজার ধুতি, দু’হাজার শাড়ি, পাঁচ হাজার করে লুঙ্গি, ছোটদের জামা প্যাণ্ট ও দু’হাজার সালোয়ার-কামিজ। জেলা প্রশাসন রাজ্য সরকারের কাছ থেকে আরও ২০ হাজার ত্রিপল চেয়েছে। ব্লকে ব্লকে ত্রাণ সামগ্রী পাঠানো হলেও দ্রুত গতিতে তা বণ্টন করা যাচ্ছে না। কারণ, ‘পরিবর্তিত’ পরিস্থিতিতে সিপিএম পরিচালিত অনেক পঞ্চায়েতেই প্রধান অফিসে আসছেন না। সমস্যা সমাধানে ওই সব এলাকায় ব্লক অফিসে কন্ট্রোল রুম খোলার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন।
|
ছবি তুলেছেন সৌমেশ্বর মণ্ডল। |
|