|
|
|
|
|
অত উফ্-আফ্-বাবারে করবেন না...
আমরা সারা ক্ষণ গরম গরম করে চেঁচাই, কিন্তু এক বার ভাবুন, এই গরম না থাকলে
ল্যাংড়া, দশেরি, লিচু, শিমলা আসত? হ্যাপি গরম। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় |
|
|
ঈশ্বর লোকটা দারুণ, জানেন! এত ছোটখাটো ডিটেলের দিকে নজর রাখেন সর্ব ক্ষণ, অবাক হতে হয়। সবার খুঁটিনাটি হাতের তালুতে। কার কোন প্ল্যান ভেস্তে দিতে হবে, কাকে অফিসে লেট করিয়ে দিতে হবে, কার ঘাড়ের যন্ত্রণাটা একটু বাড়িয়ে দিতে হবে, কাকে হোঁচট খাইয়ে দিতে হবে সবার সঙ্গে ওঠাবসা একেবারে ওয়ান টু ওয়ান।
যেমন ধরুন প্রতি বছর বছরের প্রথমে প্ল্যান করি যে গরমের সময় এমন একটা জায়গায় আউটডোর করব যাতে এই অসহ যন্ত্রণা থেকে একটু মুক্তি পাওয়া যায়। আপাতভাবে মনে হবে একটা নিষ্পাপ চাহিদা। কোনও অন্যায় নেই। কিন্তু ওই যে মনের ফুরফুরে ভাব, সেটা তো ঈশ্বর অহেতুক সহ্য করবেন না। প্রথমটা একটু ছাড় দেবেন, তার পর অ্যাটাক করবেন। এ বছর মে মাসে আমার আমেরিকায় শুটিং করার কথা ছিল। সেই মতো সব ব্যবস্থাও হয়ে গেল। কিন্তু শেষ সময়ে পিছিয়ে গেল। ভেবেছিলাম আমেরিকার অসাধারণ আবহাওয়ায় এই দুটো মাস কাটিয়ে দেব। ওখানকার সামার তো দারুণ আরামদায়ক। কিন্তু বিধি স্লাইটলি বেশিই বাম। আমি মে মাসটা শুটিং করে এলাম, লাটুর-এ। লাটুর মানে সেই ভয়ঙ্কর ভূমিকম্পের জায়গাটা। মহারাষ্ট্রে। প্রচণ্ড গরম বললে একটু কমই বলা হয়। প্রায় ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস-এ সারা দিন আউটডোর করলাম।
অতএব আমাদের স্ক্রিপ্ট যতই আগে থেকে রেডি থাকুক, ঈশ্বরের স্ক্রিপ্টে যে কখন কোথায় টুইস্ট থাকবে, জানা নেই। তেমন করে দেখতে গেলে খুব কি কিছু খারাপ হল? একেবারেই না। কেবল গরম পোহাতে হল। একটা সময় আমি মেক-আপ ভ্যানের এয়ার কন্ডিশনারটা বন্ধ করে দিতাম। বাইরে অসহ গরম আর ভেতরে ঠান্ডা, এতে শরীরের আরও ক্ষতি হয়। পকেটে পেঁয়াজ রাখতে গয়, হরবখত জল আমাদেরও খেতে হয়। যাঁরা এই গরমে বাইরে কাজ করেন তাঁরা জানেন, কষ্ট কত দূর। আর তার ওপর রোদের সঙ্গে আরও কিছু কিছু জিনিস আমাদের শুটিং-এ যোগ হয়। আলোর তাপ, রিফ্লেক্টরের আঁচ, হয়তো বা লেদার জ্যাকেটের হাঁসফাঁস। তাই তাপমাত্রাটা আমাদের ক্ষেত্রে আরও বেড়ে যায়। |
|
ছবি: রানা বসু
স্টাইলিং: অনমিত্র গঙ্গোপাধ্যায় |
কিন্তু কী আর করা! গরম যখন মানতে হবে, কাজ যখন করতে হবে, হবেই। তাই আমি আমার মনের সঙ্গে একটা ডিল করে নিয়েছি, যে, গরম নিয়ে বেশি ভাবব না। নিজেকে বুঝিয়ে নিয়েছি, গরম আসলে একটা মেন্টাল স্টেট। ওটাকে পেরিয়ে যেতে পারলেই, সব মোটামুটি ম্যানেজ করা যাবে। যখন খুব গরম পড়ে, আমি গরমটাকে উপভোগ করার চেষ্টা করি, না হলে গরমই আর আমাকে টিকতে দেবে না। একটা সময় গরমকে তো মনে মনে চ্যালেঞ্জ করি, ‘দেখি কে কাকে জিতে নেয়, তুমি না আমি!!!’ আমার একটাই মত অত পাত্তা দেবেন না তো গরমকে। নিজের মতো এসেছে, নিজের মতো চলে যাবে। যত উফ্-আফ্-বাবারে করবেন, তত পেয়ে বসবে। এমন কী রেলা গরমের, যে আমাদের ঘায়েল করে ফেলবে? আসলে কলকাতার গরমে একটাই বড্ড কষ্ট। ঘাম হয় প্রচণ্ড। আর ঘাম হয় বলেই শরীরের সঙ্গে সঙ্গে মনেও ক্লান্ত হয়ে পড়ে। আর সবাই আমাদের ‘লেজি’ বলে দোষ দেয়। কী অন্যায় না, বলুন! তাই বলছি, গরমটাকে একটু সাইড করে দিন, ফুরফুরে থাকা যাবে।
আর দেখুন, গরম আসে বলেই না হিমসাগর, ল্যাংড়া, দশেরি, গোলাপখাস, চৌসার রমরমা। না হলে বিদেশের আমের মতো হত না? শাঁসওয়ালা আধ-মিষ্টি পেঁপে খাচ্ছি যেন। আঙুল গলে, কব্জি বেয়ে কনুই পর্যন্ত আমের রস গড়াবে, আঁটি চুষে ঠোঁটের কোণ একটু ছড়ে মতো যাবে তবে না আম আর গরম। এ দিকে দেখুন, দিন কুড়ির মেহমান লিচু, কিন্তু সে-ও গরম ছাড়া পাওয়া মুশকিল। কিংবা তরমুজ। ঈশ্বরকে যতই খারাপ বলি, কিছু প্রাইজ কিন্তু গরমেও দিয়েছেন আমাদের। আর আম-লিচুকে যা-ই বলুন, সান্ত্বনা পুরস্কার বলা যাবে না।
আর এটাও তো সত্যি, গরম না পড়লে কেউ বউকে নিয়ে শিমলে-দার্জিলিং যেতেন? কিছু অ্যাডভেঞ্চার-প্রিয় লোক আছে যারা শীত কালে শীতের দেশে যায়। আমরা বলে ট্রেডমার্ক বাঙালি। গরমে দার্জিলিং গিয়ে মাঙ্কি ক্যাপ পরে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখি, কমফর্টার জড়িয়ে ম্যালে ঘুরে ফোটোগ্রাফারকে দিয়ে ছবি তুলিয়ে বাঁধিয়ে রাখি এমন রসবোধ গরম না পড়লে পাওয়া যেত কি?
গরম না পড়লে যে আম-লিচু, শীতকাতুরে বাঙালি জাতি, শত বারণ সত্ত্বেও রাস্তায় ঠান্ডা রঙিন শরবত খাওয়ার ধুম,আর বর্ষার জন্য আকুল অপেক্ষা সব হারিয়ে যেত না? কী যে বলেন!
|
|
|
|
|
|