বর্ষার দিকেই
তাকিয়ে বাজার
ময়মত বর্ষার আগমন ছাড়া লগ্নিকারীদের জন্য ভাল খবর তেমন আর নেই। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর সুব্বারাওয়ের ‘বন্দুকে’ যত ‘বুলেট’ ছিল তার অনেকটাই খরচ হয়ে গিয়েছে, কিন্তু তা সত্ত্বেও ‘আতঙ্কবাদী’ মুদ্রাস্ফীতি মোটেও ঘায়েল হয়নি। বরং আঘাত পৌঁছেছে শিল্পে। সুদ বেড়ে ওঠায় চাহিদা কমতে শুরু করেছে বাড়ি-গাড়ির। এর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব পড়বে অন্যান্য বহু শিল্পে। আশাপ্রদ নয় বিদেশবার্তাও। জ্বালানি তেলের দাম যে জায়গায় পৌঁছেছে তা ভারতের অর্থনৈতিক সঙ্কটকে ঘনীভূত করবে। দেশে তেল-গ্যাসের দাম বাড়ালে বিপদ। না-বাড়ালেও বিপদ। গ্রিসের অর্থনৈতিক সঙ্কট নিয়ে বিশেষ আশঙ্কায় আছে পশ্চিম দুনিয়া। সেখানে দুর্যোগ ঘনীভূত হলে তার প্রতিকূল প্রভাব ভারতীয় তটভূমিতে আছড়ে পড়তে বেশি সময় লাগবে না। এই সব কথা মাথায় রেখে শেয়ারে লগ্নির পথে হাঁটছেন না অনেকেই। ব্যাঙ্ক জমার উপর সুদ আকর্ষণীয় জায়গায় পৌঁছে যাওয়ায় কষ্টের টাকা নিরাপদে ব্যাঙ্কে রাখাকেই শ্রেয় মনে করছেন বেশির ভাগ সাধারণ মানুষ। বেশ কিছু দিন কোনও রকমে ১৮ হাজারের উপর ভেসে থাকলেও গত সপ্তাহে সেনসেক্স পিছলে নেমে এসেছে ১৭ হাজারের ঘরে। যা মোটেও শুভ লক্ষণ নয়। রিলায়ান্স ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার দর নেমে এসেছে গত দু’বছরের মধ্যে সব থেকে নিচু জায়গায়। বর্ষার ব্যাপারে পূর্বাভাস ভাল। আকাশ সদয় হলে কৃষি উৎপাদন ভাল হবে। ফলে কমতে পারে খাদ্যপণ্যের দাম। বিভিন্ন দিক থেকে প্রতিকূলতা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রীর দফতরের আশা, ২০১১-’১২ সালে জাতীয় উৎপাদন ৮.৫% হারে বৃদ্ধি পাবে।
চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে বিভিন্ন সংস্থার আর্থিক ফলাফল খুব খারাপ হবে না বলে ইঙ্গিত মিলেছে অগ্রিম কর জমার পরিসংখ্যান থেকে। এই সময়ে কোম্পানি কর জমা আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে প্রায় ১৫%। যে সব সংস্থা বেশি কর জমা করেছে, তাদের মধ্যে আছে স্টেট ব্যাঙ্ক, রিলায়্যান্স, আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক, এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক, বাজাজ অটো, এল অ্যান্ড টি, হিন্দালকো, টিসিএস -এর মতো সংস্থা। এপ্রিল এবং মে মাসে বেশ ভাল রকম বেড়েছে পরোক্ষ কর সংগ্রহও। এই দুই মাসে উৎপাদন শুল্ক আদায় যখন বেড়েছে ৩৮%, তখন আমদানি শুল্ক সংগ্রহও বেড়েছে প্রায় সমানে সমানে, ৩৭%। এই সব পরিসংখ্যান ইঙ্গিত দেয়, শিল্পে মন্থরতা এখনও তেমন প্রকট হয়ে ওঠেনি। তবে মনে রাখতে হবে, সম্প্রতি সুদ আবারও বেড়েছে এবং আরও বাড়তে পারে ভবিষ্যতেও। এই কথা মাথায় রেখে শঙ্কিত শিল্পমহল, শঙ্কিত শেয়ার বাজার।
ঋণে সুদ বাড়ার পাশাপাশি সুদ বাড়ছে ব্যাঙ্ক আমানতের উপরও। গত সপ্তাহে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আরও এক দফা রেপো এবং রিভার্স রেপো রেট বৃদ্ধির কথা ঘোষণার পর জমার উপর প্রথম সুদ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইডিবিআই ব্যাঙ্ক। এই পথে আরও কিছু ব্যাঙ্ক হাঁটতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। ২০০৮-এর অক্টোবরে স্টেট ব্যাঙ্ক ১০০০ দিন মেয়াদে সুদ দিয়েছে ১০.৫০%। যে ভাবে সব কিছু এগোচ্ছে তাতে তিন বছরে আমরা কি একই জায়গায় পৌঁছতে চলেছি?
