কানের সাইডে শুরু হয়ে...
শুনেছি সব মেয়ের মায়েরাই ক্লিন শেভেন ছেলে পছন্দ করেন। যাকে বলে ফিট-ফাট কর্পোরেট একটা লুক। গালের কাছটায় সর্ব ক্ষণ সবুজের আভা, চির ফ্রেশ আর কী। কিন্তু কী জানেন, একটা বড় সময় ধরে অনেক মা-শাশুড়িই, হিরের টুকরো ছেলে পেলেও, পাননি ফাঁকা গাল টিপে আশীর্বাদ করার মোমেন্ট।
কারণ কয়েক প্রজন্ম ধরে অনেক পুরুষই এক্সপেরিমেন্ট চালিয়ে গিয়েছেন নিজের দাড়ি ও গোঁফ নিয়ে। আর সেই এক্সপেরিমেন্টের একটা ব্লকবাস্টার পর্ব হল সাইডবার্ন। ডিরোজিয়ো ভাবুন, এলভিস প্রেসলি ভাবুন, আব্রাহাম লিনকন, বাংলার ডাকাত সর্দার বা বেশির ভাগ সিনেমা-সিরিয়ালে কোনও ব্রিটিশ জেনারেল। কানের পাশে যেখানে চুল এসে শেষ হয়, সেখান থেকে যাত্রা শুরু করে সোজা বা ধনুকের শেপের যে চুলের গোছা, মুশকো গোঁফের ঠিক কাছে বা কোলে গিয়ে থামে তাকেই বলে সাইডবার্ন। চিবুক বা থুতনিতে সে ক্ষেত্রে কিছুতেই দাড়ি রাখা চলে না। মানে এ কান থেকে শুরু করে সাইডবার্ন যদি চিবুকের দাড়ি ছুঁয়ে অন্য কান অবধি পৌঁছোয়, তা হলে সেটা আর সাইডবার্ন থাকে না। অবশ্য সাইডবার্ন রাখতে হলে গোঁফ যে মাস্ট, এমনটাও নয়।
আমেরিকার সিভিল ওয়ার-এর সময়কার এক জেনারেল, অ্যামব্রোজ এভারেট বার্নসাইড বেশ যত্ন করে এই ধরনের চুল রাখতে শুরু করেন। তার পর এক দিন বার্নসাইড উল্টে হয়ে গেল সাইডবার্ন। ওঁর অনেক আগেই, প্রায় সপ্তদশ শতাব্দী থেকে, মেক্সিকো বা কলম্বিয়ায় ছেলেরা এমন চুল রাখত, কানের তলায়।
তাকে বলা হত ‘ব্যালকারোতা’। ভাবা হত যার যেমন বলিষ্ঠ ব্যালকারোতা, তার পৌরুষের তেমন রোয়াব। সেকালের মেয়েদের বক্তব্য জানা নেই। ব্যালকারোতা রাখতে না দিলে যে সব পুরুষ মানুষ সরকারের বিরুদ্ধে জেহাদে নেমে পড়েছিলেন, তাঁদের কাছে এর কী মাহাত্ম্য, বেশ বোঝাই যায়।
বিংশ শতাব্দীর একেবারে শুরুর দিক থেকেই চল উঠেছিল ঝাঁ-চকচকে গালের। সব কিছুই কেমন যেন ভিক্টোরীয় ছোঁয়ায় তুলসি পাতা টাইপ শুদ্ধ। এ পার টু ও পার নো সাইডবার্নের দেখা। সেনাবাহিনীর লোকেরাও যে একটু আলেকজান্ডার বা নেপোলিয়ানের মতো সাইডবার্ন রাখবে, তারও জো নেই। দাড়ি গোঁফ থাকলে তো গ্যাস মাস্ক পড়া যাবে না, ফাঁক দিয়ে যদি বিষঘ্রাণ ঢোকে? কিন্তু সে সবকে জালে জড়িয়ে সাইডবার্নের রমরমা আবার ফিরিয়ে আনলেন এলভিস, জেম্স ডিন (রেবেল উইদাউট আ কজ ছবিতে), বিটল্স আর হিপি’রা।
আমরা চিরকালই অমন সাইডবার্ন রাখা মানুষদের সঙ্গে তাগড়াই ঘোড়া বা হার্লে ডেভিডসনকে বাহন হিসেবে দেখেছি। এলভিস, বা ডিন যা করলেন, তা হল এই ‘ম্যাচো’ উপস্থিতির সঙ্গে জুড়ে দিলেন মারকাটারি স্টাইল আর রোয়াব। সাইডবার্নকে তখন আর নিছকই চুল বা দাড়ির এক্সটেনশন হিসেবে দেখা হল না, ওটি হয়ে উঠল ফ্যাশনের অঙ্গ। পরনে জিন্স, চোখে শেড্স, গালে সাইডবার্ন আর মনে তখন বিদ্রোহ। চুল যত এলোমেলো, মুখ যত ভরে থাকবে চুলে, প্যান্ট যত ক্ষত’র দাগ নিয়ে ঘুরবে, ততই সে প্রকৃত পুরুষ MAN.
আমাদের এখানে তো কেউ যত্ন করে সাইডবার্ন রাখলই না। মাঝেমধ্যে পুরনো ফটো-অ্যালবামে বাবা-কাকাদের কিছুটা সাইডবার্ন রাখা সিপিয়া ছবি বেরিয়ে পড়ে অবশ্য। আমাদের সাইডবার্ন চর্চা ওই অবধিই। দেখি আর ভাবি, ওদের তরতাজা বয়সটা কত আলাদা ছিল না? সাইডবার্নের হুবহু একই হাল।
First Page Utsav Next Item



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.