|
|
|
|
|
ভগবান নে মুঝে ক্যাঁইচি দিয়া
রামকে ধনুষ, কৃষ্ণকে চক্র দিয়েছেন ভগবান আর তাঁকে দিয়েছেন কাঁচি। আসমুদ্রহিমাচলের
যুবক-যুবতী তাঁর হাতের ছোঁয়া-প্রত্যাশী, তাঁরই ‘হেয়ার-য়োগা’ বদলে দিয়েছে রূপের
আঙিনা। হেয়ার গুরু জাভেদ হাবিব-এর সঙ্গে কথা বললেন কস্তুরী মুখোপাধ্যায় ভারভাদা |
|
|
আপাদমস্তক কালো পোশাকে মোড়া মাথা ভর্তি সাদা চুল সুন্দর করে কাটা, ছিপছিপে ব্যক্তিত্বের এক তরতাজা যুবক দু-হাত দূরত্বে আমার সামনে বসে যখন হাত নাড়িয়ে কথা বলছিলেন তখন প্রায় ত্রিশ সেকেন্ড পর বিশ্বাস হয়েছিল যে আমার সামনে যিনি বসে আছেন তিনি সত্যিই জাভেদ হাবিব। সত্যিই কি এঁর হাতের একটু ছোঁয়া পাওয়ার জন্য আসমুদ্রহিমাচলের যুবক-যুবতী অপেক্ষা করে আছেন? কে বলতে পারে, হাবিব মহাশয়ের হাতের পরশে ২৫ নং হরিপদ দত্ত লেন এর স্বপন শাহিদ কপূরের নরম চেয়ারটি ছিনিয়ে নেবে না?
কয়েক সেকেন্ডে ঘোর কাটার পর জানতে পারলাম জাভেদ হাবিবের ঠাকুরদা নেহরু থেকে আরম্ভ করে ভারতের শেষ ভাইসরয় লর্ড মাউন্ট ব্যাটেনের চুলের রূপকার। মাউন্ট ব্যাটেন এক জায়গায় বলেছিলেন, কুইন এলিজাবেথ......কাছেই আমি এক মাত্র মাথা নত করি, জাভেদ হাবিবের বাবা নবিব আহমেদ ইন্দিরা গাঁধীর চুলের অভূতপূর্ব চুলের স্টাইলটির জন্ম দিয়েছিলেন, আর মুম্বইয়ের বহু সেলেবের মাথার ভার জাভেদের হাতে।
লন্ডনে পড়াশোনা, প্রফেশনাল কোর্স-এর পাঠ চুকিয়ে মুম্বইয়ে ফিরে আসেন জাভেদ হাবিব। কর্মজীবন শুরুর প্রথম দিনে যে গুরুত্বপূর্ণ ক্লায়েন্ট ছিল তার বয়স আট। চুল কাটতে আরম্ভ করতেই সেই মেয়েটি তারস্বরে কাঁদতে আরম্ভ করে। জাভেদ প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যান। তার সঙ্গে নার্ভাস হয়ে পড়েন। ভাবতে থাকেন প্রফেশনাল কেরিয়ারের শুরুতেই এ কী বিপত্তি, হেয়ারকাটটির নাম দেন ‘ক্রায়িং হেয়ারকাট’।
ক্রায়িং হেয়ারকাট দিয়ে শুরু করা জীবনের ঘোড়া কিন্তু থেমে থাকেনি। দৌড়টি ভালই চলেছে, ক্রমশ হেয়ারকাট পরিণত হয়েছে ‘হেয়ার ডিজাইনিং’-এ।
তিনি মনে করেন আগে চুলকে যত্ন করতে জানতে হবে তার পর চুলের স্টাইলের কথা ভাবা যাবে। জাভেদ নতুন পন্থা অবলম্বন করেছেন চুলের আয়ু বৃদ্ধির জন্য। নাম দিয়েছেন ‘হেয়ার-য়োগা’। তার কতগুলি বিশেষ ধাপ আছে।
¨ যথেষ্ট পরিমাণ দুধ, জল ও ফলের রস খেতে হবে
¨ দিনের যে কোনও সময়ে খাদ্য তালিকায় একটি ফল রাখুন, ঋতু অনুযায়ী।
¨ একটু সকালে উঠুন ও ভোরবেলাটিকে উপভোগ করুন, দিনের শুরুটিকে হাসি দিয়ে আরম্ভ করুন, দেখবেন আপনার শরীর ও মন উভয়ই ভাল আছে, ‘ইউ স্মাইল ইয়োর বডি স্মাইলস অ্যান্ড ইয়োর হেয়ার উইল স্মাইল’
¨ জাঙ্ক ফুড বাদ দিন
¨ সব সময় পজিটিভ ভাবনা-চিন্তা করুন
