|
|
|
|
রেললাইনের কাছে নামল ধস, আতঙ্ক আসানসোলে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • আসানসোল |
রেল লাইনের অদূরে বড় ধস নামল আসানসোলে। রবিবার সকালে আসানসোল ডিভিশনের কালিপাহাড়িতে পূর্ব রেলের গ্র্যান্ড কর্ড লাইনের মাত্র ১৫ মিটার দূরে এই ধস নামে। ফলে, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই লাইন দিয়ে প্রায় ঘণ্টাখানেক ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। পরে ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন যাতায়াত করেছে। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সমীর গোস্বামী বলেন, “মাটি ফেলে ধস ভরাট করার কাজ চলছে। কেন এমন ধস নেমেছে, তদন্ত করে দেখা হবে।”
এই লাইন দিয়ে রাজধানী, শতাব্দী, পূর্বা এক্সপ্রেসের মতো গুরুত্বপূর্ণ ট্রেন-সহ লোকাল ও প্যাসেঞ্জার মিলিয়ে দিনে মোট ১০৭টি ট্রেন যাতায়াত করে। প্রতিদিন প্রায় ২০ লক্ষ যাত্রী এই রেলপথ দিয়ে যান। এ দিন সকাল ৭টা নাগাদ কালিপাহাড়ির সাহেবকুঠি এলাকার বাসিন্দারা বিকট আওয়াজ পান। দেখা যায়, ‘ডাউন স্লো’ লাইনের কাছে প্রায় ৩০ মিটার ব্যাসের, প্রায় ২০ ফুট গভীর গর্ত তৈরি হয়েছে। ঘটনাস্থলে পৌঁছে আসানসোলের ডিআরএম জগদানন্দ ঝা বলেন, “লাইন থেকে মাত্র ১৫ মিটার দূরে ধস নেমেছে। বৃষ্টির জল ওই গর্তে পড়ে মাটির নীচে চলে যাচ্ছে। লাইনের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তায় আছি।” |
|
আসানসোলের কালিপাহাড়ি অঞ্চলে বসে গিয়েছে জমি। রবিবারের নিজস্ব চিত্র। |
রেলের তরফে ইসিএলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সংস্থার দুই অফিসার সুজিত সরকার ও নারায়ণ ঝা ঘটনাস্থলে পৌঁছন। তাঁরা জানান, খনি জাতীয়করণের আগে এই এলাকায় একটি খোলামুখ খনি ছিল। ১৯৫০ সালে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু ভাল ভাবে তা ভরাট করা হয়নি। তাই কয়েক দিনের বৃষ্টিতে মাটি আলগা হয়ে ধস নেমেছে। তবে রেল লাইনের তলার অংশ নিরাপদ বলে দাবি করেন ওই দুই আধিকারিক। ডিআরএম অবশ্য ধসের কারণ ও লাইনের নিরাপত্তার ব্যাপারে ইসিএল কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত ব্যাখ্যা চান। ইসিএলের তরফে তা দেওয়ার পরে ঘণ্টায় ২০ কিমি বেগে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। বোল্ডার ও মাটি দিয়ে ধস ভরাটের কাজ শুরু করা হয়েছে।
ট্রেন চলাচল শুরু হলেও ধসের ব্যাপারে ইসিএলের ব্যাখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ডিআরএম। তিনি জানান, লাইন থেকে ৪৫ মিটার পর্যন্ত এলাকা রেলের। তাই খনির জন্য লাইন থেকে মাত্র ১৫ মিটার দূরে কী ভাবে ধস নামল, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি। ইসিএলের অফিসার নারায়ণবাবু অবশ্য বলেন, “রেল লাইন থেকে ৪৫ মিটার দূরে খননের আইনটি তৈরি হয় ১৯৫৭ সালে। তার আগেই এখানে খনন হয়েছে।” ডিআরএম জানান, লাইনের নিরাপত্তার বিষয়ে ইসিএলের লিখিত আশ্বাস পাওয়ার পরেই সতর্কতার সঙ্গে ট্রেন চালানো হচ্ছে।
১৯৯৭ সালেই ‘ডিরেক্টর জেনারেল অফ মাইনস সেফটি’র (ডিজিএমএস) তরফে অবৈধ খাদানের দাপটে এই লাইনে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়েছিল। তাদের রিপোর্টে ডিজিএমএস জানিয়েছিল, কার্যত ‘শূন্যে ঝুলছে’ এই রেল লাইন। অবৈধ খননকারীরা অন্তত ৩৪টি জায়গায় লাইনের নীচের মাটি এফোঁড়-ওফোঁড় করে দিয়েছে। তার পরে কেটেছে ১৪ বছর। পরিস্থিতি যে আরও খারাপ হয়েছে, এ দিনের ঘটনাই তা দেখিয়ে দিয়েছে। বস্তুত, এই ধসের জন্যও অবৈধ খননই দায়ী বলে দাবি করেছেন আসানসোলের মেয়র তথা আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, কয়লা চোরেরা যেখানে সেখানে গর্ত করে কয়লা কাটছে। ইসিএল কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপ করেন না। এ দিন ঘটনাস্থলে আসা ইসিএলের দুই আধিকারিক অবৈধ খনন নিয়ে কোনও মন্তব্য না করলেও বারবার দাবি করেন, রেল লাইন সম্পূর্ণ নিরাপদ।
|
গ্র্যান্ড কর্ড যখন বিপন্ন |
মার্চ, ২০১১: আসানসোলের কোঁয়ারডিহি এলাকায় রেল লাইন থেকে ১০০ মিটার দূরে ধস। |
অগস্ট, ২০১০: আসানসোলের ডামরার কাছে লাইন থেকে ১০০ মিটার দূরে ধস। |
জানুয়ারি, ২০০৯: কালিপাহাড়ির ছাতাপাথর সেতুর কাছে লাইন থেকে ৭০ মিটার দূরে জাতীয় সড়কে ধস। |
নভেম্বর, ২০০৮: কালিপাহাড়ি স্টেশন থেকে ১০০ মিটার দূরে মাটিতে ফাটল। |
জানুয়ারি, ২০০৮: রানিগঞ্জের নিমচায় রেল লাইনের আধ কিমি দূরে ধস। |
|
|
|
|
|
|