ডাকঘর সেভিংস অ্যাকাউন্টের সুদ এত দিন ছিল করমুক্ত। এ বার থেকে এক নামে খোলা অ্যাকাউন্টে ৩,৫০০ টাকা পর্যন্ত এবং যুগ্ম নামের অ্যাকাউন্টে বছরে ৭,০০০ টাকা পর্যন্ত সুদ থাকবে করমুক্ত। এই অ্যাকাউন্টে সুদ ৩.৫%।
বাজারে সুদের হারে উত্থান-পতন থাকলেও, ডাকঘর কিন্তু এই ব্যাপারে একদম ‘জড়ভরত’। বহু দিন কোনও পরিবর্তন হয়নি সুদের হারে। ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পগুলি নিয়ে পর্যালোচনার জন্য গত বছরে যে কমিটি তৈরি হয়েছিল, তারা সম্প্রতি তাদের সুপারিশ সরকারের কাছে পেশ করেছে। উঁচু সুদের জমানায় কমিটির প্রস্তাব অবশ্যই লগ্নিকারীদের মনঃপূত হবে না। তবে উপায়ও নেই। ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পগুলি সরকারের কাছে এক বড় লোকসানের জায়গা। লোকসানের অঙ্ক ছাড়িয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। বিভিন্ন প্রকল্পে সুদ বাড়ালে জমা বেড়ে উঠতে পারে অতি দ্রুত গতিতে। এর ফলে বাড়বে লোকসানও। বড় চাপ আসবে বাজেটের উপর। এই কথা মাথায় রেখে কমিটি যা যা সুপারিশ করেছে তা মোটামুটি এই রকম।
• ডাকঘর সেভিংস অ্যাকাউন্টে সুদের হার বাড়িয়ে করা হোক ৪%।
• পিপিএফ অ্যাকাউন্টে সুদ ৮% থেকে বাড়িয়ে করা হোক ৮.২%। জমার ঊর্ধ্বসীমাও ৭০ হাজার থেকে বাড়িয়ে করা হোক ১ লক্ষ টাকা।
• দশ বছর মেয়াদি জাতীয় সঞ্চয়পত্র চালু হোক এবং সুদ হোক ৮.৪%।
• পাঁচ বছর মেয়াদি সিনিয়র সিটিজেন সেভিং প্রকল্পে সুদের হার ৯% থেকে কমিয়ে করা হোক ৮.৭%।
• রেকারিং ডিপোজিটে সুদের হার বাড়িয়ে করা হোক ৮%।
• জাতীয় সঞ্চয়পত্রের সুদ যেন ৮০ সি ধারায় কর ছাড়ের যোগ্য না থাকে।
• উৎসমূলে কর কাটা হোক বিভিন্ন ডাকঘর সঞ্চয় প্রকল্পে।
• ছয় বছর মেয়াদি মাসিক আয় প্রকল্পের মেয়াদ কমিয়ে করা হোক পাঁচ বছর। তুলে দেওয়া হোক মেয়াদ শেষে ৫% বোনাস।
• বন্ধ করে দেওয়া হোক কিষাণ বিকাশ পত্র।
বেশির ভাগ সুপারিশই মনে ধরবে না বিনিয়োগকারীদের। এখন দেখার, সরকার এই সব সুপারিশের কতটা গ্রহণ করে।
First Page Business Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.