¨ কমন সেন্স বজায় রেখে কথা বলুন |
|
‘স্বামী’ জাভেদ হাবিব চুল বাঁচাতে কিন্তু এই থিয়োরিতেই বিশ্বাস করেন।
জাভেদ হাবিবের মতে অন্তত কুড়ি বছর আগে ট্রাডিশনাল হেয়ারকাট-এর যুগ শেষ হয়ে গিয়েছে। কেউ এসে বললেন আমাকে একটু লেয়ারস বা স্টেপ করে দিন এ রকমটি আর হয় না। আপনার বয়স আপনার প্রফেশন অর্থাৎ কী ধরনের চাকরি করেন তার ওপর নির্ভর করে চুলের কাট। স্কুল টিচার, অফিসের কেরানি, কর্পোরেট কর্মরতা বা মিডিয়ায় কর্মরতা মহিলার হেয়ার স্টাইলটি নিশ্চয়ই এক রকম হবে না। প্রতি জনের লুক ভিন্ন, প্রতিটি ব্যক্তিত্ব ভিন্ন মানে বহন করে, সুতরাং সকলের ক্ষেত্রে লেয়ারস মানাবে এ রকম গ্যারান্টি নেই। এ ছাড়াও আরও কতগুলি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে হেয়ারকাট। যেমন -
¨ গায়ের রং
¨ উচ্চতা
¨ চেহারার ধরন
¨ চুলের কোয়ালিটি বা টেক্সচার ইত্যাদি
রং ফর্সা, হাই চিকবোন, ছিপছিপে চেহারার সঙ্গে চাপা রঙের মেয়ে, হাই চিকবোন, কম উচ্চতার মেয়ের চুলের স্টাইল একেবারেই এক হবে না। দক্ষিণি মেয়ের চুল, চোখ, গায়ের রঙের সঙ্গে নর্থ ইস্ট-এর মেয়েদের কিছুই মেলে না। সুতরাং হেয়ার ডিজাইনিং এর সময় এই কথাগুলি মাথায় রাখতে হবে। যাদের কোঁকড়ানো চুল তাদেরকে দেখলেই একটি ওয়াইল্ড লুক সামনে ভাসে, এই বন্য লুককে পাল্টাতে চুলের কাট হবে সম্পূর্ণ অন্য ধরনের। আবার যাদের চুল একদম স্ট্রেট, তাদের দেখলেই মনে হয় খুব গম্ভীর ও শান্ত। সুতরাং তাদের ক্ষেত্রে চুলে বাউন্সি লুক আনলে ব্যক্তিত্বের একটি অন্য ধরনের প্রকাশ ঘটে, মনে হয় মেয়েটির সঙ্গে কথা বলা যেতে পারে। আঠারো-কুড়ির মেয়েটি কলেজে ঢুকে বয়ফ্রেন্ড খুঁজছে তার জীবনধারার সঙ্গে চল্লিশে যার চুল ঝরতে শুরু করেছে তার দৃষ্টিভঙ্গি এক হবে না। চুলের স্টাইল হবে অন্য রকম, তবে বয়স যত বাড়বে চুলও সেই আন্দাজে ছোট হতে থাকবে। এই নীতিটি অনুসরণ করাই ভালো।
যুগ যুগ ধরে সিনেমা চুলের ‘কাট’কে নিয়ন্ত্রণ করেছে। একটা সময় ছিল দেবানন্দ-গীতাবালির চুলের স্টাইল সবাই চোখ বন্ধ করে অনুসরণ করত। এখন দিন পাল্টেছে, এখন সাধারণ লোক আগের তুলনায় অনেক বেশি বুঝতে শিখেছে। চলতি ফ্যাশনকে নিজস্ব স্টাইল করে নেয় না এবং তার সঙ্গে সময়ও অনেক কম। সুতরাং এতগুলি জিনিস মাথায় রেখে চুলের নতুন ডিজাইন সৃষ্টি করতে হবে।
এ ছাড়া ভারতে মোটামুটি ভাবে পাঁচশো থেকে আটশো সেলিব্রেটি আছেন, লোকসংখ্যা ১০০ কোটি। সুতরাং সাধারণ জনগণের স্টাইলটি হবে অন্য রকম। ‘সাধারণের জন্য আমি কাজ করতে চাই একদম তাদের কাছে, মনের ভেতর পৌঁছতে চাই’ বললেন জাভেদ। আর বললেন‘ভগবান রামকো ধনুষ দিয়া, কৃষণ কো চক্র দিয়া অর মুঝে ক্যাঁইচি দিয়া’। |
|
|
|
|
|